দেশের স্বাধীনতার জন্য নীরবে সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন এই মহিয়সীরা, চিনে নিন সেই নেপথ্য নারীদের

এই মহিলারা সাম্রাজ্যবাদীদের অত্যাচারী শাসনের অবসানের জন্য লড়াই করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছিলেন। কেউ কেউ তাদের কবিতার মাধ্যমে 'স্বদেশী' আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন আবার কেউ কেউ সামাজিক সংস্কারকে জোরদার করার জন্য পরাধীন ভারতের বুকেই নিজেদের ছোট ছোট সমিতি গড়ে তুলেছিলেন। 

সেই উত্তাল সময়ে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয়দের শান্তিপূর্ণভাবে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করতে উৎসাহিত করছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ব্রিটিশদের পিছু হটতে বাধ্য করার চেষ্টা করছিলেন। সেই রক্তঝরা সংগ্রামের ছবি আমাদের পরিচিত, কিন্তু আমরা কজন সেই মানুষগুলোর কথা জানি, যারা নীরবে নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন। সেই মহিয়সী মহিলাদের ত্যাগ দেশের স্বাধীনতাকে গতি দিয়েছিল। 

এই মহিলারা সাম্রাজ্যবাদীদের অত্যাচারী শাসনের অবসানের জন্য লড়াই করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছিলেন। কেউ কেউ তাদের কবিতার মাধ্যমে 'স্বদেশী' আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন আবার কেউ কেউ সামাজিক সংস্কারকে জোরদার করার জন্য পরাধীন ভারতের বুকেই নিজেদের ছোট ছোট সমিতি গড়ে তুলেছিলেন। 

Latest Videos

এই বছর আমরা ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছি, এটাই প্রকৃত সময় প্রায় অচেনা সেই মহিয়সীদের স্মরণ করার। তাঁদের অসাধারণ সাহস এবং দেশে পরিবর্তন আনার কঠোর প্রতিশ্রুতির সামনে শ্রদ্ধায় নত হই। 

১. সাবিত্রীবাই ফুলে

সাবিত্রীবাই ফুলে ভারতে মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছিলেন, বারবার তাদের নিজেদেরকে শিক্ষিত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, বিশেষ করে যারা তথাকথিত অনগ্রসর জাতি থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষাই সেই অস্ত্র যা নারীকে সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্ত করবে। তিনি ভারতের প্রথম মহিলা শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তার স্বামী জ্যোতিরাও ফুলে (জ্যোতিবা) এর সাথে তিনি পুনেতে মেয়েদের পড়াতে শুরু করেছিলেন এবং সেই সময়ে যারা নারী শিক্ষার বিরোধিতা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

২. মহাদেবী ভার্মা

১৯০৭ সালে এলাহাবাদে একটি প্রগতিশীল হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, মহাদেবী ভার্মা। তিনি একাধারে ছিলেন একজন হিন্দি কবি। এরই সঙ্গে তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং শিক্ষাবিদ। তিনি গান্ধীবাদী আদর্শ গ্রহণ করেছিলেন এবং নিজে ইংরেজিতে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলেন। খাদি তৈরিতে কাজ করেছিলেন। তিনি এলাহাবাদের মহিলাদের জন্য একটি আবাসিক কলেজ প্রয়াগ মহিলা বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ এবং তারপর উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে মহাদেবী ভার্মা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেননি। তাকে প্রায়ই ১৬ শতকের মীরাবাইয়ের সাথে তুলনা করা হয়।

৩. ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগাল

১৯১৪ সালে জন্মগ্রহণকারী ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সেহগাল মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৩৮ সালে এমবিবিএস করেন। এর পরে, তিনি এবং তার পরিবার স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন।  তিনি নেতাজির ভারতীয় ন্যাশনাল আর্মির প্রথম সর্ব-মহিলা রেজিমেন্ট তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন এবং কমান্ডও করেছিলেন। তিনি যুদ্ধবন্দী এবং যুদ্ধের সময় আহত সৈন্যদের চিকিৎসায়ও সাহায্য করেছিলেন।

৪. রানি লক্ষ্মীবাই

উত্তর ভারতের মারাঠার ঝাঁসির রানী, রানী লক্ষ্মীবাই স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ভারতজুড়ে মহিলাদের প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন। তিনি ১৮২৮ সালে কাশীতে "মণিকর্ণিকা" হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে ঝাঁসির রাজা গঙ্গাধর রাওয়ের সাথে তার বিয়ে হয়। তার স্বামীর মৃত্যুর পর রাজ্যের প্রশাসনের দায়িত্ব রানী লক্ষ্মীবাইয়ের উপর পড়ে। তিনি ব্রিটিশদের কাছে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে তিনি তাদের শাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন না। তিনি সাহসিকতার সাথে সাত দিন ধরে একটি ছোট সেনাবাহিনী নিয়ে তার প্রদেশকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি প্রচণ্ডভাবে ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিলেন এবং ১৮৫৮ সালে গোয়ালিয়রের কাছে যুদ্ধে মারা যান।

৫. বাসন্তী দেবী

১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন, বাসন্তী দেবী ১৯২১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন যখন তার স্বামী চিত্তরঞ্জন দাশ বা 'দেশবন্ধু'কে গ্রেফতার করে ব্রিটিশরা। বলা হয়, ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে তার কার্যকলাপের জন্য গ্রেফতার হন। বাসন্তী দেবীই প্রথম মহিলা যিনি অসহযোগ আন্দোলনের সময় তার ননদ উর্মিলা দেবীর সাথে আদালতে গ্রেফতার হন। তিনি খিলাফত আন্দোলন এবং আইন অমান্য আন্দোলনেও অংশ নেন।

৬. সরোজিনী নাইডু

সরোজিনী নাইডু একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন যার কবিতা ছড়িয়ে পড়ছিল দেশের কোণায় কোণায়। তাকে ভারতের নাইটিঙ্গেল বলা হত। মহাত্মা গান্ধীর একজন অনুসারী, সরোজিনী নাইডু ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি।

৭. উদা দেবী

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে উদা দেবী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। কথিত আছে যে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে বেগম হযরত মহলের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লখনউতে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ৩০ জনেরও বেশি সেনাকে হত্যা করেছিলেন। উদা দেবী এবং অন্যান্য দলিত অংশগ্রহণকারীদের আজ ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহের যোদ্ধা বা "দলিত বীরাঙ্গনা" হিসাবে স্মরণ করা হয়।

৮. উমাবাই কুন্দপুর

স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অজ্ঞাত নায়িকা হিসাবে বিবেচিত, উমাবাই ছিলেন 'ভাগিনী মন্ডল'-এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৪৬ সালে, মহাত্মা গান্ধী তাকে কস্তুরবা ট্রাস্টের কর্ণাটক শাখার এজেন্ট হিসেবে নিযুক্ত করেন।

এঁনারাই শুধু নন, আরও অনেক মহিলা আছেন যারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে রূপ দিয়েছেন। এই ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে, তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

'মমতা পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটি রোহিঙ্গা ঢুকিয়েছে', বিস্ফোরক মন্তব্য Suvendu Adhikari-র
মমতা হারবে, DA ন্যায্য অধিকার, জয় আপনাদের দোরগোড়ায়, ঐক্যবদ্ধ থাকুন : শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
Suvendu Adhikari Live : নবান্নের সামনে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ধর্না অবস্থান মঞ্চে শুভেন্দু
কেউ পেয়েছে ২০০, কেউ ৫০! মালদায় গাছ থেকে টাকার বৃষ্টি! ব্যাপারটা কি | Malda News Today
'এই CBI মানুষের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে' CBI-র গেটে প্রতীকী তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ ডাক্তারদের | RG Kar