
চিনা পুরুষদের মধ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো দেশের নারীদের সঙ্গে বিয়ের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এই বাড়তে থাকা প্রবণতা দেখে মানব পাচারের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চিনের শি জিনপিং সরকার। যদিও শুরুতে এই বিয়েগুলোকে আন্তঃসাংস্কৃতিক সম্পর্ক হিসেবে দেখা হয়েছিল, পরে জানা গিয়েছে এর পেছনে রয়েছে জটিল ষড়যন্ত্র ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ। বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহের আগে সতর্ক থাকতে দেশের নাগরিকদের প্রতি ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা জারি করেছে চিন সরকার। এ বিষয়ে রবিবার ঢাকায় অবস্থিত চিনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে।
চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই বিজ্ঞপ্তিতে চিনা নাগরিকদের উদ্দেশে বলা হয়েছে যেন তারা ‘বিদেশি স্ত্রীকে পণ্যের মতো কেনার’ মানসিকতা থেকে সরে আসে। তবে এই পরিস্থিতির পেছনে কারণ কী? কেন চিনা পুরুষদের মধ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নারীদের সঙ্গে বিয়ের প্রবণতা বাড়ছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ চিনের দীর্ঘদিনের এক সন্তান নীতি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বেজিং বহু বছর ধরে এই নীতি অনুসরণ করায় এখন দেশে লিঙ্গ অনুপাতে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে, যার ফলে বিদেশি নারীদের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
তবে দেশের জনসংখ্যার গড় বয়স বাড়তে থাকায় চিনের কমিউনিস্ট সরকার এক সন্তান নীতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এখন একাধিক সন্তান নেওয়ার জন্য নাগরিকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। যদিও এর ফলে জন্মহার কিছুটা বেড়েছে, তবুও নারী-পুরুষের অনুপাতের ভারসাম্য আগের মতো আর নেই—তা এখনও বড় একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে রয়ে গেছে।
চিনের অনেক পুরুষ এখন বিয়ের উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে স্ত্রী আনার কথা ভাবছেন। অনেক সময় অর্থের বিনিময়ে কিছু দালাল বা তৃতীয় পক্ষ তাদের জন্য উপযুক্ত জীবনসঙ্গিনী খুঁজে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে মানবপাচারের ভয়ঙ্কর চক্র।প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিনে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন কোটি পুরুষ উপযুক্ত নারী সঙ্গীর অভাবে অবিবাহিত অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এই কারণেই অনেক চিনা পুরুষ এখন স্ত্রী খুঁজতে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বিশেষ করে এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোর পরিবারের মেয়েদের তারা লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছেন। অনেকেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কনে খোঁজার চেষ্টা করছেন।
বাংলাদেশি নারীদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চাওয়া অনেক চিনা পুরুষকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডিং চাংফার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, চিনের গ্রামীণ অঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি পুরুষ এখনও অবিবাহিত। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিয়ের জন্য ৫ থেকে ৬ লক্ষ ইউয়ান পর্যন্ত খরচ করছেন।
অধ্যাপক ডিং চাংফা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, শুধু বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য নয়, অনেক সময় চিনা পুরুষেরা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে নারীদের অর্থের বিনিময়ে কিনে আনছেন। এই প্রবণতা মানবপাচারের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। পাচার কীভাবে ঘটে? সাধারণত বাংলাদেশের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের উন্নত জীবন ও বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফাঁদে ফেলা হয়।
এরপর ওই নারীদের বিয়ের আড়ালে বা অন্য উপায়ে চিনে পাচার করা হয়। যদিও আন্তর্জাতিক প্রতারণামূলক বিবাহের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে, তবুও অভিযোগ উঠেছে যে কিছু দালাল বা এজেন্ট সেই আইনকে উপেক্ষা করে গোপনে এই কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।