দিল্লিতে থাকলে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য় আপনাকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করতে হত না। অন্তত সমীক্ষা তেমনটাই বলছে। ওখানকার মধ্য়বিত্তরা ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলের চেয়ে সরকারি স্কুলকেই প্রথম পছন্দের তালিকায় রেখেছে।
নেতা অ্য়াপ জনতা ব্য়ারোমিটারের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, দিল্লিতে ৬১ শতাংশ মানুষই তাদের ছেলেমেয়েদের সরকারি স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী। এমনকি বেসরকারি স্কুলের চেয়েও সরকারি স্কুলই তাঁদের বেশি পছন্দের বলে জানিয়েছেন সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা। আর ক-দিন বাদেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। তার ঠিক আগেই এমন এক সমীক্ষা আপ সরকারকে বেশ কিছুটা স্বস্তি দিল নিঃসন্দেহে।
দিল্লির চল্লিশ হাজার নাগরিকের ওপর সমীক্ষাটি চালিয়েছিল নেতা অ্য়াপ। সেখানকার ৭০টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৪০হাজার মানুষকে বেছে নেওয়া হয়েছিল সমীক্ষার জন্য। সেখানে গত পাঁচ বছরে অরবিন্দ কেজরিবালের আম আদমি পার্টির কাজকর্ম নিয়ে কী ভাবছেন ভোটাররা, তার ওপরই সমীক্ষাটি হয়েছিল। সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে সামনে রাখা হয়েছিল। সমীক্ষায় বিস্ময়জনকভাবে দেখা গিয়েছে, দিল্লির ৬১ শতাংশ ভোটার সরকারি স্কুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁরা সেখানে নামিদামি বেসরকারি স্কুলের চেয়ে সাধারণ সরকারি স্কুলেই ছেলেমেয়েদের পাঠাতে বেশি আগ্রহী!
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে কেজরিবাল সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি স্কুলগুলোর ব্য়াপক উন্নতি হয়। সেখানকার স্মার্ট ক্লাসরুম পড়ুয়াদের আকৃষ্ট করে। বলতে গেলে, সরকারি স্কুল মানেই কোনাভাঙা বেঞ্চি আর নোনা ধরা স্য়াঁসসেতে দেওয়াল, এই ধারণার গালে থাপ্পড় কষাতে পেরেছে সেখানকার আপ সরকার। কী পরিকাঠামোয় কী শিক্ষার মানে, দিল্লির সরকারি স্কুলগুলো এখন কার্যত গোটা দেশের কাছে মডেল হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত, আম আদমি পার্টি যখন দিল্লির সরকারি স্কুলগুলোকে তাদের সাফল্য় হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে বিধানসভা নির্বাচনে, তখন বিজেপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে সেখানকার স্কুলগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে সম্প্রতি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই সমীক্ষা আপ সরকারের কাছে যথেষ্টই স্বস্তির।
ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য়ে ৭৬ শতাংশই জানিয়েছেন, দিল্লির সরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার মানে তাঁর সন্তুষ্ট। আর ৮৪ শতাংশ জানিয়েছেন, সরকারি স্কুলের পরিকাঠামোয় তাঁরা খুশী। গত পাঁচ বছরে স্কুলগুলোর অবস্থা কতটা ভাল হয়েছে, এই প্রশ্নের উত্তরে ৮২ শতাংশ ভোটার একবাক্য়ে জানিয়েছেন, পড়াশোনার মান ও আনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধের দিক থেকে দিল্লিতে সরকারি স্কুলগুলোর অবস্থা অনেকটাই উন্নত হয়েছে। সত্তরটি বিধানসভার মধ্য়ে যে দুই কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছিল, সেই রোহিনী ও বিশ্বাসনগরের ভোটাররাও একই মত পোষণ করেছে। বিধানসভা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আপ সরকারের কাজে সবচেয়ে সন্তুষ্ট নিউ দিল্লি, যেখানে আপ জিতেছে। এর পরেই রয়েছে রোহিনী আর বিশ্বাসনগর, যে দুই কেন্দ্রে বিজেপি জিতেছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, গত পাঁচ বছর ধরে আপ সরকার যে মন দিয়ে 'পড়াশোনা' করেছে, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।