গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার ধর্ষণে গর্ভবতী হয়ে পড়লেও অভিযুক্তের নাম ঠিকানা জানতা না নির্যাতিতা। ফেসবুক আর এক মহিলা এসআই-এর বুদ্ধির জোকরে কীভাবে তাকে ধরল দিল্লি পুলিশ?
গত ৩০ জুলাই দিল্লির এক হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছিল দিল্লির দাবরি থানায়। অভিযোগ ছিল, গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়েছে একটি মেয়ে। ঘটনার তদন্তে নেমে অবশ্য অকূল পাথারে পড়েছিল দিল্লি পুলিশ। অভিযুক্তের নাম আকাশ, এছাড়া তাদের কাছে আর কোনও তথ্য ছিল না। কারণ আকাশের কোন ফোন নম্বর, ঠিকানা কিছুই জানত না ১৬ বছরের মেয়েটি। ছেলেটি কোথায় কাজ করে, তার পরিচয়, বাবা-মা কোথায় থাকে - কিছুই জানত না সে। তা সত্ত্বেও ওই অভিযুক্তকে শেষ পর্যন্ত পাকড়ালো দিল্লি পুলিশ, শুধুমাত্র সাবইন্সপেক্টর প্রিয়াঙ্কা সাইনির বুদ্ধিমত্তা এবং ফেসবুকের জোরে।
সাব-ইন্সপেক্টর প্রিয়াঙ্কা সাইনিই এই তদন্তের নেতৃত্বে ছিলেন। ওই নাবালিকা, অভিযুক্ত আকাশের নাম-ঠিকানা বা পরিবর কিছু না জানাতে পারায়, কার্যত খড়ের গাদায় সূঁচ খুঁজতে নেমেছিলেন তিনি ও তাঁর দল। এই অবস্থায় প্রিয়াঙ্কা সহায়তা নিয়েছিলেন ফেসবুকের। প্রথমেই ফেসবুকে একটি প্রোফাইল খুলেছিলেন তিনি। তারপর লোকেশন হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন দিল্লি। আকাশ নামের একশোরও বেশি ফেসবুক প্রোফাইল বেরিয়েছিল দিল্লি এলাকায়। প্রিয়াঙ্কা একের পর এক আকাশ নামের ব্যক্তিদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে শুরু করেছিলেন। সেইসঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে এই আকাশদের অনেককেই টেক্সটও করেছিলেন।
বেশিরভাগ, 'আকাশ' ই সাবইন্সপেক্টরের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট বা টেক্সট-এর কোনও উত্তর দেয়নি। সংবাদসংস্থা এএআই-কে প্রিয়াঙ্কা সাইনি জানিয়েছেন শুধুমাত্র অভিযুক্ত আকাশই তাঁকে উত্তর দিয়েছিল। কিন্তু, কীকরে বোঝা গেল এই আকাশই দিল্লি পুলিশের কাঙ্খিত আকাশ? প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, আকাশের প্রোফাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে পুলিশ তার সঙ্গে ধর্ষিতা ওই নাবালিকা একটি ছবি দেখতে পেয়েছিল। সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিতাকে ওই ছবিটি দেখিয়েছিল, সেও আকাশকে সনাক্ত করে।
এরপরই অভিযুক্তের সঙ্গে নম্বর বিনিময় করেন প্রিয়াঙ্কা। বিভিন্ন কথা বলে তাকে প্রলুব্ধ করেন। এরপর, শ্রী মাতা মন্দিরের কাছে এক জায়গায় দুজনে দেখা করবেন বলে ঠিক করেন। সোমবার, 'ফেসবুকে প্রেয়সী'র সঙ্গে দেখা করতে আসতেই আকাশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্তের পুরো নাম আকাশ জৈন। সে অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার ভাড়াবাড়ি পরিবর্তন করত। বস্তুত তার কোনও স্থায়ী ঠিকানাই নেই। কেন সে বারবার ঠিকানা বদল করত, এই ঘটনার মতো আরও কোনও ঘটনা সে আগে ঘটিয়েছে কিনা, সেইসব দিকগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।