২০২০ সালটা মোটেই ভাল যাচ্ছে না দেশের পক্ষে। একে তো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনার থাবায় প্রতিদিনই এদেশে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেই পরিস্থিতি সামলানোর আগেই দেশের পূর্ব উপকূলে হানা দিল সুপার সাইক্লোন আমফান। তারপরেই পাকিস্তান থেকে হাজির পঙ্গপালের দল। সেই পঙ্গপাল এখন রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র জুড়ে ফসলের ক্ষতি করে বেড়াচ্ছে। আর এরমধ্যেই ভয়ঙ্কর আগুন লেগেছ উত্তরাখণ্ডের বনাঞ্চলে। আগুন ছড়িয়েছে ৫১ হেক্টরেরও বেশি জমিতে। জানা যাচ্ছে, প্রায় ৫-৬ হেক্টর জঙ্গল সেই দাবানলের আগুনে একেবারে ভস্মীভূত। দমকা হাওয়ার জেরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আগুন।
পরপর চারদিনে চার বার আগুন লেগেছে উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে বনকর্মীদের। এমতাবস্থায়, অনেকের মনেই স্মৃতি ফিরে এসেছে আমাজন ও অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের ভয়াবহতা।
উত্তরখণ্ডের ৭১.০৫ শতাংশ অঞ্চলই বনাঞ্চল। অনেক দুর্লভ সব গাছ এখানে পাওয়া যায়। পাশাপাশি উত্তরাখণ্ডের জঙ্গল সারা ভারতে যত প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়, তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রজাতির পাখির বিচরন ভূমি। এই অরণ্যের জীব বৈচিত্র্যও বিশাল। এই জঙ্গল থেকে সারাবছর প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। পাহাড়ি রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রায় সমস্ত কার্যকলাপ চলে এই বনকে ঘিরেই। এই অরণ্য পুড়ে গেলে পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্য এর পাশাপাশি ক্ষতি হবে অর্থনীতিরও।
বছরে প্রায় ৩ কোটি লাখ ইকো সিস্টেম সার্ভিস এখান থেকে সারা দেশে ছড়ায়। সেই উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলের পর জঙ্গল জ্বলার ছবিতে এখন ছেয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। এই নিয়ে গত ৪ দিন ৪৬টি দাবানল রেকর্ড করা হয়েছে উত্তরাখণ্ডে। এর ফলে ইতিমধ্যে ৫১.৩৪ হেক্টর জঙ্গল ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দাবানলের তেজও। বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে দাবানলের কারণে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে কুমায়ুন অঞ্চলের জঙ্গলগুলির। কুমায়ুন ছাড়াও দাবানলের খবর পাওয়া গিয়েছে নৈনিতাল, আলমোরা, পউরি গাড়ওয়াল, দেরাদুন ও তেহরি থেকেও।
সম্প্রতি পুরুলিয়ার শুশুনিয়া পাহাড়ও দানালের গ্রাসে পড়েছিল। এবার জ্বলছে উত্তরাখণ্ডের বিস্তির্ণ বনাঞ্চল। নষ্ট হচ্ছে বায়ো-ডাইভার্সিটি, মরছে পশু-পাখি- নষ্ট হচ্ছে ইকো সিস্টেম। সত্যিই প্রকৃতির একের পর এক তাণ্ডবে আজ দিশেহারা আমাদের দেশ।