রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান কেরলের অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘প্রচণ্ড উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এও জানিয়েছেন যে, মন্ত্রীর বিবৃতিগুলি জাতীয় ঐক্যের উপর ‘ক্ষতিকর প্রভাব' ফেলতে পারে।
কেরলের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে ব্যাপক ডামাডোল। রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে, তিনি অর্থমন্ত্রী কে এন বালাগোপালের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন এবং মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর দ্রুত অপসারণ চান।
বর্তমানে কেরলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের বিষয়ে সৃষ্টি হওয়া দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খানের নাম সরাসরি না নিয়ে অর্থমন্ত্রী কে এন বালাগোপাল নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে একটি মন্তব্য করেছিলেন, যা রাজ্যের অভ্যন্তরে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বালাগোপাল মঙ্গলবার বলেছিলেন যে, কিছু লোক, যাঁরা উত্তর প্রদেশের মতো জায়গায় অনুশীলনে অভ্যস্ত, তাঁরা কেরলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি চলা গণতান্ত্রিক প্রকৃতির কাজ বুঝতে সক্ষম নাও হতে পারেন।
'যখন আমি শেষবার গিয়েছিলাম, তখন উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের পেছনে ৫০ থেকে ১০০ জন নিরাপত্তা রক্ষী ছিল,' উত্তরপ্রদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অবস্থাই রয়েছে ব’লে খোঁচা দিয়ে মন্তব্যটি করেছেন কে এন বালাগোপাল।
বলা বাহুল্য, উত্তরপ্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আসা আরিফ মোহাম্মদ খান মোটেই এই বক্তব্যটি ভালোভাবে নেননি। অর্থমন্ত্রীর বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গভর্নর খান বলেছেন যে, বালাগোপালের মন্তব্যগুলি স্পষ্টতই রাজ্যপালের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা এবং গভর্নরের পদমর্যাদা হ্রাস করার লক্ষ্যে করা হয়েছিল।
ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘সবচেয়ে বিরক্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এই বক্তব্য আঞ্চলিকতা ও প্রাদেশিকতার আগুনকে জ্বালিয়ে দিতে চায়। যদি এগুলিকে সংযত না করেই প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তাহলে এই ধরনের বক্তব্য আমাদের জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতার ওপর 'ক্ষয়কারী এবং ক্ষতিকর প্রভাব' ফেলতে পারে।
"মন্তব্যগুলি শুধুমাত্র জাতীয় ঐক্য এবং অখণ্ডতাকেই বিনষ্ট করে না, বরং প্রতিটি রাজ্যের রাজ্যপাল যে সেই রাজ্যের বাইরে থেকেই আসবেন, এই সাংবিধানিক নীতিকেও মন্ত্রীর মন্তব্যটি চ্যালেঞ্জ করে।” কেরলের অর্থমন্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত মন্তব্যকে সপাটে উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যপালের সোজা তীর, “বালগোপাল মনে হয় ভুলে গিয়েছেন যে, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়টি উত্তর প্রদেশ সরকারের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে আসে না, এটি একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তর প্রদেশের চেয়ে দক্ষিণের রাজ্য সহ অন্যান্য রাজ্যের উপাচার্যরা সংখ্যায় বেশি ছিলেন।”
"এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার যে, বালাগোপাল কেরলের মহান উত্তরাধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞানহীন, যে রাজ্য ভারতীয় ঐক্য গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে," বালাগোপালকে ফের কটাক্ষ করেছেন আরিফ মোহাম্মদ খান।
প্রসঙ্গত, এর আগেও কেরলের রাজ্যপাল সেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর প্রতি কটাক্ষ হেনে মন্তব্য করেছিলেন, এটা লজ্জাজনক বিষয় যে, এটা ১০০ শতাংশ স্বাক্ষরতা সম্পন্ন একটা রাজ্য, যে রাজ্যকে তার আয়ের জন্য লটারি এবং অ্যালকোহলের উপর নির্ভর করতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন-
পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে আসছে অরভিন্দ কেজরিওয়ালের দল, জেলায় জেলায় দফতর খুলছে ‘আপ’
‘এতটুকু ঘরে থাকেন আপনি!’, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় এসে বিস্মিত হয়ে গেলেন বাংলার রাজ্যপাল লা গণেশান
‘আরও অনেকেই গ্রেফতার হবেন’, শাসকদলের উদ্দেশে তির্যক মন্তব্য দিলীপ ঘোষের! ইডি-সিবিআইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কী?