টাডা আইনে জেলে গিয়েছিলেন নিজে। জেল থেকে বেরিয়ে মানবাধিকারের পক্ষে লড়ে খুন হয়েছিলেন। একদশক পরও সাজা পেল না শাহিদ আজমির খুনীরা। সিনেমার মতো তাঁর জীবন। নিজে টাডা আইনে গ্রেফতার হয়েছিলেন। জেলেই মধ্য়েই আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। জেল থেকে ফিরে আইনজীবী হয়ে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন টাডায় অভিযুক্তদের পক্ষে। এমনকি, বছরের কর্মজীবনে ১৭ জনকে সন্ত্রাসবাদী তকমা থেকে মুক্ত করেছিলেন তিনি। আদালত চত্বরে তাঁর মুখে কালি লেপে দিয়েছিল 'দেশভক্ত'র দল। তাতেও দমেননি তিনি। শেষে নিজের অফিসেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা যান এই তরুণ আইনজীবী।
নাম শাহিদ আজমি। তরুণ এই আইনজীবীকে নিয়ে সিনেমা করেছিলেন হংশল বনশালী, 'শাহিদ'। প্রযোজনা করেছিলেন অনুরাগ কাশ্য়প। আর শাহিদের ভূমিকায় অনবদ্য় অভিনয় করেছিলেন রাজকুমার রাও। ২০১৩ সালের এই ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা পায়। আন্তর্জাতিক মহলেও সাড়া ফেলে।
দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর একদশক কেটে গিয়েছে। তবু একজনেরও সাজা হয়নি। সরকারি আইনজীবী বৈভব বাগাদের কথায়, এত ধীর গতিতে মামলা চলছে আর তা একেবারে যেন প্রথম দিকেই পড়ে রয়েছে, এগুচ্ছে না। যদিও সরকার পক্ষের কাছে মামলাটি যথেষ্ট জোরদার। বাগদে মনে করেন, "আমাদের পক্ষে যথেষ্ট তথ্য় প্রমাণ রয়েছে। আমার কোনও সন্দেহই নেই যে মামলার রায় আমাদের পক্ষেই যাবে।"
কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা কেন এত ধীর গতিতে এগোচ্ছে?
সরকারি আইনজীবী বাগদের কথায়, "দেখুন আমাদের তরফ থেকে কিন্তু কোনও ঢিলেমি নেই। অভিযোগকারীর সাক্ষপ্রমাণ পর্ব শেষ। এবার বিবাদী পক্ষ আমাদের পাল্টা প্রশ্ন করবে।" বাগদে জানান, গত সপ্তাহের শুনানিতে অভিযুক্তদের আইনজীবী আসেননি। তাই সাক্ষীকে প্রশ্ন করা হয়নি। যদিও আদালত সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আর কিন্তু দিন পিছনো যাবে না এভাবে।
প্রসঙ্গত, শাহিদ আজমির হত্য়াকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্য়ে গ্য়াংস্টার সন্তোষ শেঠ্ঠি ২০১৪-র অক্টোবরে মক্তি পায়। তারপর ২০১৭-র অগস্টে বাকি চারজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। চার অভিযুক্তের মধ্য়ে দুজন এখন জামিন পেয়ে জেলের বাইরে। এদের মধ্য়ে যে গুলি করে মারে শাহিদকে, সেই জগতপ সোলাঙ্কি জামিনের আবেদন করে আদালতে। যদিও আদালত সেই আর্জি খারিজ করেছে, এর জন্য় কিছুটা দেরি হয়েছে বিচার শুরু হতে।
প্রসঙ্গত, ২০১০-এর ১১ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ের কুরলায় ট্য়াক্সিমেনস কলোনিতে তাঁর নিজের অফিসেই খুন হন তরুণ আইনজীবী শাহিদ আজমি। ওই সময়ে তিনি টাডায় ধৃত বেশ কয়েকজন মুসলিম যুবকের হয়ে আদালতে লড়ছিলেন। মাত্র ৭ বছরের কর্মজীবনে শাহিদ ১৭জনকে নির্দোষ প্রমাণ করেন শাহীদ, যাঁদের বেশিরভাগই টাডার মতো কালাকানুনে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এমনকি, নিজের অফিসে খুন হওয়ার পর, তিনি লড়ছিলেন, এমন বেশ কিছু মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হন আরও কয়েকজন মুসলিম যুবক। শাহিদ আজমির জীবনী নিয়ে তৈরি 'শাহিদ' বলিউডে ছাপ ফেলে যাওয়ার মতো একটি ছবি।