২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2024) আগে মোদী বিরোধী প্রধান মুখ হতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। পঞ্জাব জয়ের পর কি এগিয়ে গেল আম আদমি পার্টি (Aam Admi Party)।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে (Lok Sabha Elections 2024) মাথায় রেখে, ২০২১ থেকে দৌড় শুরু করেছিল দুটি আঞ্চলিক দল - আম আদমি পার্টি (Aam Admi Party) এবং তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। একটি দলের দিল্লিতে (Delhi) সরকার ছিল, অন্যদল সদ্য পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) নতুন সরকার গড়েছিল। দুই দলেরই প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল বিজেপি (BJP) এবং দুই ক্ষেত্রেই প্রচারে এসেছিলেন বিজেপির একেবারে শীর্ষ নেতারা। এরপর, কংগ্রেসের (Congress) ক্রমশ সংকোচনে জাতীয় রাজনীতিতে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে, তার দখল নিতে নিজ নিজ রাজ্যের বাইরে তাদের উপস্থিতি প্রসারিত করতে জোর কদমে লেগেছিল দুই দলই। বৃহস্পতিবার, ৫ রাজ্যের যে ফল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে কিন্তু, দৌড়ে কিছুটা হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) পিছনে ফেলে এগিয়ে গেলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal), এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে, কংগ্রেস একের পর এক রাজ্যেই ক্ষমতা হারিয়েছে। কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশে সরকার গড়েও ধরে রাখতে পরেনি। তাছাড়া, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলি, যে রাজ্যগুলি থেকে সংসদে তাদের বিপুল সংখ্যক সদস্য আসত, সেই রাজ্যগুলিতেও শতাব্দী প্রাচীন দল তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানে নেমে গিয়েছে। আর সাম্প্রতিক বিধানসভা ফল প্রকাশের পর তো তাদের উপস্থিতি থাকল দুটি রাজ্যে - রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়। আর মহারাষ্ট্রে শাসক জোটের সবথেকে ছোট সদস্য।
অর্থাৎ, জাতীয় স্তরে বিরোধী রাজনীতিতে এক বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছএ। এই শূন্যতাকে অনুভব করেই, মাঠে নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এই ফাঁকা জায়গা দখল করার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছেন। তবে, এদিন পঞ্জাবে (Punjab Elections 2022) বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসায় এই দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন কেজরিওয়াল। তাঁর দলের হাতে এখন শুধু দুটি রাজ্যের ক্ষমতা আছে, গোয়াতেও (Goa Elections 2022) তারা ২টি আসনে জিতেছে। যেখানে প্রবল প্রচারের ডঙ্কা বাজিয়েও, তৃণমূলকে গোয়া থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে।
শুধু তাই নয়, প্রথম থেকেই আপ দলের দেশের একটা বড় অংশে ব্যাপক নির্বাচনী উপস্থিতি রয়েছে। এই বছরই যেমন, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড এবং গোয়ার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে তারা। মহারাষ্ট্রেও বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে লড়াই করেছে তারা। বস্তুত, ২০১৭ সালেও, আপ দল পঞ্জাবে প্রথমবার লড়াই করে ২০ টি বিধানসভা আসনে জিতেছিল, ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। পঞ্জাবের নির্বাচনী সাফল্য আপ-কে জাতীয় স্তরে বিজেপির সম্ভাব্য জনপ্রিয় বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে নিশ্চিতভাবে সাহায্য করবে।
বছরের শেষে আবার, ভোট রয়েছে গুজরাট এবং হিমাচলপ্রদেশেও। সেখানেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে জানিয়েছে আপ। তৃণমূলের সেই সম্ভাবনা নেই। গুজরাটের শহরাঞ্চলে বেশ কিছু এলাকায় আপ দল দাঁত ফোটাতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। হিমাচল ছোট রাজ্য এবং প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রেই অল্প সংখ্যক ভোটার রয়েছে। তাই সেখানে আপ তাদের নির্বাচনী উপস্থিতি জানান দিতেই পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে গত ছয় মাসে, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে দলকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে তৃণমূলও গোয়া, হরিয়ানা, ত্রিপুরা এবং মেঘালয় রাজ্যে দলীয় শাখা খুলেছে। তবে, ত্রিপুরা এবং গোয়ায় এখনও পর্যন্ত এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাফল্য পায়নি। গোয়ায় তাদের জোটসঙ্গী এমজিপি (MGP) ২টি আসনে জয়ী হলেও, তৃণমূলের ঝুলিতে কিছুই আসেনি। ত্রিপুরার পুর নির্বাচনেও আশানুরূপ সাফল্য আসেনি।
এর পাশাপাশি জাতীয় ক্ষেত্রে আপ দলের আরও একটি সুবিধা রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল দুজনেই নিজ নিজ রাজ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও, কেজরিওয়ালের জনপ্রিয়তা দিল্লির বাইরে অনেক হিন্দি-ভাষী রাজ্যেও রয়েছে। পঞ্জাবে সেই ছবি সদ্য দেখা গিয়েছে। এটা সম্ভবত ভাষা সমস্যার কারণে হয়েছে। এদিনই বঙ্গ বিজেপির নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) এই নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন, 'দিদিমনির ভুল হিন্দির জন্য অখিলেশের দোকানও বন্ধ হয়ে গেল'। তবে, অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি দলগুলির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কেজরিওয়ালের থেকে এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষ পর্যন্ত, জাতীয় স্তরে মোদী-বিরোধী মুখ হিসাবে বিরোধীদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য কে হবেন, তা সময় বলবে। তবে আপ নেতা রাঘব চাড্ডা (Raghab Chadda) এদিন বলেই দিয়েছেন, বিরোধীদের নেতা কে হবেন, তা মানুষ ঠিক করবে। তিনি চান তাঁর দলের নেতাই প্রধানমন্ত্রী হোন।