বাঙালি খুনে রাঙা দোকমোকায় ফের নির্মম 'ডাইনি শিকার', প্রতিবাদ করায় মাথা কাটা গেল শিক্ষকেরও

অন্ধবিশ্বাসের জেরে জোড়া হত্যা অসমের গ্রামে

ডাইনি সন্দেহে খুন ৫০ বছরের বিধবা

প্রতিবাদ শিক্ষকেরও করায় শিক্ষকেরও কাটা হল মাথা

একই এলাকায় দুই বছর আগে হত্যা করা হয়েছিল দুই বাঙালী যুবককে

 

অন্ধবিশ্বাসের জেরে ভয়ঙ্কর জোড়া হত্যার সাক্ষী থাকল অসমের দোকমোকা থানার অন্তর্গত লানঘিন রহিমপুরের একটি গ্রাম। ডাইনি সন্দেহে হত্যা করা হল এক ৫০ বছর বয়সী বিধবাকে। সেইসঙ্গে এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় একি পরিণতি হলে গ্রামের এক ২৮ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষকের। ওই বিধবা মহিলার নাবালিকা কন্যাকেও হত্যার চেষ্টা করেঝছিল উন্মত্ত জনতা, কিন্তু, সে পালিয়ে প্রাণ বাঁচায়। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত নয়জনকে  গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকিদের খোঁজ চলছে। এই দোকমোকা থানা এলাকাতেই দুই বছর আগে গণপিটুনিতে হত্য়া করা হয়েছিল দুই বাঙালী যুবককে।

জানা গিয়েছে, গ্রামটি আদিবাসী অধ্যুসিত। বেশিরভাগ লোক দিনমজুর হিসাবে কিংবা ছোট কৃষক - অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এবং অন্ধবিশ্বাসে ভরপুর। কিছুদিন আগে গ্রামের এক মহিলা আচমকা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। গুয়াহাটিতে চিকিৎসা করাতে গিয়েও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। মৃত্যুর পরে তাঁর পারলৌকিক ক্রিয়াদির সময় অন্য এক মহিলার 'ভর ওঠে' বলে দাবি করেছেন গ্রামবাসীরা। ওই মহিলাই দাবি করেন, রমাবতী হালুয়া নামে গ্রামের এক মহিলা আসলে ডাইনি। সেই ওই মৃত্যুর জন্য দায়ী এবং সে গ্রামে আরও দুর্ভাগ্য নিয়ে আসবে।

Latest Videos

এরপরই একদল ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী রমাবতী হালুয়া-র বাড়িতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বিজয় গৌর নামে স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাদের বাধা দিতে গিয়েছিলেন। বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন, এটা কুসংস্কার। পরিণতিতে ওই বিধবা মহিলা ও তরুণ শিক্ষক দুজনকেই নির্মমভাবে ধারালো অস্ত্রের কোপে হত্যা করা হয়। তারপর তাদের শিরশ্ছেদ করে অপদেবতার কাছে অর্ঘ্য দেওয়া হয়। পরে তাদের মৃতদেহ দূরে টেনে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের পাশে একটি নদীর তীরে কবর দেওয়া হয়।

গ্রামবাসীদের হাত থেকে কোনওরকমে পালিয়ে  বৃহস্পতিবার সকালে দোকমোকা থানায় পৌঁছে রমাবতী হালুয়ার কিশোরী মেয়ে পুরো ঘটনা কুলে বলে। এরপর পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যার অস্ত্র এবং নিহতদের দেহ উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয়েছে রমাবতীকে ডাইনি বলে দেগে দেওয়া মহিলাকেও। তাঁর দাবি সেইসময় তাঁর ঠিক কী হয়েছিল তিনি জানেন না। এমনকী রমাবতীর নামটি তিনি উচ্চারণ করেঝছেন কি না তাও নাকি তাঁর মনে নেই। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার বিষয়ে একটি অভিযোগপত্র তৈরি করে দোষীদের আদালতে পেশ করার কাজ চলছে।

অসমে অবশ্য এই ধরণের অন্ধবিশ্বাসের জেরে হত্য়ার ঘটনা নতুন নয়। ২০১৮ সাল থেকে এই বিষয়ে রাজ্যে কড়া আইনও কার্যকর করা হয়েছে, দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু তারপরেও এই ধরণের ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না। অসমের সরকারি তথ্য অনুসারে, গত ১৮ বছরে রাজ্যে অন্ধবিশ্বাসের জেরে হত্যার ঘটনায় অন্তত ১৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৮ সালের জুন মাসে দোকমোকা থানারই অন্তর্গত এক জায়গায় অল্পদিনের ছুটি কাটতে এসে গণপিটুনির শিকার হতে হয়েছিল অভিজিৎ নাথ এবং নীলোৎপল দাস নামে দুই বাঙালি যুবককে। শিশু অপহরণকারী সন্দেহে জনতা তাঁদের দু'জনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছিল। তাদের পরিবার অবশ্য এখনও ন্যায়বিচার পায়নি।

 

Share this article
click me!

Latest Videos

প্রেমের আড়ালে লক্ষাধিক টাকা লুঠ! প্রতারণার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনি | South 24 Parganas News Today
'যেসব মুসলমানরা হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন তাঁদেরই পূর্বপুরুষেরা হিন্দু ছিল' বিস্ফোরক অর্জুন
West Bengal-এ জঙ্গিযোগ নিয়ে Mamata Banerjee-কে চরম তুলোধোনা Agnimitra Paul-এর! দেখুন কী বললেন
'তৃণমূলের দুয়ারে সরকার এখন দুয়ারে জঙ্গি', তীব্র আক্রমণ শুভেন্দু অধিকারীর | Suvendu Adhikari
চমকে উঠবেন! কৃষ্ণনগর পক্সো আদালতের বড় সাজা ঘোষণা | Nadia Latest News