আগেই স্ত্রীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বাতিকের জন্য বিবাহবিচ্ছেদ চাইলেন কর্ণাটকের (Karnataka) বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) এক প্রযুক্তিবিদ। তাঁর স্ত্রী অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডারে (Obsessive-Compulsive Disorder) ভুগছেন, যা করোনাভাইরাস মহামারিতে (Coronavirus Pandemic) আরও বেড়ে গিয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি (Coronavirus Pandemic), অনেকেরই মানসিক স্বাস্থ্যের (Mental Health) চূড়ান্ত অবনতি ঘটিয়েছে। গোটা বিশ্বেই এই প্রথম মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটল, কর্ণাটকের (Karnataka) বেঙ্গালুরুতে (Bengaluru)। বিয়ের ১২ বছর পর এক সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বিবাহবিচ্ছেদ (Divorce) চাইলেন। কারণ, তাঁর স্ত্রীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বাতিক। দিনকে দিন বিষয়টা এতটাই চরমে উঠেছে, যে একবার তিনি ডিটারজেন্ট দিয়ে স্বামীর ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন ধুয়ে দিয়েছিলেন বলে, অভিযোগ রয়েছে। শুনতে বিস্ময়কর হলেও, এটাই সত্যি।
ওই প্রযুক্তিবিদের নাম রাহুল। তিনি একটি বড় তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। তাঁর স্ত্রী এমবিএ গ্র্যাজুয়েট। দুজনেই বেঙ্গালুরুর আরটি নগরের (RT Nagar) বাসিন্দা। ২০০৯ সালে তাঁদের দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরপরই, রাহুলের কাজের প্রয়োজনে তাঁরা ইংল্যান্ডে (England) চলে গিয়েছিলেন। স্ত্রী বাড়িঘর সব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতেন, প্রথম প্রথম রাহুল তাতে খুশিই ছিল। তবে, প্রথম সমস্যা দেখা দেয় দুই বছর পর, যখন তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছিল। স্ত্রীর চরম স্বাস্থ্যবিধির অভ্যাসে প্রথম বিরক্তি আসতে শুরু করেছিল রাহুলের। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পরই, তাঁকে জামাকাপড়, জুতো এবং মোবাইল ফোন পরিষ্কার করতে হত। এই নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝামেলাও শুরু হয়েছিল।
এরপর, তাঁরা ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন। এরপর, একজন মনোবিদের পরামর্শও নেন। তাতে তাদের দাম্পত্য জীবনের অনেকটাই উন্নতি হয়েছিল। সেই সময় তাঁদের তাদের দ্বিতীয় সন্তানও জন্ম নেয়। তবে, ২০১৯ সালের শেষদিকে, বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে, রাহুলের স্ত্রীর মানসিক স্বাস্থ্যের অত্যন্ত অবনতি ঘটে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, বাড়ির সমস্ত কিছু পরিষ্কার করা এবং স্যানিটাইজ করা নিয়ে রীতিমতো পাগলামি শুরু করেন তিনি। লকডাউনের সময়, রাহুলের বাড়ি থেকে কাজ ছিল। একদিন তাঁর অফিসের ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ধুয়ে ফেলেন তাঁর স্ত্রী।
এখানেই শেষ নয়, বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনে রাহুল আরও অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্ত্রী দিনে অন্তত ছয়বার করে স্নান করেন। তাঁর স্নান করার সাবানটি পরিষ্কার রাখার জন্য আরও একটি সাবান ব্যবহার করেন তিনি। অসুস্থ শাশুড়ির মৃত্যুর পরে, রাহুল ও তাঁদের দুই সন্তানকে একমাসের জন্য বাড়িতেই ঢুকতে দেননি তিনি। কারণ, তাঁর তিনি বাড়িটি নিখুঁতভাবে স্যানিটাইজ করতে চেয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি বাচ্চাদেরও প্রতিদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর, স্কুলের ইউনিফর্ম, জুতো এবং স্কুলের ব্যাগ ধুতে বাধ্য করা শুরু করেছিলেন। এরপরই রাাহুলের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে।
স্ত্রী আচরণে ক্লান্ত হয়ে রাহুল, তাঁদের দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে চলে গিয়েছেন। এরপরই তাঁর স্ত্রী, পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারি ম্যারেজ কাউন্সেলরদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নভেম্বর মাসে তিনবার তাদের কাউন্সেলিং করার পরও, কোনও ফল হয়নি। কাউন্সেলর, জানিয়েছেন, রাহুলের স্ত্রী একটি মানসিক রোগে ভুগছেন, যাকে বলা হয় অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার বা ওসিডি (Obsessive-Compulsive Disorder)। কাউন্সেলর তাঁকে নিয়মিত মনোবিদদের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে, রাহুলের স্ত্রী তাঁর আচরণে যে কোনও অস্বাভাবিকতা আছে, তাই মানতে নারাজ। উল্টে রাহুলের স্বাস্থ্যবিধির অভ্যাসকে, 'অস্বাভাবিক' হিসাবে বর্ণনা করে তাঁর বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করার কথা ভাবছেন তিনি।