এ যেন উলট পুরাণ। পুরোনো বৈরিতা ভুলে একেবারে সৌজন্যের বার্তা। দিল্লিতে গিয়ে রাজ্যে মোদীকে আসার আমন্ত্রণ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাইলেন মমতা।
দীর্ঘ দেড় বছর পর অবশেষে সম্পর্কের বরফ গলল। নিজের ইচ্ছায় সেই রাজনৈতিক উত্তাপে জল ঢাললেন মমতা। লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীকে একাধিক বাক্য়বাণে বিদ্ধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার সম্পর্ক মেরামতিতে উল্টে মোদীকেই রাজ্য়ে আমন্ত্রণ জানালেন মুখ্য়মন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এই ভোল বদল দেখে হতবাক হয়েছে দিল্লির রাজনৈতিক মহল। যদিও বিরোধীরা বলছেন, এটাই হওয়ার ছিল। রাজীব কুমার নিয়ে ঠেলায় পরে এখন উল্টো সুর মমতার গলায়।
এদিন মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেউচা পাচামি প্রকল্পের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। দেশের বৃহত্তর কোল ব্লকের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই দেখতে চান তিনি। মমতা বলেন, রাজ্যের যোগ্যতা দেখে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পটা আমাদের দিয়েছে। কাজটা রাজ্য সরকারই করবে। এই প্রকল্পের জন্য সরকারের কাছে রাজ্য ৫০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি ,পুজো, নবরাত্রির সময় আমরা সকলেই ব্যস্ত থাকি। পুজোর পরে উনি একটা সময় বের করে রাজ্যে আসুক। কেন্দ্র-রাজ্য মিলে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হোক।
সম্প্রতি একাধিক বার ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে একত্রীকরণ নিয়ে মোদী বিরোধিতা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ছাড়াও বিএসএনএল-এর মতো কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ প্রকল্পগুলির বেসরকারি করণ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন তিনি। এদিনও তাই মোদীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বুকে আশা বেধেছিলেন অনেক কর্মী। কিন্তু বৈঠক শেষে বিএসএনএল বা ব্যাঙ্কিং সেক্টরের কর্মীদের জন্য খুশির খবর শোনাতে পারেননি মমতা। তবে তিনি জানিয়েছেন,এ বিষয়ে প্রধনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকে সবথেকে হতাশ করেছে বাম ও কংগ্রেসকে। যে এনআরসি নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে বিধানসভায় একমত হয়েছিল কংগ্রেস-সিপিএম। মিটিং শেষে মমতা জানান, এনআরসি নিয়ে মোদীর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি তাঁর। মমতা জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রতিবারই দিল্লিতে এলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন । আগেও রাজনাথ সিং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন দেখা করেছেন। এবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সময় পেলে তার সঙ্গে সৌজন্য় সাক্ষাৎ করে যাবেন তিনি।
দিল্লিতে যাওয়ার আগে মুখ্য়মন্ত্রী বলেছিলন, কেন্দ্রের কাছ বহু টাকা পায় রাজ্য,এ নিয়ে কথা হবে। যদিও মোদীর সঙ্গে বৈঠক শেষে মমতা জানান,কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা পায় রাজ্য। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নেই তাই এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে পারেননি তিনি। অর্থমন্ত্রকের বিষয়ে যা কথা বলার তা অমিত মিত্র এসে কথা বলে যাবেন। তবে এ সবের মধ্য়ে রাজ্যের নামকরণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেন্দের কোনও প্রস্তাব থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এটা কোনও রাজনৈতিক মিটিং নয়। এটা এক সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারের আলোচনা।