
PM Modi at BRICS Summit: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার ১৭তম ব্রিকস সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেন যে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করা নিজেদের "সুবিধার" বিষয় হিসেবে দেখা উচিত নয়, বরং একটি "নীতি" হওয়া উচিত। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এটিকে মানবতার জন্য "সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক ব্রিকস অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার কথা উল্লেখ করে বিশ্ব শান্তির জন্য সন্ত্রাসবাদের হুমকির কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং অবিচল আন্তর্জাতিক সংহতির আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এই হামলা ভারতের "আত্মা, পরিচয় এবং মর্যাদার" উপর আঘাত, এবং জাতি যে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সন্ত্রাসবাদ সমর্থনের জন্য ব্রিকসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোদীর তীব্র নিন্দা
"সন্ত্রাসবাদ আজ মানবতার জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ভারত একটি অমানবিক এবং কাপুরুষোচিত জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে। ২২ এপ্রিল পহেলগামে জঙ্গি হামলা ছিল ভারতের আত্মা, পরিচয় এবং মর্যাদার উপর সরাসরি আঘাত। এই হামলা শুধু ভারতের জন্যই নয়, সমগ্র মানবতার জন্যই এক আঘাত। এই দুঃখের সময়ে, আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা, সমর্থন এবং সমবেদনা জানানো বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি," প্রধানমন্ত্রী বলেন।
"সন্ত্রাসবাদ নিন্দা করা আমাদের 'নীতি' হওয়া উচিত, শুধু 'সুবিধার' বিষয় নয়। আমরা যদি প্রথমে দেখি কোন দেশে হামলা হয়েছে এবং কার বিরুদ্ধে, তাহলে এটা মানবতার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা হবে," তিনি আরও বলেন।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে কথা এবং কাজ একই হওয়া উচিত।
"জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে কোন দ্বিধা করা উচিত নয়। সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং সমর্থকদের একই তুলায় মাপা যায় না। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক লাভের জন্য, সন্ত্রাসবাদকে নীরব সম্মতি দেওয়া এবং সন্ত্রাস বা জঙ্গিদের সমর্থন করা কোনও পরিস্থিতিতেই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়। সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে কথা এবং কাজের মধ্যে কোনও পার্থক্য থাকা উচিত নয়। আমরা যদি এটি করতে না পারি, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে: আমরা কি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সত্যিই গুরুত্ব দিচ্ছি, না কি?" তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে পশ্চিম এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হুমকি এবং গাজায় মানবিক সংকটের কথা উল্লেখ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন “পশ্চিম এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত, আজ বিশ্ব বিরোধ এবং উত্তেজনায় ঘেরা। গাজায় মানবিক পরিস্থিতি অনেক উদ্বেগের কারণ। ভারত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, শান্তির পথই মানবতার কল্যাণের একমাত্র বিকল্প,”।
সামিটে মোদী বলেন “ভারত ভগবান বুদ্ধ এবং মহাত্মা গান্ধীর দেশ। আমাদের জন্য যুদ্ধ এবং হিংসার কোন স্থান নেই। বিশ্বকে বিভাজন এবং সংঘাত থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে সংলাপ, সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের দিকে নেওয়ার এবং সংহতি এবং আস্থা বৃদ্ধির প্রতিটি প্রচেষ্টাকে ভারত সমর্থন করে,”।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বৈশ্বিক শান্তি এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ব্রিকসের ভূমিকার কথা ও তুলে ধরেন, "বৈশ্বিক শান্তি এবং নিরাপত্তা শুধু একটি আদর্শ নয়; এটি আমাদের সাধারণ স্বার্থ এবং ভবিষ্যতের ভিত্তি। মানবতার উন্নয়ন শুধুমাত্র একটি শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ পরিবেশে সম্ভব। এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্রিকসের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবেলা করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমাদের একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।"
প্রধানমন্ত্রী ২০২৬ সালে ভারতের সভাপতিত্বে পরবর্তী সম্মেলনে ব্রিকস নেতাদের ভারত ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়ে শেষ করে। ৭ জুলাই থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ব্রাজিলের আয়োজনে এই সম্মেলনে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নতুন সদস্য মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইন্দোনেশিয়ার নেতারা একত্রিত হন।