রাজ্যে ক্রমেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, আত মধ্যেই হানা দিয়েছিল সুপার সাইক্লোন আমফান, এই জোড়া আক্রমণে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা একেবারেই বিপর্যস্ত। এরমধ্যেই আরও এক বিপদের আশঙ্ক রাজ্যে। উত্তর ভারতে ফসলের ক্ষতি করে এবার বাংলার দিকে আসছে পঙ্গপাল বাহিনী।
বেশ কয়েকদিন ধরেই ভারতে শুরু হয়েছে পঙ্গপালের তাণ্ডব। সুদূর ‘হর্ন অফ আফ্রিকা’ থেকে বালুচিস্তান হয়ে ভারতের রাজস্থানে প্রবেশল করে পঙ্গপাল বাহিনী। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে তাণ্ডব চালিয়ে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অংশে ঝাঁকে ঝাঁকে হানা দিয়েছে পঙ্গপালেরা । এবার নাকি তারা বাতাসের গতিপথ অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে চলেছে। ইতিমধ্যে ছোট্ট পাখায় ভর করে ঝাড়খণ্ড পর্যন্ত পৌঁছেও গেছে তারা।
এমনিতেই ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে রাজ্যের উপকূল অঞ্চলের কয়েক হাজার একর কৃষিজমি লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। এবার দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার কৃষকরাও পঙ্গপাল বাহিনীর তাণ্ডব নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন। কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে রাজ্যের পতঙ্গবিদদের কপালেও। তার কারণও রয়েছে মজুত, পঙ্গপালের প্রজননের জন্যে যে অনুকূল পরিবেশের প্রয়োজন, তার সবটাই এখন রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে আমফানের জন্যে। ভিজে মাটি, গঙ্গাপাড়ের হাওয়া আর ফসল ভর্তি মাঠ।
করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড়ের মিলিত তাণ্ডবে বর্তমানে এমনিতেই বিপর্যস্ত বাংলার অর্থনীতি। সামাজিক অবস্থাও এমন দুর্বল যে পতঙ্গ রুখতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা মুশকিল। স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনের কপালে। অন্যদিকে পতঙ্গ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একেকটি পঙ্গপাল ১০০ সন্তানের জন্ম দেয়। তাই একশ থেকে হাজার বা লক্ষে পৌঁছতে খুব একটা বেশি সময় লাগবে না। আর একবার চাষের জমি ঘিরে ফেললে তাদের প্রতিরোধ করা মুশকিল। উপায় শুধু প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক এবং অ্যানাস্থেটিক ওষুধ স্প্রে করা। তবে এতে ফসলেরও যথেষ্ট ক্ষতি হয়। তাই প্রথমেই রাসায়নিক ব্যবস্থা না নিয়ে যান্ত্রিক পদ্ধতির উপরেই আস্থা রাখতে চাইছেন বিশেষজ্ঞরা।
পঙ্গপালেরা দল বেঁধে হানা দেয় ফসলের জমিতে। আর একটি দলে থাকে লক্ষাধিক পতঙ্গ। দেখতে দেখতে এরা ফসলঘেরা মাঠ একেবারে ছিবড়ে করে ফেলে। বাংলার পতঙ্গবিদরা জানাচ্ছেন, ’৬১ সালে কলকাতায় একবার পঙ্গপাল হানা দিয়েছিল।
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে ভারতে পঙ্গপালের উপদ্রব দেখা যায়। কিন্তু চলতি বছর কিছুটা আগেই হানা দিয়েছে তারা। পতঙ্গবিদরা বলছেন, পঙ্গপালের এক একটি দল আকারে প্যারিস শহরের মতো বড় হতে পারে। তার থেকেও বড় আশঙ্কা, ওই আকারের পঙ্গপালের একটি দলের অর্ধেক ফ্রান্সবাসীর মতো খাবার খাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। পাকিস্তান পেরিয়ে এপ্রিলের প্রথম দিকে রাজস্থানে ঢুকেছিল পঙ্গপালের দল। সে সময় জয়পুর শহরেও দেখা গিয়েছিল পঙ্গপাল। এর পর তা ছড়িয়ে পড়েছে পঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ-সহ উত্তর ও মধ্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে।
বিভিন্ন রাজ্যে পঙ্গপাল যে হানা দিয়েছে তা নিয়ে গত সপ্তাহেই সতর্কবার্তা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক। তা দেশের রাজধানী দিল্লিতেও ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। পতঙ্গবিদরা জানাচ্ছেন, পঙ্গপালগুলো যখন আফ্রিকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল তখন সংখ্যায় এত ছিল না। ক্রমে বংশবিস্তার করছে ভয়ানকগতিতে। পঙ্গপাল গড়ে ৯০ দিন জীবিত থাকে। মরু পঙ্গপালের ঝাঁক দিনে ১৫০ কিমি পর্যন্ত যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং লোহিত সাগর সংলগ্ন এলাকায় অনুকূল আবহাওয়ার জেরেই পঙ্গপালের বিপুল প্রজনন ঘটেছে। আর সেই ধাক্কাই এখন সামলাতে হচ্ছে ভারতকে।
পঙ্গপালেরা সাধারণত তুলো আর সবজিখেতে হামলা করে। ভ্যাকুম ক্লিনারের মতো ‘অ্যাসপিরেটর’ ব্যবহার করে এদের বন্দি করা যেতে পারে। বহু দেশ আবার ‘নালিজ ট্র্যাপ’ব্যবহার করে এদের বাগে আনতে।