
ঝাড়খণ্ডের রেলযাত্রীদের কাছে এক নতুন দৃশ্য ভীষণ পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সিল্লি স্টেশন থেকে খড়গপুর-হাটিয়া প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চেপে রওনা দেয় এক বিশেষ যাত্রী — এক হনুমান!
প্রায় ৫৩ কিলোমিটার পেরিয়ে বেলা বারোটা নাগাদ ট্রেনে চেপে সে রাঁচি পৌঁছয়। ফের বিকেল সাড়ে তিনটার ট্রেনে চড়ে বিকেল সাড়ে চারটের পর আবার ফিরে আসে সিল্লিতে। এই দীর্ঘ পথে একাধিক স্টেশন পড়ে। তার মধ্যে টাটি সিলওয়ে, নামকুম স্টেশনে প্রায় সব ট্রেন স্টপেজ দেয়। কিন্তু ওই প্যাসেঞ্জার ট্রেন থেকে নামে না হনুমান। মানুষের মতোই ট্রেনের সিটে বসে। রাঁচি ঢোকার সময় সুবর্ণরেখা নদী পেরলে তবেই সিট ছাড়ে সে। চলে আসে ওই প্যাসেঞ্জার ট্রেনের দরজায়। যে দরজায় সে থাকে, তার উল্টোদিকে প্ল্যাটফর্ম পড়লে ঠিক সেখানেই নামে ওই হনুমান। আবার ওই ট্রেনে ফিরে আসে। তার এই নিয়মিত যাতায়াতের ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাটি যেমন বিস্ময়কর, তেমনি এর পেছনে রয়েছে গভীর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
এ বিষয়ে পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “এই ঘটনা শুধুই বিস্ময়কর নয়। এর পিছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। বেশ কয়েকটি কারণে হনুমান এই আচরণ করতে পারে।”
অঞ্জন গুহর কথায় উঠে আসা কারণসমূহ
১। হনুমান, বাঁদরের ‘মেমরি ইনপ্রিন্টিং’ অর্থাৎ মনে রাখার বিষয়টি জোরালো হয়। সেই কারণেই সময়মতো একই ট্রেনে রোজ যাওয়া আসা করে ওই হনুমানও।
২। মানুষ যেমন খাদ্য বা বাসস্থান বা অন্য কোনো জরুরি কারণে ঘুরে বেড়ায়, তেমনই বন্যপ্রাণের মধ্যেও এরকম একটি প্রবণতা রয়েছে ব্যাপক। হয়ত ওই হনুমান নির্দিষ্ট কোনও জায়গাতে গিয়ে কোনও খাবার পায় বা সেখানকার জল হয়তো তার খুব পছন্দের, আবার হতেই পারে কোনও পরিচিতজনের সঙ্গে তার দেখা হয়। এমন যেকোনো বিষয়ই তার নিত্য যাতায়াতের কারণ হতে পারে।
৩। হনুমান, বাঁদরের মস্তিষ্ক অনেকটাই মানুষের মত। সেই সঙ্গে ঐ ট্রেনে যাতায়াত করতে করতে এই পরিবেশ সেই হনুমান নিরাপদ মনে করছে। ফলে প্রতিদিনের যাতায়াত একপ্রকার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৪। এই ধরনের বন্যপ্রাণীরা ভীষণ অনুকরণপ্রিয়। মানুষজনের নকল করে। মানুষজন যেমন ট্রেনে উঠছে, সিটে বসছেন। তা দেখে হনুমানটিও ট্রেনে ওঠে এবং মানুষের মতোই বসে যাতায়াত করে।
শিবরাম কুমার বলেন, “এমন ঘটনা আমি কোনদিন শুনিনি, দেখিওনি। আমি সম্প্রতি খড়গপুর-হাটিয়া ট্রেনে রাঁচি যাচ্ছিলাম। হনুমানের এমন আচরণ দেখে আমি ভিডিও করি। ট্রেনে ওঠা, সিটে বসা শুধু নয়। ওই যাত্রাপথে মাঝখানে দুটি স্টেশনে ট্রেনটি স্টপেজ দিলেও সেখানে নামে না। রাঁচি ঢোকার আগে বসার আসন থেকে সোজা দরজায় গিয়ে বিপরীত দিকে প্লাটফর্ম পড়লে সেখানেই নামে।”