দেশে যখন মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বাড়ছে, তখন সম্প্রীতির এক অসাধারণ চিত্র ধরা পড়ল তিহার সংশোধনাগারে। এই বছর রমজান মাসে মুসলিম বন্দীদের পাশাপাশি তাঁদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনে রোজা রাখছেন অন্তত ১৫০ জন হিন্দু বন্দীও। গত বছর এই সংখ্যাটা ছিল ৫৯। এক বছরে একলাফে তিন গুণ বেড়েছে এই প্রবণতা বলে জানিয়েছেন সংশোধানাগার কর্তৃপক্ষ।
তিহার সংশোধনাগারে রোজা পালন
সংশোধানাগারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিহারের বিভিন্ন জেলে আপাতত ১৬,৬৬৫ জন বন্দী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে মোট ২,৬৫৮ জন বন্দী রোজা রাখছেন। তাঁদের জন্য সংশোধনাগারে বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই তিহারের বিভিন্ন জেলের হিন্দু বন্দীরা তাঁদের সুপারদের জানিয়েছিলেন তাঁরাও মুসলিম বন্দীদের মতো রমজান মাসে রোজা রাখতে চান। তাঁদের আবেদন মেনে জেল সুপার-রা সেই সময়ই মুসলিম বন্দীদের পাশাপাশি রোজা করতে ইচ্ছুক এমন হিন্দু বন্দীদের সংখ্যার হিসেবও করে রেখেছিলেন। সেই মতোই এখন বিশেষ ব্যবস্থা দেওয়া হচ্ছে তাঁদের।
কেন রোজা রাখেন হিন্দু বন্দীরা?
তিহার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, হিন্দু বন্দীরা রোজা রাখার জন্য নানান কারণ দেখিয়েছেন। তবে প্রধানত তাঁরা বলেছেন, মুসলিম বন্দীদের প্রতি সংহতি দেখাতে চান তাঁরা। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি বিষয়টা তা নয়। তাঁরা বলছেন অপরাধ করে সংশোধনাগারে আসার পরে অধিকাংশ বন্দীর মধ্যেই ধর্মের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। ধর্মের পথেই তাঁরা শান্তির খোঁজ করেন। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বন্দীকেই সংশোধনাগারে এসে ধার্মিক হয়ে উঠতে দেখা যায়। অনেকে স্বীকারও করেছেন, ভগবানকে ডাকলে তাড়াতাড়ি মুক্তি মিলবে বলে মনে করেন তাঁরা।
যত মত, তত পথ
আর তাঁদের এই বিশ্বাস কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি থাকে তা নয়। তাঁরা সকল ধর্মকেই অবলম্বন করেন। সব পথেই ঈশ্বরকে ছুঁতে চান। তাই রমজান মাসে যেমন হিন্দু বন্দীদের অনেকে রোজা পালন করেন, তেমনই নবরাত্রীর সময় মুসলমান বন্দীরা হিন্দু বন্দীদের সঙ্গে উপবাস করেন। আর এটা শুধু তিহার নয়, দেশের সব সংশোধনাগারের ছবিটাই এক - এমনটাই জানিয়েছেন তিহার সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ।