এ যেন একেবারে ভয়ানক দৃশ্য।
এ যেন একেবারে ভয়ানক দৃশ্য। এখনও দৃশ্যটি ভুলতেই পারছেন না উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার বাসিন্দারা।
হটাৎ চিৎকার শুনতে পেয়ে তারা ছুটে গিয়ে দেখেন যে, পাহাড়ের গা বেয়ে পড়ে যাচ্ছে একটি বাস। খোলা জানলা দিয়ে ছিটকে খাদে পড়ে যাচ্ছেন যাত্রীদের অনেকেই। কেউ কেউ শক্ত করে জানলার গরাদ ধরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বারবার হাত ফসকে যাচ্ছে! বাসটি খুব দ্রুত ২০০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায়।
ক্রমেই চিৎকার বদলে যায় গোঙানি আর করুণ আর্তিতে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩৬ জন যাত্রীর। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, অতিরিক্ত যাত্রী বাসে চড়ানোতেই এই বিপত্তি ঘটেছে। অবশ্য অন্য একটি সূত্রের দাবি, বাসটির ঠিকঠাক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। সেই কারণেই পাহাড়ি রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায় বাসটি।
সোমবার সকালে, অন্তত ৪০ জন যাত্রী নিয়ে উত্তরাখণ্ডের পাউরি জেলার নৈনিদন্দ থেকে নৈনিতালের রামনগরের দিকে যাচ্ছিল বাসটি। যাওয়ার পথে আলমোড়ার মারচুলা এলাকায় ২০০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায় সেটি। যেখানে বাসটি পড়ে যায়, তার পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে একটি নদী। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, পাহাড়ি রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই বাসটি খাদে পড়ে যায়।
সেইসঙ্গে, কয়েকজন যাত্রী জানলা দিয়ে ছিটকে পড়ে যান খাদে। যাত্রীদের চিৎকার শুনতে পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন স্থানীয়রা। খাদে নেমে তারা শুরু করেন উদ্ধারকাজ। জানলা দিয়ে বের করে আনা হয় জীবিত এবং মৃত যাত্রীদের। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং পুলিশ। প্রায় ২৫ জনের দেহ উদ্ধার করা হয় বাস থেকে।
বাকি যাত্রীদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা চলার সময় আট জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বাসটি যখন খাদে পড়ছিল, তখন বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছিল যাত্রীদের চিৎকার। বোঝা যাচ্ছিল, বাসের মধ্যে দলা পাকিয়ে যাচ্ছেন মানুষজন। খাদে বাস পড়ার পর বাঁচানোর আর্তি জানাচ্ছিলেন কয়েকজন।
ওই যুবক বলছেন, “এখনও কানে বাজছে সেই চিৎকার।” আলমো়ড়ার পুলিশ সুপার দেবেন্দ্র পিঞ্চা দুর্ঘটনার পরেই জানিয়ে দেন, মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্করসিংহ ধামি মৃতদের পরিবারকে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আহতদের এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। পাহাড়ি রাস্তায় কীভাবে এতজনকে নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই বাসটি চলছিল, সেই নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছেন। এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী ধামি অ্যাসিসট্যান্ট রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসার (এআরটিও)-কে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে, কুমায়ুন ডিভিশনের কমিশনারকে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন সিএম।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।