বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক মানেই কি ধর্ষণ? জেনে নিন আইন
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার পর সেই প্রতিশ্রুতি পালন না করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তরুণী বা যুবতী ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে তার আগে আইন জেনে নেওয়া ভালো।
বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৯ ধারা অনুসারে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোনও পুরুষ যদি একজন মহিলার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার পর সেই প্রতিশ্রুতি পালন না করেন, তাহলে সেই মহিলার সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হলেও সেই পুরুষকে ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পর যদি বিয়ে না হয়, তাহলে সব ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট পুরুষকে ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।
প্রেমিকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে বিপাকে এক মহিলা
এক মহিলার অভিযোগ, ২০১৭ সালে কল সেন্টারে কাজ করার সময় ফোনে কথা বলার সূত্রে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। তাঁরা দেখা করেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাঁদের শারীরিক সম্পর্ক হয়। এখন সেই প্রেমিক বিয়ে না করে হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু যৌথ সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক হওয়ায় ওই মহিলার অভিযোগ খারিজ করে দেয় দিল্লি হাইকোর্ট। এরপর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংও এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা মানেই ধর্ষণ নয়, রায় সুপ্রিম কোর্টের
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং বলেছেন, যৌথ সম্মতিতে হওয়া কোনও শারীরিক সম্পর্কের পর সংশ্লিষ্ট পুরুষ ও মহিলার বিয়ে না হয়, তাহলে ওই পুরুষকে অপরাধী বলা যাবে না।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে মহিলা গর্ভবতী হয়ে পড়লেও সবসময় অপরাধ নয়!
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জেরে এক মহিলা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এই মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছয়। এ বছরের অক্টোবরে এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সি টি রবিকুমার ও বিচারপতি রাজেশ বিন্দালন বলেন, এই পুরুষ ও মহিলার মধ্যে একাধিকবার যৌথ সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। তাঁরা একসঙ্গে অনেকদিন থেকেছেন। ফলে এই ঘটনাকে ধর্ষণ বলা যাবে না।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলেই ধর্ষণের মামলা দায়ের করা যায়
২০১৩ সালে এক সমীক্ষায় জানা যায় দিল্লির জেলা আদালতে যত ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়, তার এক চতুর্থাংশই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মহিলার সম্মতির উপর জোর দিচ্ছে আদালত
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট, কোনও পুরুষ ও মহিলা যদি একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ওই মহিলার সম্মতি থাকে, তাহলে এই ঘটনাকে ধর্ষণ বলা যাবে না।
কোনও মহিলাকে ভয় দেখিয়ে, নেশা করিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা যায়
কোনও মহিলাকে যদি মাদক বা মদ খাইয়ে, ভয় দেখিয়ে, ব্ল্যাকমেল করে, জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে কোনও পুরুষ, তাহলে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা যায়।
চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলেও ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা যায়
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চাকরি পাইয়ে দেওয়া, পদোন্নতির ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও মহিলাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন পুরুষরা। এই প্রতিশ্রুতি পালন না করলে সংশ্লিষ্ট পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা যায়।
যে কোনও প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মহিলার সম্মতি কীভাবে প্রমাণ করা যাবে?
একজন মহিলা অনেক সময় পরিস্থিতির চাপে কোনও পুরুষের প্রতিশ্রুতি অনুসারে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হন। সেক্ষেত্রে এই মহিলার সম্মতির বিষয়টি কীভাবে প্রমাণ করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।