
Ahmedabad flight crash: দেশের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে কালো দিন। ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা! সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবথেকে বড় প্লেন ক্র্যাশ। আহমেদাবাদ থেকে টেক অফ করে লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার Boeing 787-8 Aircraft-টির (air india plane crash)।
মোট ২৪২ জন যাত্রীকে নিয়ে আহমেদাবাদের মেঘানিনগর বসতি এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ভেঙে পড়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ১৭১ বিমানটি। সেই বিমানে থাকা একজন ছাড়া বাকি সকলেরই মৃত্যু হয়েছে এই ঘটনায় (air india plane flight)।
যার ফলে সেই হোস্টেল সংলগ্ন অঞ্চলে একাধিক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। আর সেই বিমানটি ভেঙে পড়ার ঠিক পরের মুহূর্তেই প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে একটি। আগুন ধরে যায় গোটা বিমানে। মর্মান্তিক এবং ভয়ঙ্কর এই দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করে প্রশাসন। বিমানটিতে ১৫৮ জন ভারতীয় ছাড়াও ৫৩ জন ইংল্যান্ডের নাগরিক, ১ জন কানাডার নাগরিক এবং ৭ জন পর্তুগিজ নাগরিক ছিলেন। আহতদের চিকিৎসা শুরু হয় কাছাকাছি একাধিক হাসপাতালে।
এয়ার ইন্ডিয়ার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিমানে মোট ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন বিমানকর্মী ছিলেন। তাদের মধ্যে দু’জন পাইলট। তবে এই ঘটনার পর মৃতদের অনেককেই সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। তাই ডিএনএ পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বিজে মেডিক্যাল কলেজে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে দেহ শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের খবরাখবরের জন্য জনস্বার্থে চালু করা হয়েছে একাধিক হেল্পলাইন নম্বর।
সবথেকে বড় বিষয়, গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী আহমেদাবাদের সেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে ছিলেন। লন্ডনে নিজের মেয়ের কাছে যাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিআর পাটিল। ইতিমধ্যেই টাটা গ্রুপের তরফ থেকে দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবার পিছু ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর তথ্য অনুযায়ী, আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে এবার আসছে ব্রিটেনের এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ (এএআইবি)। তারা জানিয়ে দিয়েছে, ভারতের নেতৃত্বেই এই তদন্ত হবে। তবে তাতে সহযোগিতার জন্য একটি তদন্ত দল তারা পাঠাবে।
ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের একধিক ছবি এবং ভিডিও সামনে এসেছে। যেগুলি দেখে বিমান দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। ঘটনার পর, প্রথম যে ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, টেক অফ করার পর, লোকালয়ের উপর বেশ নিচ দিয়েই উড়ে যাচ্ছে বিমানটি। কিন্তু কিছুদূর এগোনোর পরেই, হটাৎ সেটি নীচের দিকে নামতে শুরু করে এবং তারপর একটি বিল্ডিং-এ ধাক্কা খেয়ে বিমানটি ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে হয় বিস্ফোরণ এবং আগুনের কালো লেলিহান শিখা আকাশের অনেক উঁচু পর্যন্ত উঠে যায়।
তারপর সন্ধ্যায় সামনে আসে বিমানবন্দরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ। সেখানে আবার দেখা যাচ্ছে, উড়তে শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি বাঁ-দিকে হেলতে শুরু করে এবং বিমানের লেজের অংশটি নীচের দিকে নামতে থাকে। তবে এই ভিডিওগুলির সত্যতা যাচাই করা হয়নি এশিয়ানেট নিউজ বাংলার তরফ থেকে।
তারা প্রায় সকলেই একটি বিষয়ে একমত যে, বিমান ভেঙে পড়ার আসল কারণ জানা যাবে যদি ব্ল্যাকবক্সটি উদ্ধার করা যায়। এই মুহূর্তে তাই দুর্ঘটনার নিশ্চিত কারণ বলা একেবারেই সম্ভব নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় সম্ভাব্য চারটি কারণ উঠে আসছে।
প্রথমত, এই দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে বিমানটির ভার এবং সেই সংক্রান্ত গণনায় যদি কোনও ত্রুটি হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞেরা অনেকেই মনে করছেন, ওড়ার সময়ে যাত্রী এবং মালপত্র সহ বিমানের ওজন ঠিক কত হয়েছিল, সেটা ভীষণভাবেই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ, প্রত্যেকটি বিমানের নির্দিষ্ট একটি ভারবহন করার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু অনেক সময়েই বিমান ওড়ার সময় সেই ওজনের হিসেবে গোলমাল করে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা।
সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভারে তখন বিমানটি ভেঙে পড়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাছাড়া বিমানের মধ্যে যাত্রীদের কোথায় বসানো হবে এবং কোন দিকে কত যাত্রী বসলে বিমানের সামনের এবং পিছনের দিকের ভারসাম্য বজায় থাকবে, বিমান ওড়ার আগে তা সঠিক হিসেব করতে হয়। এক্ষেত্রে সেই হিসেবে কোনও ভুল হয়েছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্লাইট স্পেশ্যালিস্ট বন্দনা সিংহ জানিয়েছেন, বিমানটি যে বিল্ডিং-এ ধাক্কা খেয়েছে, সেখানে তার একটি চাকা আটকে গেছিল। ওজনের হিসেবে ভুল হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়।
দ্বিতীয়ত, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার। বিশেষজ্ঞদেরা অনেকেই মনে করছেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত এই বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ারেও ত্রুটি থাকতে পারে। এমনও হতে পারে যে, ল্যান্ডিং গিয়ারটি বিমান ওড়ার পর ঠিক মতো বন্ধই হয়নি। মূলত, এই ল্যান্ডিং গিয়ারই বিমানের ভার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিমান ওঠানামা করার সময়, রানওয়ের সংস্পর্শে আসে ল্যান্ডিং গিয়ার। অর্থাৎ, যেখান থেকে বিমানের চাকা বেরিয়ে আসে। ফলে, বিমানের গতিও ল্যান্ডিং গিয়ারের দ্বারাই নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। সেখানে গোলমালের কারণেও এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
তৃতীয় কারণ হিসেবে অনেকের মতে, মাটি ছাড়ার পরেই বিমানের উপরের দিকে ওঠার ক্ষমতা অর্থাৎ, লিফ্ট কমে এসেছিল। একসময় সেই ক্ষমতা একেবারেই শেষ হয়ে আসে। তখন বিমানটিকে আর কোনওভাবেই ভাসিয়ে রাখতে পারেননি পাইলট। ভাইরাল ভিডিওটি দেখে অনেকেই বলছেন, রানওয়ে ছাড়ার পর বিমানটি মাঝপথে সামান্য গোঁত্তা খেয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। আসলে লিফ্ট কমে যাওয়ার কারণেই এমনটা ঘটেছে।
চতুর্থ তথা শেষ কারণ হিসেবে উঠে আসছে, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। কারণ, সেটি ভেঙে পড়ার আগে সর্বোচ্চ ৩২২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিতে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিল। যা একেবারেই স্বাভাবিক বিষয় নয়। কারণ, ওই সময়ে বিমানের গতি আরও অনেকটা বেশি হওয়ার কথা। কোনও কারণে বিমানের ইঞ্জিন হয়ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। তার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
তাহলে প্রশ্ন উঠছে, এতগুলি টেকনিক্যাল সমস্যা কি হটাৎ করেই হয়ে গেল? বিমান ওড়ানোর আগে তো ভালো করে সেফটি চেক করা হয়। এক্ষেত্রে কি কোনও ত্রুটি থেকে গেছিল? উত্তর দেবে সময় এবং তা জানা যাবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট সামনে আসার পর।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।