প্রায়ত রাম মন্দির আন্দোলনের অন্যতম সদস্য স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতী, হিন্দুত্ব নিয়ে স্বতন্ত্র ছিলেন তিনি

বিপ্লবী পথিরাম থেকে 'শঙ্করাচার্য' স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতী। আরএসএস ও বিজেপির নীতির তিনি যেমন কঠোর সমালোচক ছিলেন তেমনই অযোধ্যার রাম মন্দির নির্মাণ আন্দোলনের এক অন্যতম প্রাণপুরুষ।করপাত্রী মহারাজের রামরাজ্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন স্বামী স্বরূপানন্দ। 

অনিরুদ্ধ সরকার- রবিবার মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুর শহরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় "শঙ্করাচার্য" স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতীর। এই মাসের ২ সেপ্টেম্বর পালিত হয় তাঁর ৯৯তম জন্মদিন। এক দীর্ঘ যুগের অবসান ঘটল স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুতে। বিভিন্ন সময়ে 'হিন্দুত্ব' প্রসঙ্গে আরএসএস ও বিজেপির নীতির তিনি যেমন কঠোর সমালোচনা করেছেন তেমনই অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে তিনি বিশেষ ভূমিকাও পালন করেছেন। আদি শঙ্করাচার্য প্রতিষ্ঠিত দ্বারকার সারদা পীঠ এবং বদ্রীনাথের জ্যোতির্মঠের 'শঙ্করাচার্য' ছিলেন তিনি।

Latest Videos

আদি শঙ্করাচার্যের হাত ধরে হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থান হয়। বৌদ্ধ ও বিধর্মীদের হাত থেকে হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করতে আদি শঙ্করাচার্য ভারতের চারপ্রান্তে চারটি মঠ তৈরি করেন। যেগুলি হল যথাক্রমে শৃঙ্গেরী মঠ, গোবর্ধন মঠ, সারদা মঠ এবং জ্যোর্তিমঠ। এই মঠগুলির অবস্থান যথাক্রমে দক্ষিণে কর্ণাটকের শৃঙ্গেরীতে শৃঙ্গেরী মঠ, পশ্চিমে গুজরাটের দ্বারকায় সারদা মঠ, পূর্বে ওড়িশার পুরীতে গোবর্ধন মঠ এবং উত্তরে উত্তরখন্ডের জোশীমঠে জ্যোতির্মঠ। হিন্দু গুরুবাদী পরম্পরাকে বিবৃত করে তিনি চারমঠের দায়িত্ব দেন তাঁর চার প্রিয় শিষ্যকে। যারা হলেন - সুরেশ্বরাচার্য, হস্তামলকাচার্য, পদ্মপাদাচার্য এবং তোটকাচার্য। এ চারটি মঠের প্রত্যেক প্রধান প্রথমবার শঙ্করাচার্যের নামানুসারে "শঙ্করাচার্য" বা "পণ্ডিত শঙ্কর" উপাধি গ্রহণ করেন। এই মঠগুলি পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈদিক ধ্যানজ্ঞান প্রসারে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। আদি শঙ্করের গুরু পরম্পরা মেনে আজও শঙ্করাচার্যের চার মঠের দায়িত্বে রয়েছেন "শঙ্করাচার্য" উপাধিধারী পন্ডিতেরা। তেমনই এক প্রবীন হিন্দু পন্ডিত ছিলেন স্বরূপানন্দ সরস্বতী।

১৯২৪ সালে মধ্যপ্রদেশের সিওনি জেলার দিঘোরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন স্বরূপানন্দ সরস্বতী ৷ প্রথমজীবনে তাঁর নাম ছিল পথিরাম উপাধ্যায় ৷ পথিরামের যখন ৯ বছর বয়স তখনই সে ঈশ্বরের আরাধনায় সংসার ত্যাগ করে ৷ এরপর সে শুরু করে ধর্মীয় জীবন যাপন । পথিরাম গুরুর খোঁজে কাশী পাড়ি দেন। এরই মধ্যে তার বয়স যখন

১৯ তখন সে দেশের কথা ভেবে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খাতায় নাম লেখায়। পথিরাম বিপ্লবীদের মধ্যে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ১৯৪২ সাল। ব্রিটিশবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন চলছে দেশজুড়ে। জোরমাত্রায় দেশস্বাধীনের স্লোগান উঠছে। গান্ধীজীর নেতৃত্বে "ভারত ছাড়ো" আন্দোলন কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। পথিরাম গান্ধীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতছাড়ো আন্দোলনে যোগদান করেন। বিপ্লবী পথিরাম গ্রেফতার হন। ১৫ মাসের জেল হয় পথিরামের। এরপর আবার আধ্যাত্মজীবন শুরু হয় পথিরামের।

কাশী, বেনারস, মথুরা, গয়া ঘুরতে ঘুরতে এরপর একদিন পথিরাম হাজির হয় উত্তরাখন্ডে। দেবভূমি উত্তরাখন্ড। উত্তরাখন্ডের জোশীমঠেই রয়েছে আদি শঙ্করের জ্যোর্তিমঠ। পথিরাম হাজির হয় জ্যোর্তিমঠে। জ্যোর্তিমঠের শঙ্করাচার্য তখন ব্রহ্মানন্দ সরস্বতী। অসাধারণ পণ্ডিত মানুষ। ব্রহ্মানন্দর ভালো লাগে বিপ্লবী পথিরামকে। সে বিপ্লবী সন্ন্যাসীকে দীক্ষা দেন। পথিরামের নতুন নাম হয় স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতী ৷ ১৯৫০ সালে তাঁকে দণ্ডী সন্ন্যাসী করেন গুরু ব্রহ্মানন্দ ৷ স্বামী করপাত্রীজী মহারাজ তখন হিন্দুদের একত্রিত করার জন্য আন্দোলন করছেন। তৈরি করেছেন অখিল ভারতীয় রাম রাজ্য পরিষদ। তাতে যোগদান করেন স্বরূপানন্দ। এই রামরাজ্য পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। নেহেরুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে হেরে যান করপাত্রী মহারাজ স্বয়ং। পরে করপাত্রীজী মহারাজের সংগঠনের সভাপতি হন স্বামী স্বরূপানন্দ ৷ আর ১৯৮১ সালে স্বামী স্বরূপানন্দ "শঙ্করাচার্য" উপাধি লাভ করেন। 

তারপর একাধিক বিতর্ক তৈরি হয় তাঁকে ঘিরে। তা রামমন্দির নির্মানই হোক, আর আরএসবিজেপির নব্য হিন্দুত্ববাদই হোক। সর সংঘচালক মোহন ভাগবতকেও ছেড়ে কথা বলেন নি এই বিপ্লবী সন্ন্যাসী। এমনকি করোনাকালে রামমন্দির নির্মানের ভূমিপূজন ঘিরেও বিতর্কিত মতামত দেন। তবে রামমন্দির নির্মাণকার্যের গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য তিনি বারেবারে মুখ খুলেছেন। 

বছরখানেক ধরেই অসুস্থ ছিলেন দ্বারকার সারদা পীঠ ও জ্যোর্তিমঠের দায়িত্বে থাকে শঙ্করাচার্য স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতী৷ রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ নরসিংহপুরে জ্যোতেশ্বর পরমহংসী গঙ্গা আশ্রমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি ৷ সংবাদমাধ্যমকে দ্বারকা পীঠের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড স্বামী সদানন্দ মহারাজ এই খবরটি জানান ৷ তিনি বর্তমানে দণ্ডী স্বামী ৷ সূত্রের খবর সোমবার বিকেলে শঙ্করাচার্যের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

তাঁর প্রয়াণে শোক জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি টুইটে লিখেছেন, “এই শোকের সময়ে তাঁর অনুগামীদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। ওম শান্তি!” 

স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি স্বরূপানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুকে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী যোগী এই মর্মে একটি  টুইটে করেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, "ভগবান শ্রী রাম বিদেহী আত্মাকে তাঁর পরম আবাসে স্থান দিক এবং শোকাহত হিন্দু সমাজকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দিক।"

স্বামী স্বরূপানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি তাঁর  টুইট বার্তায় লিখেছেন, "পূজ্যপাদ জ্যোতিষপীঠের অধীশ্বর ও দ্বারকার সারদাপীঠাধীশ্বর, জগৎগুরু শঙ্করাচার্য স্বামী শ্রী স্বরূপানন্দ সরস্বতীর প্রয়াণের খবরে শোকাহত। তিনি সত্যের পথে চলার কথা বলেছেন। উনার বিদেহী আত্মাকে ভগবান শান্তি দিক।"

Share this article
click me!

Latest Videos

New Alipore-এ বস্তিতে বিধ্বংসী আগুন! পুড়ে ছাই একাধিক ঝুপড়ি, আগুন নেভাতে মরিয়া দমকল
‘Mamata Banerjee আজ TMC-র মুখ্যমন্ত্রী আছেন কাল জামাতের মুখ্যমন্ত্রী হবেন’ বিস্ফোরক Sukanta Majumdar
কেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করেছিল? আসল কারন ফাঁস করলেন Suvendu Adhikari, শুনলে চমকে উঠবেন
ক্যানিং-এ এসে ভেবেছিল ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকবে! রাতেই গ্রেপ্তার কাশ্মীরি জঙ্গি | Canning News Today
অনলাইনে পুজোর দেওয়ার নামে প্রতারণা! ঘাড় ধরে নিয়ে গেল পুলিশ | Hooghly News Today