সারোগেসির নামে প্রতারণা! নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হল পাচার হওয়া শিশু!

Published : Jul 28, 2025, 02:49 PM IST
সারোগেসির নামে প্রতারণা! নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হল পাচার হওয়া শিশু!

সংক্ষিপ্ত

তাদের দেওয়া বাচ্চাটি তাদের নিজের ছিল না। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে বাচ্চাটি সারোগেসির মাধ্যমে জন্মায়নি, বরং আসামের একটি দরিদ্র পরিবার থেকে কিনে এনে সারোগেসির নামে এই দম্পতিকে দেওয়া হয়েছিল।

২০২৪ সালের জুন মাসে, হায়দরাবাদের এক দম্পতি তাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের খবর পেলেন। "আপনারা মা-বাবা হয়েছেন।" সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান লাভের স্বপ্ন দেখে তারা অনেক মাস অপেক্ষা করেছিলেন। প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন। তাদের মতে, এটি ছিল তাদের স্বপ্নপূরণ। কিন্তু, এই স্বপ্ন কিছুদিনের মধ্যেই চরম বেদনায় পরিণত হয়।

তাদের দেওয়া বাচ্চাটি জৈবিকভাবে তাদের ছিল না। পরবর্তীতে ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে বাচ্চাটি সারোগেসির মাধ্যমে জন্মায়নি, বরং আসামের একটি দরিদ্র পরিবার থেকে কিনে এনে সারোগেসির নামে এই দম্পতিকে দেওয়া হয়েছিল।

সারোগেসির নামে প্রতারণা

২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এই দম্পতি বিখ্যাত প্রজনন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অতলুরি নম্রতার কাছে যান। তিনি ইউনিভার্সাল সৃষ্টি ফার্টিলিটি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা এবং এই ক্ষেত্রের একজন নামকরা ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ডাঃ নম্রতা এই দম্পতিকে আশ্বস্ত করেন যে সারোগেসির মাধ্যমে বাচ্চাটি সম্পূর্ণরূপে তাদেরই হবে।

দম্পতি চিকিৎসা, পরামর্শ, সারোগেট মায়ের দেখাশোনা এবং প্রসবের খরচ বাবদ লাখ লাখ টাকা দেন। তাদের বলা হয় যে বাচ্চাটি বিশাখাপত্তনমে জন্মাবে। কিছু মাস পরে তাদের একটি বাচ্চা আসে। কিন্তু তারা জানতেন না যে এই বাচ্চাটি শুরু থেকেই তাদের ছিল না।

ডিএনএ পরীক্ষায় ফাঁস হলো সত্যিটা

ক্লিনিক বাচ্চাটির ডিএনএ সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে গড়িমসি করে। ফলে দম্পতির সন্দেহ হয় এবং তারা গোপনে নিজেরাই ডিএনএ পরীক্ষা করান। পরীক্ষার ফলাফল ছিল চাঞ্চল্যকর। বাচ্চাটির সাথে তাদের কোন জৈবিক সম্পর্ক ছিল না। যখন তারা বিষয়টি ডাক্তারদের কাছে তুলে ধরেন, তখন তাদের ফোন ধরা হয়নি। উল্টো হুমকি আসতে শুরু করে। ফলে তারা সরাসরি গোপালপুরম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

তদন্তে বেরিয়ে আসে বড় শিশু পাচার চক্র

পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে যে ডাঃ নম্রতা একটি বড় শিশু পাচার চক্র গড়ে তুলেছিলেন। তিনি শুধু চিকিৎসা করতেন না, বরং ভুয়া সারোগেসির নামে নবজাতক শিশুদের অবৈধ বিক্রির ব্যবসা করতেন।

এই মামলায় অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ডাঃ নম্রতার আইনজীবী ছেলে, গান্ধী হাসপাতালের একজন ডাক্তার, এজেন্ট, ক্লিনিক কর্মী এবং বাচ্চা বিক্রেতা আসামের দম্পতি মোহাম্মদ আলী ও নাসরিন বেগম। এই দম্পতি মাত্র ৯০,০০০ টাকায় বাচ্চাটি বিক্রি করেছিল বলে জানা গেছে।

লাইসেন্স বাতিল হলেও চলছিল অবৈধ ক্লিনিক

২০২১ সালেই ডাঃ নম্রতার ক্লিনিকের মেডিকেল লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছিল। তবুও তিনি হায়দ্রাবাদ, বিজয়ওয়াড়া এবং বিশাখাপত্তনমে তার কেন্দ্র চালাচ্ছিলেন। তদন্তে দেখা গেছে যে তার ক্লিনিকে এখনও লিঙ্গ নির্ণয়, অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি লাইসেন্স ছাড়াই চলছিল। রবিবার তল্লাশি চালিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা দেখতে পান যে রোগীদের পেছনের দরজা দিয়ে ভিতরে আনা হচ্ছিল এবং ক্লিনিকটি ভুয়াভাবে পরিচালিত হচ্ছিল।

এটা সারোগেসি নয়, এটা শিশু পাচার: পুলিশের স্পষ্ট বক্তব্য

ডিসিপি রশ্মি পেরুমাল বলেন, "এটি সারোগেসি মামলা নয়। এটি শিশু পাচারের মামলা। এই দম্পতিকে সন্তান লাভের আশায় প্রতারিত করা হয়েছে। আমাদের ধারণা, এমন আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে।" পুলিশ এখন ক্লিনিকের তিনটি শাখার রেকর্ড পরীক্ষা করছে।

আইনের সীমাবদ্ধতা এবং ভাঙা ব্যবস্থা

২০২১ সালে ভারত সরকার বাণিজ্যিক সারোগেসি নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে শুধুমাত্র পরোপকারী সারোগেসিই বৈধ। অর্থাৎ সারোগেট মাকে কোন আর্থিক সুবিধা না দিয়ে শুধুমাত্র চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু, এই আইনের সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই অবৈধভাবে এই ব্যবসা শুরু করেছে।

বলির পাঁঠা নিষ্পাপ দম্পতি

এই সব ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেইসব দম্পতি যারা সন্তান লাভের আশায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রতারিত হয়। এই ঘটনার হায়দ্রাবাদের দম্পতি, যারা তাদের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আনন্দিত হয়েছিলেন, আজ আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের প্রচণ্ড মানসিক ধাক্কা লেগেছে।

PREV
Read more Articles on
click me!

Recommended Stories

Indian Railways: এবার তৎকাল টিকিট বুকিংয়ের নিয়মে বড়সড় রদবদল, জানিয়ে দিল রেল
রজস্বলা নাবালিকাকে একটা স্যানিটারি ন্যাপকিন দিতে ব্যর্থ ইন্ডিগো, বাবার কাতর আর্জির ভিডিয়ো ভাইরাল