
শেষপর্যন্ত দীর্ঘ টালবাহানার পরই জনগণনার সঙ্গে জাতি গণনায় সায় দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কংগ্রেসের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল জাতি গণনা। কংগ্রেস শাসিত তেলাঙ্গনায় ইতিমধ্যেই কাস্ট সেন্সাস হচ্ছে।
গত ১৪ বছর ধরে এই দেশে জনগণনা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী ২০২১ সালে আদম সুমারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে তা হয়নি। তবে জনগণনার দাবি বিরোধীরা দীর্ঘ দিন ধরেই করে আসছে। এবার তা শুরু হওয়ার মুখে।
বুধবার নরেন্দ্র মোদী সরকার জনগণনার কথা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে জাতি গণনার কথাও ঘোষণা করেছে। কিন্তু এর কৃতিত্ব কার? তা নিয়ে শাসক আর বিরোধীদের মধ্যে তরজা শুরু হয়েছে। কিন্তু গণনা হচ্ছে এটা আম জনতার কাছে স্বস্তি। এবার বলা যাবে ভারতের জনসংখ্যা কত।
ধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটির বৈঠকের শেষে দেশের রেল ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, এ বার একসঙ্গে জনগণনা এবং জাতগণনা হবে। কিন্তু কবে হবে, সে ব্যাপারে কোনও সময়সীমার কথা বলেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তার ফলেই প্রশ্ন উঠছে, ভোটমুখী রাজ্যগুলির দিকে তাকিয়েই কী এই ঘোষণা?
আগামী বছরই পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। যা বিজেপির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিহারে ক্ষমতায় থাকলেও বাকি দুই রাজ্যে ক্ষমতা দখলে মরিয়া গেরুয়া শিবির।
জনগণনার সঙ্গে জাতি গণনার প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমবঙ্গের জন্য। কারণ পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি-র সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। অন্যদিকে কিছু সম্প্রদায় রয়েছে যারা দীর্ঘ দিন ধরেই ওবিসি তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে।
সাধারণ জনগণনায় তফসিলি জাতি (এসসি), উপজাতি (এসটি) অংশের মানুষের সংখ্যা, শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক ও জীবনধারনের মান কেমন, এ বিষয়ে সার্বিক তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু ওবিসি সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথঅয থাকে না। সেই কারণেই গত কয়েক বছর ধরেই জাত গণনা দাবি তীব্র হচ্ছিল।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল ইস্তাহারে ছিল মাহিষ্য, তিলি, তামুল ও সাহাদের ওবিসি তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেবে সরকার। ক্ষমতায় আসার পরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্বাব পাশ করা হয়। কিন্তু কয়েকটি কারণে তা কার্যকর হয়নি।
রাজ্য সরকারের দেওয়া ওবিসি শংসাপত্র নিয়েই জটিলতা তৈরি হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়েছে ১২ লক্ষ শংসাপত্র। যদিও রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের জনগণনার সঙ্গে জাতগণনার কথা ঘোষণা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। রাজ্যের শাসক দলের অনেকেই বলছেন এটা বিজেপির নির্বাচনী চমক। পাল্টা সওয়াল বিজেপি নেতাদের। তাদের কথায় পিছিয়ে পড়া অংশকে এগিয়ে আনাই লক্ষ্য
প্রাক্তন এক আমলার কথায় স্বাধীনতার পর এই দেশে জনগণনা হয়েছে। কিন্তু কখনই জাতগণনা হয়নি। এই প্রথম জাতগণনার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
এই রাজ্যে একদিকে যেমন রয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়। আর রয়েছে রাজবংশী সম্প্রদায়। যারা ভোটবাক্সে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে তেমন রয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়।
বিশেষজ্ঞদের ধারনা ভোটের বাজারে জাতগণনাকে কেন্দ্র করে শাসক বিরোধী দুই দলই এই পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে কাছে টানার চেষ্টা করবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায় কিছু রাজ্য জাতিগত তথ্যসংগ্রহের জন্য সমীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এক একটি রাজ্যে এক এক ভাবে সমীক্ষা হয়েছে। কোনও অভিন্ন প্রক্রিয়া মানা হয়নি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কথায় অস্বচ্ছতা দূর করতেই এই সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে সিপিএম নেতার কথায় ইতিমধ্যে বিহার-সহ একাধিক রাজ্যে জাতগণনা হয়েছে। তাতেই স্পষ্ট ওবিসি সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই কোনও সরকারের হাতে।