
Indus Water Treaty: গত ২২ এপ্রিল জম্মু কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে স্থগিত ভারতের সিন্ধু জলচুক্তি। এই চুক্তি স্থগিত রাখার ফলে ভারতের কী কী সুবিধা হচ্ছে তা দেশবাসীকে জানাতে একটি কৌশলগত পদক্ষেপে নিয়েছে সরকার।
জানা গিয়েছে, কেন্দ্র সরকার ভারত-পাকিস্তান সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার পিছনের উদ্দেশ্য দেশের জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি জনসচেতনতা কর্মসূচি চালু করবে। এই উদ্যোগটির লক্ষ্য হল, কয়েক দশকের পুরনো চুক্তি স্থগিতের ফলে ভারতের কী সুবিধা হচ্ছে, সে সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই প্রচারাভিযানের নেতৃত্ব দেবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। যারা উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে বসবাসকারী জনগণ, বিশেষ করে তাঁদের কাছে সিন্ধু জল চুক্তি সংক্রান্ত কৌশলগত পদক্ষেপগুলি সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করবেন।
জানা গিয়েছে, এই উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য হল- একটি দীর্ঘমেয়াদী জল ব্যবস্থাপনা কৌশল তৈরি করা। যার মাধ্যমে ভারত তার রাজ্যগুলির মধ্যে সিন্ধু নদের জল আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবে। সরকার জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং রাজস্থান থেকে সিন্ধু নদের জল পরিবহনের সুবিধার্থে পরিকল্পনা করছে।
এই চারটি রাজ্যের ১৩টি বিদ্যমান খাল ব্যবস্থা সংযুক্ত করা হয়েছে। যা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে জলের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করবে না, বরং ভারত তার উদ্বৃত্ত জলও নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। ভারতের জল ব্যবস্থাপনা কৌশলে নতুন দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হল চেনাব নদীকে রাভি, বিয়াস এবং সুতলেজ নদী ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করতে একটি ১৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল নির্মাণ করা।
এছাড়াও, কেন্দ্র রাজস্থানের গঙ্গা ক্যানালের সঙ্গে সিন্ধু নদের জল সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। এই প্রকল্পটি আগামী তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি দেশের জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিন্ধু অববাহিকা মূলত ইরাবতী (রাভি), বিতস্তা (ঝিলাম) এবং সিন্ধু নদ দ্বারা পুষ্ট, যার সবকটিই সিন্ধু জল চুক্তি অনুসারে পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। তবে এই তিনটি নদী পাকিস্তানে প্রবেশ করার আগে ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত শতদ্রু (সুতলেজ), বিপাশা (বিয়াস) এবং চন্দ্রভাগা (চেনাব) - এই তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদীর ওপর অধিকার রাখে।
সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী, ভারত শতদ্রু (সুতলেজ), বিপাশা (বিয়াস) এবং ইরাবতী (রাভি) নদীর জল ব্যবহার করে। অন্যদিকে, পাকিস্তান চন্দ্রভাগা (চেনাব), বিতস্তা (ঝিলাম) এবং সিন্ধু নদের জল পায়। যদিও ভারত উজানের দেশ হওয়ায় প্রযুক্তিগতভাবে ছয়টি নদীর জলের ওপরই তার অধিকার রয়েছে, তবে এই চুক্তি পাকিস্তানকে 'পশ্চিমা নদীগুলির' জলপ্রবাহের অধিকার দিয়েছে।
১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত এই সিন্ধু জল চুক্তি ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি যুদ্ধের পরেও টিকে ছিল। তবে, চলতি বছরের ২২ এপ্রিলের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর, যেখানে ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হয়েছেন। তারপরই ভারত কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে এই চুক্তি স্থগিত রাখাও অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে আপাতত সিন্ধু চুক্তি স্থগিত হওয়ায় জল সঙ্কটে পাকিস্তান। যা নিয়ে ভারতের কাছে একের পর এক চিঠি পাঠিয়ে যাচ্ছে ইসলামাবাদ।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।