গত রবিবার জম্মু বিমান বন্দরে হয়েছিল ড্রোন হামলা
সম্পুর্ণ নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে ভারত
কীভআবে মিলবে এর সমাধান
লিখলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন
জম্মুর ড্রোন হামলা কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়। জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে যখনই কোনও গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনই এমন একটি হামলা ঘটিয়ে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির পক্ষ থেকে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তের দুই বছর পর, সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে জম্মু ও কাশ্মীরের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলির ১৪ জন নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। শুরু হয়েছিল উপত্যকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরুর প্রক্রিয়া। এই ইতিবাচক দিক থেকে দৃষ্টি ঘোরাবার জন্য এরকম একটি হামলা প্রত্যাশিতই ছিল।
এখন প্রশ্ন হল, জম্মুর ড্রোন হামলাটি কি দারুণ বড় কোনও ঘটনা? বড় প্রভাব পড়তে পারে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতির উপর? এর আগে উপত্যকায় এমন অনেক হামলা হয়েছে যা ছিল ট্রেন্ডসেটর এবং গেমচেঞ্জার হয়ে উঠতে পারত। পুলওয়ামা বা উড়ি হামলার মতো, প্রচলিত হামলার বাইরে এই হাইব্রিড সংঘাতগুলির বৈশিষ্ট্য হল এই ধরণের হামলার ধরণ একটা সময় উত্থিত হয়, ক্রমে তার তীব্রতা বাড়ে আবার তা নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়।
১৯৯০-এর দশকে সফলভাবে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান পরিচালনার পর, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঘাঁটিগুলিতে এবং সরকারি স্থাপনাগুলিতে আত্মঘাতী হামলার কৌশল অবলম্বন করেছিল। এর ফলে একটা সময়, বিভিন্ন নিরাপত্তা স্থাপনাগুলি সুরক্ষিত করতে সেনাবাহিনীকে বিশাল মাপের সদস্য মোতায়েন করতে হয়েছিল। এই ধরনের হামলা প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলেছিল। কিন্তু পরে সেনাবাহিনী সেইসব হামলার প্রভাব হ্রাস করার সমাধান খুঁজে পেয়েছিল। আর তাতেই ধীরে ধীরে কমে আসে এই ধরণের হামলা। তবে, তাই বললে কী আত্মঘাতী আক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে? না। পুলওয়ামার হামলাই তার প্রমাণ।
আফগানিস্তান ও ইরাকে একের পর এক গাড়ি বোমা হামলার পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর পুরোপুরি সমাধা খুঁজে পায়নি। আমি যেটা বলতে চাইছি, তা হল, একটি উদীয়মান প্রযুক্তির বা এমনকী কোনও অপরিশোধিত পুরোনো প্রযুক্তিরও অনেক সময়ই পুরোপুরি রোধ করার উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে তার প্রভাবকে হ্রাস করা যেতে পারে। ড্রোন হামলার হুমকির সমাধানও হতে পারে এটাই। সবেমাত্র আমরা আমাদের দেশে সন্ত্রাসবাদীদের ড্রোন কৌশল প্রত্যক্ষ করেছি। আর এখনই অপারর্শিতার অভিযোগ তুলে অযথা সেনাবাহিনীর দিকে আঙুল তোলা শুরু হয়ে গিয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীরা, গত দশক থেকে ড্রোন বাহিত হুমকির বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রচুর চেষ্টা করছে। পাঞ্জাব এবং জম্মুর কিছু অংশে সীমান্তের ওপার থেকে ছোট মাপের কোয়াড এবং হেক্সা কপ্টারগুলির ব্যবহার করে রসদ ফেলা যখন বাহিনীর নজরে এসেছিল, তখন থেকেই এই ড্রোনগুলি নিয়ে সতর্ক ছিল বাহিনী। মারাত্মক বিস্ফোরক ফেলার জন্য বা আকাশ পথে হামলার জন্য এগুলি ব্যবহার করার আশঙ্কা বাহিনীর আগেই করেছিল। এখন যেহেতু হুমকির প্রকৃতি আরও বেশি স্পষ্ট হয়েছে, তাদের মোকাবেলার জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থাগুলিও ক্রমশ সংশোধন করা হবে।
জম্মুর ঘটনা এবং তার পরবর্তী সময়েও ড্রোন হানার কোনও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল কি? ভারত সরকার গত দু বছরে জম্মু ও কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসবাদীদের ধরাশায়ী করেছে। সরকারের নিরলস পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনের সফল কর্মসূচির ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসবাদীরা এখন জম্মু এবং কাশ্মীরের জনগণের কাছে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। এই হামলা ফের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নে জড়িত থাকার কারণে হাফিজ সইদ এখন কারাগারে। ফলে লস্কর-ই-তৈবা প্রবল চাপে রয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে হারানো জায়গা পিরে পেতে তারা মরিয়া। সম্ভবত ড্রোন হামলার হুমকি তারই এক উদ্ভাবনী উপায়।
শেষ প্রশ্ন হল, বায়ুসেনার ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা কি একরকমের যুদ্ধ?এই প্রশ্নটা এখন এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। বিশেষ করে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জম্মু এবং কাশ্মীরের উন্নয়নশীল অভ্যন্তরীণ গতিবেগ কে রক্ষা করার জন্য। এই বিষয়ে ধূসরতা থাকায় এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যাবে না। এমন নয় যে আমরা পাকিস্তানকে কিছুটা ছাড় দিচ্ছি। আসলে বিশ্ব যে এমন ঘটনাগুলিকে লেবেলিং করার সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে এসেছে, সেটাকেই মান্যতা দিচ্ছি। হয়তো আমাদের হাতেও বাস্তববাদী কোনও প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যা সঠিক সুযোগের অপেক্ষা করছে।
লেখক - অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন, শ্রীনগরের ১৫ কর্পসের প্রাক্তন কমান্ডার, বর্তমানে বিবেকানন্দ আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশন এবং ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ-এর সঙ্গে যুক্ত।