
করোনা অতিমারির সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) আগেই জানিয়ে দিয়েছিল যে, এখনই শেষ হয়ে যাবে না করোনা মহামারী। কিছু বছর পর ফের তা থাবা বসাতে পারে। আর সেই আশঙ্কা সত্যি করেই ভারতে আবার হু-হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
দেশজুড়ে এখনও পর্যন্ত করোনায় ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সবথেকে বেশি করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে মহারাষ্ট্র ও তামিলনাড়ুতে। তারপরেই আছে রাজধানী দিল্লি এবং গুজরাট।
বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে প্রকাশিত কোভিড বুলেটিনে জানা গিয়েছে, এই মুহুর্তে দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৩০২ জন। এর মধ্যে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ২৭৬।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গুজরাট এবং দিল্লি উভয় রাজ্যেই সর্বাধিক ৬৪টি করে নতুন কোভিড কেস রিপোর্ট করা হয়েছে, যা দৈনিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। এর পরেই রয়েছে উত্তর প্রদেশ ৬৩টি নতুন কেস এবং পশ্চিমবঙ্গ ৬০টি নতুন কেস ধরা পড়েছে। ফলে এই রাজ্যগুলিতে সংক্রমণের হার সবথেকে বেশি।
সক্রিয় কেসের সংখ্যায় কেরল এখনও শীর্ষে রয়েছে, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। কেরালার পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র ৫১০টি সক্রিয় কোভিড কেস। গুজরাট ৪৬১টি সক্রিয় কেস নিয়ে, এবং দিল্লি ৪৫৭টি সক্রিয় কেস নিয়ে। এই রাজ্যগুলিতে সক্রিয় কেসের উচ্চ সংখ্যা চিকিৎসা পরিকাঠামো এবং জনস্বাস্থ্যের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসক মহলের।
একটি ইতিবাচক দিক হল, অরুণাচল প্রদেশ এখনও পর্যন্ত কোনও কোভিড কেস রিপোর্ট করেনি, যা এই রাজ্যের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক খবর।সামগ্রিকভাবে, দেশজুড়ে কোভিড পরিস্থিতি এখনও পর্যবেক্ষণের অধীন। নাগরিকদের সতর্ক থাকতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্স দেওয়া হয়েছে।
কলকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. অরিন্দম বিশ্বাস ক্রমবর্ধমান কোভিড কেস নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন যে, "কোভিড আমাদের সঙ্গেই থাকবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেসের সংখ্যা বাড়বে এবং কমবে, তবে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর বিস্তার রোধ করা। মানুষকে অবশ্যই সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে এবং সুরক্ষিত থাকতে মাস্ক পরতে হবে।"
এই বিষয়ে কেরলের স্বাস্থ্য দফতর সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশিকা জারি করেছে। এই নির্দেশিকাগুলির লক্ষ্য হল, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিশ্চিত করা এবং সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা।
কোভিড-১৯ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো শ্বাসযন্ত্রের রোগের চিকিৎসার প্রস্তুতি মূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মক ড্রিল পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে হাসপাতালগুলির জরুরি অবস্থা মোকাবিলার সক্ষমতা যাচাই করা হবে। হাসপাতালগুলিকে কোভিড-১৯ এবং ফ্লু-এর মতো লক্ষণযুক্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সংশোধিত এবিসি গাইডলাইনস ০৩ (Revised ABC Guidelines 03) অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশিকাগুলি ২০২৩ সালের জুনে জারি করা হয়েছিল। এর লক্ষ্য হল, রোগীদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
কোভিড-১৯ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থতা এড়াতে কিছু লক্ষণ সম্পর্কে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন- তন্দ্রাচ্ছন্নতা (Somnolence): শিশু অস্বাভাবিকভাবে ঘুমাচ্ছে বা জাগাতে কষ্ট হচ্ছে। তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী জ্বর (High persistent fever): উচ্চ তাপমাত্রা যা সহজে কমছে না। খাওয়ার অসুবিধা (Feeding difficulties): শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ বা খাবার খেতে পারছে না। খিঁচুনি (Convulsions): শরীরের অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি। শ্বাসকষ্ট (Respiratory distress): দ্রুত শ্বাস নেওয়া, বুকের খাঁচা ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।