অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির কাজ প্রায় সুসম্পন্ন। তিথি-নক্ষত্র মেনে ২০২৪ সালেই উদ্বোধন হতে চলেছে হিন্দু ধর্মের পূজনীয় এই মন্দির। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ভারতে আজ ‘শৌর্য দিবস’।
“সাম্য, স্বাধীনতা এবং ভ্রাতৃত্ব একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না”, ১৯৪৯ সালের ২৫ নভেম্বর গণপরিষদে নিজের বক্তৃতায় পরামর্শ দিয়েছিলেন ডক্টর বি আর আম্বেদকর। সেই বক্তব্যের মাত্র ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর এক বিরাট তাণ্ডব দেখেছিল গোটা ভারত। অযোধ্যা শহরের রামকোট হিলের উপর অবস্থিত মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রার্থনাস্থল সুপ্রাচীন ‘বাবরি মসজিদ’-এর (Babri Masjid) ওপরে চড়ে হিন্দু ধর্মের ধ্বজা উড়িয়ে মসজিদে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছিলেন করসেবক গোষ্ঠীর মানুষরা। সেই ঘটনার ৩১ বছর পূর্ণ হল ২০২৩ সালে।
মসজিদ রক্ষাকর্তাদের দাবি অনুযায়ী, ভাঙচুরের আগে মুঘল শাসকদের দ্বারা নির্মিত বাবরি মসজিদ-এর ভেতরে কয়েকজন হিন্দু মহিলা প্রবেশ করেছিলেন, যাঁরা ভেতরে থাকা একটি ঝর্ণা দেখে মনে করেছিলেন যে, সেটি সুপ্রাচীন কোনও শিবলিঙ্গ। সেই ধারণা থেকে এই কথা ছড়িয়ে পড়ে যে, বাবরি মসজিদে যুগযুগান্তর আগে শিবলিঙ্গ ছিল, অতএব কোনও শিব মন্দির ভেঙেই বাবরি মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি, হিন্দু ধর্মের পূজ্য মহাকাব্য রামায়ণের প্রধান চরিত্র ভগবান শ্রী রাম এই অযোধ্যাতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এই মন্দিরের মূল গম্বুজের নীচে 'রামলালা'-র মূর্তি রয়েছে, সেজন্য অযোধ্যায় মসজিদ থাকতে পারে না বলে দাবি করেন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন করসেবক-এর সদস্যরা। তারপরেই ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদে আচমকা হামলা করেন তাঁরা।
-
বাবরি মসজিদ ভাঙার দিনটিকে যেমন ‘কালা দিবস’ বলে মনে করেন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ, ঠিক তেমনই উলটোদিকে এই দিনটিকে 'শৌর্য দিবস' বলে মনে করেন করসেবক গোষ্ঠীর হিন্দু সমর্থকরা। হিন্দু ধর্মীয়দের পক্ষ থেকে মুঘল সম্রাটদের নিজের ‘ক্ষমতা’ দেখানো গেছে বলে মনে করেন তাঁরা। এই ঘটনার ৫ দিনের মাথায় এলাহাবাদ হাই কোর্ট রায় দিল যে, মসজিদের জমির মালিকানা সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের হাতে থাকার দরুন এবং এর ভিতরে একটি কবরস্থান থাকার কারণে উত্তরপ্রদেশে কল্যাণ সিংহের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের দ্বারা মসজিদের জমি অধিগ্রহণ করা মোটেই আইনানুগ নয়। এই রায়ের ২ সপ্তাহের মধ্যে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের প্রশাসন অর্ডিন্যান্স জারি করে মসজিদ ও সংলগ্ন এলাকার জমি অধিগ্রহণ করে নেয়। বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার আগে সেখানে কোনও হিন্দু মন্দির বা কোনও হিন্দু ধর্মীয় কাঠামোর অস্তিত্ব ছিল কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানানো হয়। ১৯৯৪ সালে শীর্ষ আদালত সেই অনুরোধকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে এড়িয়ে যায়। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে পরিণত হয়।
ঘটনার পর প্রায় ২৬ বছর ধরে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বিভিন্ন ধরনের মতানৈক্য বিনিময়ের পর ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, বাবরি মসজিদের সম্পূর্ণ জমিটিই অযোধ্যার রাম মন্দির নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হতে পারে। অছি পরিষদ গঠন করে চলে গেল মন্দির তৈরির দায়িত্ব। ২০২০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলায় বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, উমা ভারতী (যাঁদের বিরুদ্ধে মন্দির ভাঙচুরে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল) তাঁদের বেকসুর খালাস করার নির্দেশ বহাল রেখে দিল এলাহাবাদ হাই কোর্ট, বিচারক বললেন যে, করসেবকদের হামলায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র বা পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না।
-
সাম্য, স্বাধীনতা এবং ভ্রাতৃত্ব – বি আর আম্বেদকরের তিনটি মূল মন্ত্র নিয়ে দেশবাসীকে একতার বার্তা দিলেন বিজেপি সরকারের মুখ্য নেতা তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির কাজ প্রায় সুসম্পন্ন। তিথি-নক্ষত্র মেনে ২০২৪ সালেই উদ্বোধন হতে চলেছে হিন্দু ধর্মের পূজনীয় এই মন্দির। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ভারতে আজ ‘শৌর্য দিবস’।
-
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।