
নয়াদিল্লি। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের তদন্তে একটি বড় তথ্য ফাঁস হয়েছে। আল-ফালাহ ইউনিভার্সিটি, যা এতদিন একটি সাধারণ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন সে সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য সামনে এসেছে। পুলিশের গোপন রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ইউনিভার্সিটি একটি গভীর জঙ্গি নেটওয়ার্কের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। এই ইউনিভার্সিটি থেকেই পড়াশোনা করা কুখ্যাত মির্জা শাদাব বেগ, যে ভারতে ২০০৭-০৮ সালের মধ্যে হওয়া একাধিক ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মূলচক্রী ছিল। শাদাব বেগ, যে ২০০৭ সালে ইলেকট্রনিক্সে B.Tech করেছিল, সে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের (IM) একজন গুরুত্বপূর্ণ অপারেটিভ ছিল। তার ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান তাকে IED এবং উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা তৈরিতে সাহায্য করেছিল। তদন্তকারী সংস্থাগুলোর মতে, তার প্রযুক্তিগত জ্ঞান IM-এর জন্য একটি বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছিল।
রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু বেগই নয়, আরও অনেক অভিযুক্ত এই ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। এর ফলে এই সন্দেহ আরও জোরালো হচ্ছে যে, ইউনিভার্সিটিটিকে সন্ত্রাসবাদী নিয়োগ এবং পরিকল্পনার জন্য গোপনে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
বেগ ২০০৮ সালের জয়পুর, আহমেদাবাদ এবং সুরাট বিস্ফোরণে জড়িত ছিল। সে কর্ণাটকের উডুপি থেকে ডেটোনেটর কিনে ভাটকল ভাইদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। দিল্লি পুলিশের মতে, আহমেদাবাদ হামলার আগে সে ১৫ দিন শহরে থেকে এলাকা পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে এবং তিনটি দলকে প্রশিক্ষণ দেয়। ২০০৭ সালের গোরখপুর বিস্ফোরণেও তার নাম উঠে আসে। IM নেটওয়ার্ক ভেঙে যাওয়ার পর সে পালিয়ে যায় এবং শেষবার ২০১৯ সালে তাকে আফগানিস্তানে দেখা গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই সেই বেগ যে আল-ফালাহ ইউনিভার্সিটি থেকে B.Tech ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়াশোনা করে এবং নিজের ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান বোমা বানানোর কাজে লাগায়।
পুলিশের মতে, বেগের আফগানিস্তান যোগসূত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধিকারিকরা এটাও খতিয়ে দেখছেন যে, ২০০০ সালের লালকেল্লা হামলার সঙ্গেও তার কোনো যোগসূত্র ছিল কি না। দিল্লি বিস্ফোরণের একদিন আগে গ্রেফতার হওয়া ডঃ মুজাম্মিল শাকিলও আফগানিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল এবং দুজনেই একই ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছিল। তদন্তকারী সংস্থাগুলো এখন ২০০৭, ২০০৮ এবং সাম্প্রতিক দিল্লি বিস্ফোরণের সমস্ত সূত্র মেলানোর চেষ্টা করছে।
দিল্লি পুলিশের গোপন রিপোর্টে স্পষ্টভাবে লেখা আছে যে, জঙ্গি কার্যকলাপের শিকড় আল-ফালাহ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া ডঃ মুজাম্মিল শাকিল—যাকে দিল্লি বিস্ফোরণের ঠিক একদিন আগে ধরা হয়েছিল—সেও এই ইউনিভার্সিটি থেকেই পড়াশোনা করেছিল এবং আফগানিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা সামনে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মির্জা শাদাব বেগও এখানকার ছাত্র ছিল, যে ২০০৭ সালে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে। এরপর সে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনে (IM) যোগ দেয় এবং বোমা তৈরিতে দক্ষ একজন অপারেটিভ হয়ে ওঠে।
উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বাসিন্দা বেগ বেশ কয়েক বছর ধরে পলাতক। সে ২০০৮ সালে IM নেটওয়ার্ক ফাঁস হওয়ার পর আত্মগোপন করে।
তদন্তকারী সংস্থাগুলোর মতে-
শেষবার তাকে ২০১৯ সালে আফগানিস্তানে দেখা গিয়েছিল এবং তার মাথার ওপর এখনও ১ লক্ষ টাকার পুরস্কার রয়েছে।
ভারতে হওয়া একাধিক বিস্ফোরণের কলকাঠি কি আফগানিস্তানে বসে থাকা কোনো নেটওয়ার্ক নাড়ছিল?
আল-ফালাহ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত দুই বড় সন্দেহভাজনের পর পুলিশের সন্দেহ যে আরও অনেক নাম সামনে আসতে পারে। এই পুরো বিষয়টি আর শুধু দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।