সোমবার প্রেস ব্রিফিংএর সময় গণনা প্রক্রিয়া সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন রাজীব কুমার বলেছেন, সম্পূর্ণ গণনা প্রক্রিয়াটি একেবারে শক্তিশাল। এটি সঠিকভাবে কাজ করবে।
সাত দফায় লোকসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামিকাল অর্থাৎ ৪ জুন মঙ্গলবার ভোট গণনা। ভারতের নির্বাচন কমিশন সোমবার প্রথাভেঙে সাংবাদিক বৈঠক করে আশ্বাস দিয়েছে একটি শক্তিশালী ও স্বচ্ছ গণনা প্রক্রিয়ার। সাংবাদিক বৈঠকে কমিশন জানিয়েছে, চলতি নির্বাচনে ৩১.২ কোটি মহিসা সহ ৬৪.২ কোটি ভোটার নিজেদের মতামত দিয়েছেন, এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
সোমবার প্রেস ব্রিফিংএর সময় গণনা প্রক্রিয়া সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন রাজীব কুমার বলেছেন, সম্পূর্ণ গণনা প্রক্রিয়াটি একেবারে শক্তিশাল। এটি সঠিকভাবে কাজ করবে।
আগামিকাল , মঙ্গলবার কীভাবে গণনা হবে- স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট গণনা শুরু হবে ৪ জুন মঙ্গলবার সকাল ৮টায়। সংসদের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা বিধানসভা নির্বাচনেও ভোট গ্রহণ হবে। পাশাপাশি উপনির্বাচনের গণনাও হবে এই একই দিনে।
গণনার নিয়ম- নির্বাচন কমিশন একটি হ্যান্ডবুক জারি করেছে। সেখানেই রয়েছে গণনা পদ্ধতি। বলা হয়েছে, ভোট গণনা হবে ১৯৯২ সালের সংশোধিত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ১৯৬১-এর বিধি ৬৬-এ দ্বারা।
বিধি 66A এর অধীনে, বিধি 50 থেকে 54 এর বিধানগুলি ভোট গণনার সময় এবং অবস্থান, গণনা এজেন্টদের নিয়োগ ও বরখাস্ত, গণনা স্থানে অ্যাক্সেস ও ভোটের গোপনীয়তা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ব্যালট পেপার ও প্যালট বক্সের প্রচলিত পদ্ধতি ব্যবহার করে । নির্বাচনী এলাকয় এই নিয়মগুলিও প্রয়োগ করা হয়। অতিরিক্তভাবে বিধি 54Aর মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালট গণনা হবে।
6A তিনটি নতুন নিয়ম প্রবর্তন করে: নিয়ম 55C, 56C, এবং 57C। এই নিয়মগুলি গণনার আগে ভোটিং মেশিনের যাচাই-বাছাই এবং পরীক্ষা, ভোটিং মেশিনে রেকর্ড করা প্রকৃত ভোট গণনা প্রক্রিয়া এবং গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করে ভোটিং মেশিনে সিল মারার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে।
হ্যান্ডবুকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, 60 থেকে 66 নম্বর বিধিগুলিকে বলা হয়েছে ধারাবাহিক গণনা। নতুন ভোটের পরে গণনা শুরু, ভোটের পুনঃগণবা, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা থেকে শুরু করে জয়ী প্রার্থীদের শংসাপত্র প্রদান সবকিছুই লেখা রয়েছে। ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোটদানের পদ্ধতিও রয়েছে এই বিধিগুলির মধ্যে।
ভোট গণনার দায়িক্বে রিয়ার্নিং অফিসার-
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী ভোট গণনা করার কাজটি রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে হবে। একজন আধিকারিক, যিনি ভারতের নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে মনোনীত। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় প্রতিটি নির্বাচনী জোর তদারকির দায়িত্বে থাকেন। সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ভোট গণনা প্রক্রিয়া তদারকি করার আইনি কর্তৃত্ব দেওয়া হয়। যদি একজন রিটার্নিং অফিসার একাধিক সংসদীয় বা বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকে তাহলে তাঁর সহকারীরা পৃথকভাবে ভোট গণনা পরিচালনা করতে পারেন।
নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ১৯৬১-বিধি ৫১তে রয়েছে রিটার্নিং অফিসারকে অবশ্যই প্রতিটি প্রার্থী বা তাদের নির্বাচনী প্রতিনিধিকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে। ভোটের দিনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে, ভোট গণনার তারিখ , সময় ও অবস্থান সম্পর্কে জানান হবে। গণনা কেন্দ্র সম্পর্কেও জানাতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের হ্যান্ডবুকের নির্দেশিকা অনুসারে ভোট গণনা প্রক্রিয়া কেন্দ্রগুলিতে পরিচালিত হয়, যার মধ্যে এক বা একাধিক কাউন্টিং হল থাকতে পারে। আদর্শভাবে গণনা কেন্দ্রগুলি জেলা সদরে অবস্থিত হবে। প্রয়োজনে মহকুমা সদরে অবস্থিত হতে পারে।
গণনা পদ্ধতি
সাধারণত প্রতিটি কাউন্টিং হলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের কন্ট্রোল ইউনিটের জন্য ৭ থেকে ১৪টি গণনা টেবিলের মধ্যে থাকা উচিৎ। সঙ্গে পোস্টাল ব্যালট গণনার জন্য মনোনীত থাকে একটি অতিরিক্ত টেবিল। একটি হলে শুধুমাত্র একটি বিধানসভা কেন্দ্রেরই গণনা হবে।
লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনের একযোগে ভোট গণনার প্রেক্ষাপটে, সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার মধ্যে বিধানসভা কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার (এসি) এবং বিধানসভা বিভাগের সহকারী রিটার্নিং অফিসারের (পিসি) দায়িত্ব সম্পর্কিত বিভিন্ন পরিস্থিতি।
গণনা পদ্ধতিঃ
১। লোকসভা এবং বিধানসভার জন্য পৃথক গণনা হল উপলব্ধ থাকলে, তারা বিধানসভা কেন্দ্র (AC) এবং বিধানসভা বিভাগ (AS) গণনা উভয়ের জন্য পরিবেশন করতে পারে।
২। একটি হলের মধ্যে গণনা টেবিলের অর্ধেক সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা (পিসি) এবং বাকি অর্ধেক বিধানসভা কেন্দ্রের (এসি) জন্য বরাদ্দ করা হয়। দুই কেন্দ্রের প্রার্থীদের এজেন্টদেরও জন্যও সেইমত ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিটি কাউন্টিং হলে, একটি বড় ব্ল্যাকবোর্ড, হোয়াইটবোর্ড বা টিভি প্রার্থীদের নাম এবং রাউন্ড নম্বর প্রদর্শন করে। পর্যবেক্ষকদের সার্টিফিকেশনের পর রাউন্ডের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়, এরপর রিটার্নিং অফিসারের ঘোষণা। এই ঘোষণার পরই স্ট্রং রুম থেকে পরবর্তী রাউন্ডের জন্য কন্ট্রোল ইউনিট চালু করা হয়।
গণনায় এজেন্টদের নিয়োগ
ভারতের নির্বাচন কমিশন অনুসারে গণনা এজেন্ট বা কাউন্টিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য ব্যক্তিদের কোনও আইনই বাধ্যতামূলক কোনও নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকার প্রয়োজনিয়তা নেই। যাইহোক, ভোট গণনা প্রক্রিয়ার সময় কার্যকর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেপ্রার্থীদের মত ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের নিয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গণনা কেন্দ্র যতগুলি টেবিল থাকবে একজন প্রার্থী ততগুলি এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবে। পোল্টাল ব্যালট গণনার জন্যও এজেন্ট নিয়োগ করা যাবে। প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্টের অনুপস্থিতিতে রিটার্নিং অফিসারের টেবিলে গণনা প্রক্রিয়া তদারকি করার জন্য একজন অতিরিক্ত কাউন্টিং এজেন্ট নিয়োগ করা যেতে পারে। কাউন্টিং এজেন্টের জন্য ফর্ম ১৮ ফিলাপ করতে হবে এজেন্টদের।
কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণনা প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন স্ট্রং রুমে একজন পর্যবেক্ষক থাকবে। নির্বাচনী এজেন্টদের উপস্থিতিতে তা খোলা হবে। লগবইয়ের প্রয়োজনী তথ্য রেকর্ড করে রাখা হবে। তবে সিল পরীক্ষা করেই তা খোলা হবে। প্রতিটি পদক্ষেপই ভিডিও রেকডিং করা হবে।