ভারত-চিন সীমান্তের লাদাখে গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে ভারত সরকারকে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছেন। এবার লাদাখ সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হওয়ার ঘটনা নিয়ে সোমবার মুখ খুললেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। গালওয়ানে ইন্দো-চিন সীমান্ত ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শব্দ চয়ন নিয়ে রীতিমতো সতর্ক করলেন তাঁর পূর্বসূরী ডঃ মনমোহন সিং। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এদিন জানান, ‘নিজের কথাকে চিনের হাতিয়ার করে দিচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।’
চিন-ভারত সংঘাত নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই দুষলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ''আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ভুল তথ্য কখনই কূটনীতি ও নির্ণায়ক নেতৃত্বের বিকল্প হতে পারে না। মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে কখনই সত্যকে চেপে রাখা যায় না। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, তিনি কী বলছেন, তার তাৎপর্য যেন মাথায় রাখেন।''
মনমোহন বলেছেন, ''কর্নেল সন্তোষ বাবু ও আমাদের জওয়ানদের আত্মত্যাগের কথা যেন তিনি মাথায় রাখেন এবং সর্বশক্তি দিয়ে দেশের ভূখণ্ড রক্ষা করেন। তার কম কিছু করা মানে দেশের লোকের বিশ্বাসের প্রতি ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।''
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এই কঠোর প্রতিক্রিয়া এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই। গত শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠকে সোনিয়া গান্ধীর সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, ভারতের এক ইঞ্চি জমিও চিনের অধিকারে নেই। কেউ ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকেনি। কোনও পোস্টও অন্যদের অধিকারে নেই। মোদীর এই মন্তব্য নিয়েই কঠোরতম ভাষায় তাঁর প্রতিক্রিয়া জানালেন মনমোহন।
প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠিতে ডঃ মনমোহন সিং লিখেছেন, ‘চিন নির্লজ্জ ও বেআইনিভাবে ভারতের ভূখণ্ড গালওয়ান, প্যাংগং টিএসও দাবি করছে। এর জন্য বেশ কয়েকবার গত এপ্রিল থেকেই আক্রমণ চালিয়েছে তারা। চিনের এই হুমকির কাছে ভয় পেয়ে আমাদের ভূখণ্ড নিয়ে আপোস করা উচিত নয়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহৃত কথাকে যাতে চিন হাতিয়ার করে নিজেদের সব অভিযোগ ঝেড়ে ফেলতে পারে সেদিকে লক্ষ রেখে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সংকট মোকাবিলায় সরকারের সব বিভাগের একযোগে কাজও নিশ্চিৎ করতে হবে।’
চিনা হুমকি মোকাবিলায় জাতি ও দেশের সংঘবদ্ধ হওয়ার এটাই সেরা সময় বলে মনে করেন ভারতের দু’বারের প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং। তাঁর মতে, ‘আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ভুল তথ্য কখনই কূটনীতি ও নির্ণায়ক নেতৃত্বের বিকল্প হতে পারে না। মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে কখনই সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।'
শুক্রবার লাদাখের গালওয়ানে চিনা আক্রমণ নিয়ে সর্বদল বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে দেশবাসীকে আস্বস্ত করে তিনি বলেছেন,‘ কেউ আমাদের সীমান্ত টপকে দেশে ঢুকতেও পারেনি। আমাদের কোনও সেনা পোস্ট দখল হয়ে যায়নি।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি করে কংগ্রেস। শনিবারই সাংসদ রাহুল গান্ধী এনিয়ে প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন। টুইটে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমাদের সেনা জওয়ানরা কেন নিহত হলেন? তাঁরা কোথায় শহিদ হলেন?’
কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম প্রশ্ন করেছিলেন, চীনা সেনা যদি ভারতীয় ভূখণ্ডে না ঢোকে তো ৫ মে থেকে ৬ জুন বিরোধটা কী নিয়ে হচ্ছিল? ভারতীয় সেনা কম্যান্ডাররা কী নিয়ে চীনের কম্যান্ডারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন? কেন আমাদের ২০ জন জওয়ানকে প্রাণ দিতে হলো? এবার মোদীর চিন নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মনোমহন সিংও। অতীতে নোটবন্দি থেকে শুরু করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনমোহনের কথা হুবহু মিলে গিয়েছে। তাছাড়া তাঁরা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে। ফলে মনমোহনের এই সমালোচনায় মোদী চাপে পড়লেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।