
বিহারের রাজনীতি আজ এক নির্ণায়ক মোড়ে দাঁড়িয়ে। বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এ এনডিএ-র বিপুল জয়ের পর আজ ১৯ নভেম্বর রাজ্যের ক্ষমতার নতুন রূপরেখা তৈরি হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আজ রাজ্যপালের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেবেন, যার পরে বর্তমান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাবে এবং নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে। ২০ নভেম্বর গান্ধী ময়দানে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে নীতীশ কুমার দশমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন।
পাটনার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন উত্তাল। আজ এনডিএ-র বিভিন্ন শরিক দলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে, যেখানে নতুন সরকারের রূপরেখা এবং নেতৃত্ব ঠিক করা হবে। প্রথমে বীরচন্দ্র প্যাটেল মার্গে অবস্থিত বিজেপি-র রাজ্য কার্যালয়ে বিজেপি বিধায়ক দলের বৈঠক হবে। এতে দলের ৮৯ জন নবনির্বাচিত বিধায়ক, সম্রাট চৌধুরী, বিজয় সিনহা, রাজ্য সভাপতি দিলীপ জয়সওয়াল সহ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কেশব প্রসাদ মৌর্য (উপ-মুখ্যমন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশ), অর্জুন রাম মেঘওয়াল (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী) এবং সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী) ছাড়াও আরও অনেক নেতা উপস্থিত থাকবেন।
এই বৈঠকে বিধায়ক দলের নেতা, অর্থাৎ বিজেপির পক্ষ থেকে উপ-মুখ্যমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত করা হবে। এর পাশাপাশি মন্ত্রিসভায় দলের কোটা, দপ্তর বণ্টন এবং বিধানসভার স্পিকার পদ নিয়েও আলোচনা হবে। সব মিলিয়ে, বিজেপি আজ তাদের পুরো দল চূড়ান্ত করে ফেলবে।
বিজেপির বৈঠকের পর ১ নম্বর অ্যানে মার্গে অবস্থিত মুখ্যমন্ত্রী আবাসে জেডিইউ বিধায়ক দলের বৈঠক হবে। এই বৈঠকে জেডিইউ-র ৮৫ জন বিধায়ক, নীতীশ কুমার, ললন সিং, সঞ্জয় ঝা, বিজয় চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে নীতীশ কুমারকে জেডিইউ বিধায়ক দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করা। এছাড়া, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সময় জেডিইউ কোন মুখগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করবে, তা নিয়েও আলোচনা হবে। বৈঠকের পর জেডিইউ পুরোপুরিভাবে এনডিএ-র যৌথ বিধায়ক দলের বৈঠকের জন্য প্রস্তুত থাকবে।
দুটি বৈঠকের পর এনডিএ-র যৌথ বিধায়ক দলের বৈঠক হবে। এই বৈঠকে এনডিএ-র সমস্ত ২০২ জন বিধায়ক একসঙ্গে বসবেন। এতে চিরাগ পাসওয়ান (LJP-R), উপেন্দ্র কুশওয়াহা (RLM), সন্তোষ সুমন (HAM), সম্রাট চৌধুরী, বিজয় সিনহা এবং অন্যান্য বিধায়করা উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে নীতীশ কুমারকে এনডিএ-র নেতা নির্বাচিত করা হবে, যার পরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আবার সরকার গঠনের দাবিদার হবেন। এর সাথে এনডিএ তার নতুন সরকারের কাঠামোও আজই চূড়ান্ত করবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও আজ পাটনায় আসবেন। তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী আবাসে গিয়ে নীতীশ কুমারের সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁর উপস্থিতি তিনটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত, উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, দ্বিতীয়ত, স্পিকারের নামে সিলমোহর এবং তৃতীয়ত, মন্ত্রিসভায় দপ্তর বণ্টনে সম্মতি। তাই আজকের রাজনৈতিক চিত্রে অমিত শাহের ভূমিকা অত্যন্ত নির্ণায়ক হবে।
এনডিএ-র যৌথ বিধায়ক দলের বৈঠকের পর নীতীশ কুমার আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খানের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। এরপর তিনি নতুন সরকার গঠনের দাবি পেশ করবেন। ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে ১৯ নভেম্বর বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে। আজ সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
২০ নভেম্বর পাটনার গান্ধী ময়দানে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। নীতীশ কুমার দশমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন, যা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করবে। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপির অনেক সিনিয়র নেতা, সাংসদ, বিধায়ক সহ আরও অনেকে উপস্থিত থাকতে পারেন। শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে, তার জন্য গান্ধী ময়দান ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।