সন্ত্রাসবাদ ভারতের কাছে বরাবরই এক মাথা ব্যাথা। যদিও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযানে গত কয়েক বছরে ভারত সরকার ভালোমত সাফল্য পেয়েছে বলেও জানালেন অনুরাগ ঠাকুর।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়েছে ভারত। আর তারই ফলপ্রসূ সন্ত্রাস প্রতিরোধে আসছে সাফল্য। এমনভাবেই সোমবার নয়াদিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের সামনে সন্ত্রাস প্রতিরোধে ভারত সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। সেই সঙ্গে অনুরাগ ঠাকুর আরও বলেন যে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে বিশ্বকে এককাট্টা করেছে ভারত। তিনি আরও বলেন যে, অথচ ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র সন্ত্রাসের আঁতুরঘর হয়ে থেকে গিয়েছে।
সন্ত্রাস প্রতিরোধে ভারত সরকারের সাফল্যের খতিয়ান দিতে গিয়ে অনুরাগ বলেন, জঙ্গী দমন এবং এহেন কার্যকলাপ মোকাবিলায় ইউএপিএ আইনকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইকে সন্ত্রাস প্রতিরোধে দেশের যে কোনও স্থানে তদন্তের অগ্রাধিকার প্রদান করে এবং এনআইএ(সংশোধনী) অ্যাক্টকে শক্তিশালী করে জঙ্গি কার্যকলাপের টুটি চিপে ধরা গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মঞ্চে যেভাবে বিশ্বের সামনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রেখেছেন, এদিন তারও উল্লেখ করেন অনুরাগ ঠাকুর। ৯০ তম ইন্টারপোল জেনারেল অ্যাসেম্বলি-তে ২০০০ বিদেশী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। আর সকলেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রতিটি দেশের একযোগে অভিযান করা উচিত বলেও মত দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে এদিন এমন কথাও তুলে ধরেছেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর তখতে বসেছিলেন। এরপর থেকে দেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে কতটা কার্যকর হয়েছে তার একটি পরিসংখ্যানও এদিন তুলে ধরেন অনুরাগ ঠাকুর। তিনি বলেন , বালাকোটের মতো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক সন্ত্রাসবাদীদের মনে ধর ধরিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সীমান্তপারের সন্ত্রাস মদতেও। জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাস প্রতিরোধের পরিসংখ্যান তুলে ধরতে গিয়ে অনুরাগ ঠাকুর জানান, উপত্যকায় গত কয়েক বছরে সন্ত্রাসবাদমূলক কার্যকলাপে ১৬৪ শতাংশ হ্রাস লক্ষ করা গিয়েছে। অর্থ দিয়ে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্তদের দণ্ডে ৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ এবং জঙ্গি দমনেও হ্রাস দেখা গিয়েছে বলে এদিন জানান অনুরাগ ঠাকুর। ২০১৪ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ৮০ শতাংশ হ্রাস হয়েছে বলেও জানান তিনি। সন্ত্রাসে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর হারেও এই অঞ্চলে ৮৯ শতাংশ কমতি দেখা গিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব ভারতে ছয় হাজার জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে বলেও জানান তিনি।
এই অঞ্চলে চির শান্তি স্থাপনে ভারত সরকার আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগের থেকে আলাপ-আলোচনাতেই বেশি আগ্রহী বলেও এদিন জানান অনুরাগ ঠাকুর। আর সেই কারণেই ভারত সরকার তার ঐতিহ্য মেনে গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলে একাধিক শান্তিচুক্তিতে সই করেছে। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- বোড়ো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি-২০২০, ব্রু-রিয়াং চুক্তি, জানুয়ারি-২০২০, এনএলএফটি-ত্রিপুরা চুক্তি-অগাস্ট-২০১৯, কার্বি-আলং চুক্তি-সেপ্টেম্বর-২০২১, অসম-মেঘালয়া ইন্টার স্টেট বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট-মার্চ-২০২২।