ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার (Bhopal Gas Tragedy) পর ৩৭ টা বছর কেটে গেল। এখনও ন্যায় বিচার পাননি ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড (UCIL)-এর কীটনাশক প্ল্যান্ট থেকে ফাঁস হওয়া গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্তরা।
মৃত্যু হয়েছিল ১৫,০০০ জনেরও বেশি মানুষের। আরও পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষের জীবন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেড (UCIL)-এর কীটনাশক প্ল্যান্ট থেকে ফাঁস হওয়া মিথাইল আইসোসায়ানেট (Methyl Isocyanate) গ্যাসে। ১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর ও ৩ ডিসেম্বরের মাঝের রাতে ঘটে গিয়েছিল বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প বিপর্যয় - ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা (Bhopal Gas Tragedy)। তারপর, ৩৭ টা বছর কেটে গিয়েছে। যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁরা সুখ-দুঃখের মায়ার বাইরে চলে গিয়েছেন। কিন্তু, যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন, এই ৩৭ টা বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন ন্যায়বিচারের। কিন্তু গত প্রায় চার দশকে মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh) এবং কেন্দ্রের মসনদে বিভিন্ন দলের সরকার গঠন হলেও, তাদের আকাঙ্খা পূর্ণ হয়নি।
এই নিয়েই বুধবার, সমস্ত গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে মার্কিন কর্পোরেশনগুলি যোগসাজশের অভিযোগ আনল, ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিবর্গের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি এনজিও। ভোপাল গ্যাস পিড়িত মহিলা স্টেশনারী শ্রমিক সংঘ (Bhopal Gas Peedit Mahila Stationery Karmchari Sangh), ভোপাল গ্রুপ ফর ইনফরমেশন অ্যান্ড অ্যাকশন (Bhopal Group for Information & Action), ভোপাল গ্যাস পিড়িত মহিলা পুরুষ সংঘর্ষ মোর্চা (Bhopal Gas Peedit Mahila Purush Sangharsh Morcha), চিলড্রেন অ্যাগেইনস্ট ডাও কার্বাইড (Children Against Dow Carbide) - সকলেরই অভিযোগ - কোনও সরকারই আজ পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া কোনও ব্যক্তিবর্গকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়নি এবং কোনও অপরাধী আজ পর্যন্ত এক মিনিটের জন্যও জেলে যায়নি। এই অবস্থায় গোটা বিশ্বের কাছে তাঁদের ৩৭ বছরেও ন্যায়বিচার না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরতে চাইছেন তাঁরা।
এনজিওগুলির আরও অভিযোগ, ওই গ্যাস লিকের ফলে ভোপালের উপকন্ঠে অবস্থিত ওই এলাকার মাটি এবং ভূগর্ভস্থ জলে ব্যাপক দূষণ ছড়িয়েছিল। এই পরিবেশগত ক্ষতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাউ কেমিক্যালের (Dow Chemical) কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করা উচিত ছিল সরকারের। পাশাপাশি, ওই এলাকার হাসপাতালগুলিতে, গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধাও উপলব্ধ নেই। দুর্যোগের পরের সকালে যেমন রোগীরা অসহায় ছিলেন, আজও অবস্থাটা বদলায়নি। উপরন্ত, সরকারের পক্ষ থেকে এই দুর্যোগের স্বাস্থ্যগত প্রভাবের উপর সমস্ত গবেষণা বন্ধ করে দেওয়ায়, ফুসফুস, হৃদপিন্ড, কিডনি, স্নায়ু এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার চিকিৎসাও পান না গ্যাস বিপর্যয়ের সারভাইভাররা।
তবে বিশ্বের এই বৃহত্তম শিল্প বিপর্যয়ের ক্ষতিকারক প্রভাব, এক প্রজন্মেই আটকে নেই। এনজিওগুলির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী, ফাঁস হওয়া গ্যাস একসময় যে ব্যক্তিরা ফুসফুসে টেনে নিয়েছিলেন, গ্যাস সংক্রমণের প্রভাব তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যের উপরও সমানভাবে পড়ে। অনেকটা হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের পর, কয়েক প্রজন্ম অবধি যেমন বিকলাঙ্গ শিশু জন্মাতো, তেমনই। সম্প্রতি এই সমস্ত দাবি দাওয়া নিয়ে মধ্যপ্রদেশ এবং কেন্দ্রের সরকারকে নিশানা করে ৩৭ দিনে ব্যাপী এক দীর্ঘ প্রচারাভিযান চালিয়েছে এনজিওগুলি। সেই প্রচারের নাম ছিল '৩৭ বছর - ৩৭ প্রশ্ন' (37 Years - 37 Questions)।
এই সকল প্রশ্নের জবাবে, মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকারের পদক্ষেপগুলি ভারি অদ্ভূত। সরকারের পক্ষ থেকে বিপর্যয়ের অকুস্থলে ওই বিষাক্ত পরিবেশে একটি একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। সেইসঙ্গে, শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায়, ভোপালের বরকতুল্লাহ ভবনে (কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার) ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ৩৭ তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে, ক্ষতিগ্রস্থদের উদ্দেশ্য়ে একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। রাজ্যপাল মাঙ্গুভাই প্যাটেল (Mangubhai Patel), মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান (Shivraj Singh Chouhan) এবং বিভিন্ন ধর্মের আধ্যাত্মিক নেতারা এই প্রার্থনা সভায় যোগ দেবেন। এনজিওগুলি কিন্তু, এই ধরণের স্মরণ অনুষ্ঠান নয়, সত্যিকারের পদক্ষেপ দেখতে চাইছে সরকারের কাছ থেকে।