পুলিশের উপস্খিতিতেই মুসলিম ব্যক্তিকে মারধর করল বজরং দল। ভিডিও ভাইরাল হতেই চাপে কানপুর পুলিশ।
জোর করে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ ছিল। আর তার জেরেই এক মুসলিম ব্যক্তিকে প্রকাশ্য রাস্তায় মারধর করল বজরং দলের সদস্যরা। মারতে মারতে তাকে দিয়ে জোর করে বলানো হল 'জয় শ্রীরাম'-ও। তার কিশোরী মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে বজরং দলের রোষের হাত থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করলেও, তাতে কাজ হয়নি। এমনকী, পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীনও ওই ব্যক্তিকে মারধর করেছে বজরঙ্গ দলের সদস্যরা, এমনটাই অভিযোগ। ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার, অর্থাৎ ১১ অগাস্ট, কানপুরের বরুণ বিহার এলাকায়। অভিযুক্ত ওই মুসলিম ব্যক্তির নাম আফতার আহমেদ। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আফতারের ছোট মেয়েকে কাঁদতে কাঁদতে তার বাবাকে আঁকড়ে ধরে আছে। সে বারবার বজরঙ্গ দলের সদস্যদের অনুরোধ করছে তার বাবাকে না মারার জন্য। কিন্তু, তাতে মন গলেনি হামলাকারীদের। মারতে মারতে আফতারকে দিয়ে তারা জয় শ্রীরাম স্লোগান দিইয়েছে। পুলিশ ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এমনকী পুলিশের হাতে আফতারকে তুলে দেওয়ার পরও, তার গায়ে হাত তোলা হলেও, পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
ঘটনার সূত্রপাত আফতারের পাড়ার এক হিন্দু মহিলার অভিযোগের থেকে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন আফতার এবং তার পরিবার, তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য চাপ দিয়েছিলেন। এমনকী, তার বিনিময়ে ২০,০০০ টাকাও দিতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেও কোনও লাভ না পেয়ে তিনি বজরং দলের জেলা সংগঠক দিলীপ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এরপরই, বুধবার তার বাড়িতে হানা দিয়েছিল বজরং দল।
দিলীপ সিং বলেন, "দুই দিন আগে আমরা পুলিশের কাছে ধর্ম পরিবর্তনের অভিযোগ দায়ের করেছিলাম কিন্তু তারা এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যেহেতু পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি, তাই আজ আমরা একটি ব্যবস্থা নিয়েছি।"
আরও পড়ুন - ভারতের প্রথম মহাকাশ পর্যটক হতে চলেছেন কেরলের এই ব্যবসায়ী, খরচ করেছেন ১.৮ কোটি টাকা
আরও পড়ুন - Nirbhay Cruise Missile - সফল দেশি ইঞ্জিন, তাও মাঝপথে পড়ে গেল ডিআইডিওর ক্ষেপণাস্ত্র
আফতারের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বজরং দলের সদস্যরা তাদের বাড়িতে জোর করে ঢুকে আফতারকে টেনে হিচড়ে রাস্তায় বের করে নিয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় হাটিয়ে নিয়ে যেতে যেতে তাকে মারধর করে। আফতার পরিবারের আরও অভিযোগ, বজরং দলের সদস্যরা তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে। ওই হিন্দু মহিলার অভিযোগ 'সম্পূর্ণ মিথ্যা' বলেই দাবি করেছেন তারা। তাদের দাবি পুলিশ তদন্ত করে তার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মনে করেছে বলেই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আফতারের পরিবারের এক সদস্যের অভিযোগ, ওই মহিলা আসলে তাদের সম্পত্তি দখলের লক্ষ্যেই তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
এদিকে, আফতারের লাঞ্ছনার ভিডিওটি ভাইরাল হতেই চাপে পড়েছে কানপুর পুলিশ। জনসম্মুখে এবং পুলিশের উপস্থিতিতে, কীভাবে তাকে মারধর করল বজরং দল, সেই প্রশ্ন উঠছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছেতারা মামলাটির তদন্ত করছে এবং হামলার ফুটেজ পরীক্ষা করছে। দক্ষিণ কানপুরের ডিসিপি রবীনা ত্যাগী জানিয়েছেন, কয়েকজনের নামে এবং কিছু অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।