একটা সময় ভারতীয় রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে অধিষ্ঠান করেছেন অটল বিহারী বাজপায়ী, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, জহরলাল নেহেরুর মতন বাগ্মীরা। কিন্তু, বর্তামান সময়ের রাজনীতিকদের নিয়ে এই বিশেষণগুলি এখন বিতর্কে ভরা। এই তরজা এতটাই যে অনেকের অভিযোগ রাজনীতি পরিণত হয়েছে নীতি নৈতিকতাবিহীন একটা ব্যাবস্থায়, যার অপরিসীম ক্ষমতার মোহে নিত্যদিন 'আয়ারাম-গয়ারাম' দের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। তাদের ন্যূনতম বিবেকের তাড়না নেই নির্দিষ্ট একটি দলের টিকিতে জিতে এসে, পদত্যাগ না করে অন্য একটি দলে যোগদান করার ক্ষেত্রে।
এই নীতিহীন সুবিধাবাদী মানসিকতা থেকে কি জটিল আকার ধারণ করেছে কর্ণাটকের রাজনৈতিক সঙ্কট? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে । মানুষের ভোটে জিতে আসা কর্ণাটক সরকাররের বিদায় ঘণ্টা বেজে গিয়েছে মাত্র দেড় বছরের মধ্যে। যদিও ২২ তারিখ আস্থা ভোটে নামবে কুমারস্বামীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকার। কিন্তু তাদের ভবিতব্য ইতিমধ্যেই শাসক পক্ষের বিধায়কদের পদত্যাগে রচিত হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক বৃত্তে এই মুহূর্তে একটি মাত্র প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে - আস্থা ভোটে জোট সরকারের পতন হলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে, না নতুন কোন সরকার কর্ণাটকের শাসন ভার সামলাবে?
ঘটনাপ্রবাহে একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট- এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে জোট সরকারের বিন্দুমাত্র বিশ্বাসযোগ্যতা অবশিষ্ট নেই মানুষের মনে। যেনতেন প্রকারেণ সরকার টিকিয়ে রাখার মরিয়া প্রচেষ্টা বা অপচেষ্টা আরও হাস্যকর করে তুলেছে পুরো বিষয়টিকে।
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচন কংগ্রেস, জে ডি এস এবং বিজেপি আলাদা আলাদা ভাবে লড়াই করে। ফল ঘোষণার পরে দেখা যায়, ম্যাজিক ফিগার বা সরকার বানানোর মত আসন না পেলেও বৃহত্তম দল রূপে আত্মপ্রকাশ করে বিজেপি। এবং তাঁর ফল স্বরূপ রাজ্যপাল বৃহত্তম দল হিসেবে বিজেপির পরিষদীয় দলনেতাকে আমন্ত্রণ জানায় সরকার গঠনের জন্য। সংখ্যালঘু সরকার তৈরি হলে তাদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে আস্থা ভোটে জিতে আসতে হত। এরকম অবস্থায় কংগ্রেস এবং জে ডি এসের তরফ থেকে দাবি তোলা হয় তারা জোটবদ্ধ ভাবে সরকার গঠন করতে রাজি। তারা পাল্টা রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠায়।
শুধু বিধানসভার ফ্লোরে দাঁড়িয়েই নয়, রাজ্যপালের ১৫ দিনের মধ্যে আস্থা ভোটে জিতে আসার নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জোটের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও করা সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে । ১৮-০৫-২০১৮ র শুনানিতে রাজ্যপালের ১৫ দিনের মধ্যে আস্থা ভোটে জিতে আসার নির্দেশ বাতিল ঘোষণা করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সেই মামলায় কংগ্রেসের হয়ে সওয়াল করেন কপিল সিব্বল এবং অভিষেক মনু সিংভি। বিজেপির হয়ে আইনি লড়াই লড়েন মুকুল রোহতগি। সেই মামলার রায়ের ফলে আস্থা ভোটের পরীক্ষা না দিয়েই পতন ঘটে বিএস ইয়েদুরাপ্পার বিজেপি সরকারের। নগণ্য সংখ্যক আসন জিতেও কংগ্রেসের সমর্থনে মসনদে বসেন কুমারস্বামী।
রাজনীতির জটিল কুটিল চালে মাত্র দেড় বছরের মাথায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে পরিস্থিতির। নিখুঁত চালে বাজিমাতের খোয়াব দেখছেন ইয়েদুরাপ্পা। সেদিন সরকার বাঁচানোর মরিয়া প্রচেষ্টায় বিজেপি নেতাদের যা ভাষ্য ছিল, হুবহু একই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে শিবকুমারদের গলায়। তবে পরিশেষে একটাই কথা বলার, সবই হচ্ছে শুধু রাজনীতির মারপ্যাচে আর রাজধর্ম পালন করা হয়ে উঠছে না মন্ত্রীমশাইদের!