
নয়াদিল্লি। দিল্লির লাল কেল্লার কাছে হওয়া দিল্লি গাড়ি বিস্ফোরণ মামলায় একটি চমকে দেওয়ার মতো ভিডিও সামনে এসেছে। এই ভিডিওতে হামলাকারী উমর উন নবি আত্মঘাতী হামলাকে “শাহাদাত অভিযান” বলে সঠিক প্রমাণের চেষ্টা করছে। এই ভিডিওটি তার ফোনে পাওয়া গেছে, যা সে পুলওয়ামায় নিজের বাড়িতে রেখে এসেছিল। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে, ভিডিওটি বিস্ফোরণের দিনের আশেপাশেই শ্যুট করা হয়েছিল। সংস্থাগুলির মতে, উমরের এই ভিডিও শুধু তার চিন্তাভাবনাই প্রকাশ করে না, বরং এটাও দেখায় যে কীভাবে তাকে আইএসআই-সমর্থিত মডিউল ধীরে ধীরে ব্রেনওয়াশ করেছে। ভিডিও থেকে স্পষ্ট যে সে নিজেকে কোনও “পবিত্র মিশনে” আছে বলে মনে করছিল এবং মৃত্যুকে নিজের গন্তব্য বলে ধরে নিয়েছিল। এই ভিডিওর আসল গুরুত্ব হল এটি সেই মানসিক অবস্থাকে তুলে ধরে যেখানে উমরকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল—এমন এক অবস্থা যেখানে মানুষ নিজেকে “কুরবানির এজেন্ট” হিসেবে দেখতে শুরু করে।
ভিডিওতে উমর ভাঙা ভাঙা ইংরেজি উচ্চারণে, কিন্তু অত্যন্ত দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে আত্মঘাতী হামলাকে “শাহাদাত” বলে বর্ণনা করে। সে বলে, “কোনও বিশেষ জায়গা… কোনও বিশেষ সময়… মৃত্যুর জন্য বেছে নেওয়াই হল শাহাদাত অভিযান।” মনোবিজ্ঞানীদের মতে, কথা বলার এই ভঙ্গি এটাই দেখায় যে উমরকে বিশ্বাস করানো হয়েছিল যে তার মৃত্যু একটি “পবিত্র কাজ”। সিনিয়র সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ রাজীব মেহতা বলেন, উমরের কথায় যে আত্মবিশ্বাস দেখা যায়, তা পুরোপুরি ব্রেনওয়াশিংয়ের ফল। বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করেছেন যে উমর ক্যামেরার দিকে তাকায় না—সে নিজেকে “চিন্তাশীল” দেখানোর চেষ্টা করে, যাতে ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড মনে না হয়। এই কৌশল প্রায়শই কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলি তাদের নিয়োগ করা নতুন সদস্যদের ওপর ব্যবহার করে।
ভিডিওটির সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হল উমর সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকায় না। সে এমনভাবে দেখানোর চেষ্টা করে যেন সে ভাবতে ভাবতে কথা বলছে, যদিও বাস্তবে তার কথাগুলো আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। সিনিয়র সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ রাজীব মেহতার মতে, উমর এমনভাবে কথা বলছিল যেন সে অন্যদেরও এমন কাজ করতে উৎসাহিত করতে চায়। এই কারণেই সংস্থাগুলি এটিকে কট্টর জিহাদি মতাদর্শের স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে দেখছে। তার শারীরিক ভাষা বলে দেয় যে সে পুরোপুরি ব্রেনওয়াশড ছিল। তার বিশ্বাস ছিল যে তার করা “কাজের” প্রশংসা হবে। সে নিজেকে এক বড় “উদ্দেশ্যের” জন্য উৎসর্গকারী হিসেবে মেনে নিয়েছিল। অর্থাৎ, সে শুধু একজন হামলাকারী ছিল না, বরং একটি তৈরি করা “ফিদাইন পণ্য” ছিল।
তদন্তে জানা গেছে যে আইএসআই এবং তার সঙ্গে যুক্ত জঙ্গি মডিউলগুলি অনেক নতুন সদস্যকে এই ধরনের “শাহাদাত ট্রেনিং” দেয়। হাফিজ সঈদের সহযোগী আব্দুল রহমান মক্কি এই বিষয়ে একটি পুরো বইও লিখেছিল, যা জঙ্গিদের কাছে আত্মঘাতী হামলাকে “বৈধ” বলে মনে করায়। উমরের ভিডিওটি সেই চিন্তাভাবনারই সরাসরি উদাহরণ।
ইডি এই মামলায় আল-ফালাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান জাওয়াদ আহমেদ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে। এরই মধ্যে দিল্লির তিনটি বড় আদালত চত্বর—সাকেত, দ্বারকা এবং পাতিয়ালা হাউসে বোমা হামলার হুমকি আসে, যদিও পরে সেগুলিকে গুজব বলে জানানো হয়। দিল্লির স্মৃতিস্তম্ভ, বিশেষ করে কুতুব মিনারের আশেপাশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
উমরের ভিডিওটি দেখায় যে জঙ্গি সংগঠনগুলি কীভাবে যুবকদের মানসিকভাবে ভেঙেচুরে দেয়। “শাহাদাত অভিযান”-এর মতো শব্দ তাদের মস্তিষ্কে এমনভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে মৃত্যুই তাদের কাছে গন্তব্য বলে মনে হয়। দিল্লি বিস্ফোরণ শুধু একটি ঘটনাই নয়, বরং সেইসব বিপজ্জনক চিন্তাভাবনার চরম পরিণতি যা বছরের পর বছর ধরে যুবকদের মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে।