
ভারতের পারমাণবিক শক্তি: গত এক দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। কোটি কোটি পরিবারে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের পাশাপাশি প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করেছে। কিন্তু ভারতের অর্জন এখানেই থেমে থাকেনি। গত এক দশকে পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে, পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তি, উন্নত পারমাণবিক চুল্লি এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে পরিষ্কার এবং স্বনির্ভর শক্তির ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করেছে। নিজের শক্তির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পারমাণবিক শক্তির দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে ভারত।
গত এক দশকে ভারতের অগ্রগতি
২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতের পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে ৪,৭৮০ মেগাওয়াট (MW) থাকা পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা ২০২৪ সালে ৮,১৮০ MW-এ পৌঁছেছে। অর্থাৎ, ভারত তার শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ করেছে। এই বৃদ্ধি কেবল শক্তি উৎপাদনে অগ্রগতিকেই নয়, ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা পূরণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
থোরিয়াম - ভারতের শক্তির ভবিষ্যৎ
বিশ্বের ২১ শতাংশ থোরিয়ামের মজুদ ভারতে রয়েছে। তাই, ভবিষ্যতের পারমাণবিক শক্তি প্রযুক্তির দিক থেকে ভারত একটি সম্পদশালী দেশ। থোরিয়াম ভিত্তিক পারমাণবিক চুল্লির বিকাশ ভারতের পারমাণবিক শক্তি নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রযুক্তি কেবল শক্তি সুরক্ষাই নিশ্চিত করবে না, পরিবেশ বান্ধব এবং টেকসই শক্তির উৎসও সরবরাহ করবে। ভারতের বিশাল থোরিয়াম মজুদ দেশের ভবিষ্যতের শক্তির চাহিদা মেটাতে পারমাণবিক শক্তি প্রযুক্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
ক্ষুদ্র মডিউলার চুল্লি (SMRs):
ক্ষুদ্র মডিউলার চুল্লি (SMRs) পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রে এক বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এই চুল্লিগুলি ছোট, নিরাপদ এবং নমনীয়। অর্থাৎ, দূরবর্তী এবং গ্রামীণ এলাকায়ও এগুলি স্থাপন করা সম্ভব। ২০২৫-২৬ কেন্দ্রীয় বাজেটে SMR-এর বিকাশের জন্য ২০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০৩৩ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫টি দেশীয় SMR ডিজাইন এবং পরিচালনা করাই এর লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জন করলে ভারত তার শক্তির চাহিদা পূরণের দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে।
বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
ভারত এবং ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে, মহারাষ্ট্রের জাইটাপুরে বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১০ গিগাওয়াট (GW) বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, যা ভারতের শক্তির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রকল্প কেবল শক্তি উৎপাদনই বাড়াবে না, কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে। এটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক চুল্লি এবং আগামী কয়েক দশক ধরে ভারতের শক্তির চাহিদা মেটাবে।
পারমাণবিক ফিউশন: ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা
পারমাণবিক ফিউশন হল এমন একটি প্রযুক্তি যা সীমাহীন এবং পরিষ্কার শক্তি সরবরাহ করতে পারে। আন্তর্জাতিক তাপ-পারমাণবিক পরীক্ষামূলক চুল্লি (ITER) প্রকল্পে ভারত একজন স্থায়ী সদস্য এবং এর ৯% ব্যয় বহন করে। ITER প্রকল্পে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী শক্তি বিপ্লবে তার ভূমিকা প্রদর্শন করার পাশাপাশি পারমাণবিক ফিউশন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতকে অগ্রসর করে তুলবে।
গত এক দশকে পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতি কেবল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যই নয়, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং শক্তি সুরক্ষার জন্যও একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করবে। থোরিয়ামের মতো সম্পদের ব্যবহার, SMR-এর বিকাশ, জাইটাপুরের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প এবং ITER-এর মতো আন্তর্জাতিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ ভারতকে পরিষ্কার এবং স্বনির্ভর শক্তির ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
গত এক দশকে, ভারতের পারমাণবিক শক্তির যাত্রা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ। সঠিক নীতি, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভারত তার শক্তির লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।