
পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই আরও আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক ভারত-পাকিস্তানের। অপারেশন সিঁদুরের পর ফের ইসলামাবাদকে উচিত শিক্ষা দিতে আসরে নামছে ভারত সরকার। এবার চন্দ্রভাগা নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের তোড়জোড় শুরু কেন্দ্রের।
জানা গিয়েছে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের কিশতওয়ার জেলায় চেনাব নদীর ওপর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোয়ার ড্যাম প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি একটি নতুন গ্রিনফিল্ড স্টোরেজ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, যা নদীর জলপ্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে।
এই বাঁধটি ৫৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। প্রায় ১০৯ মিটার উঁচু এই কংক্রিট গ্র্যাভিটি ড্যামটি নির্মাণে খরচ হবে আনুমানিক ৪,৫২৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি এলাকার বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে এবং সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কিশতওয়ার জেলায় চেনাব নদীর উপর নির্মীয়মাণ কোয়ার ড্যাম প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চেনাব নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়, যা যেকোনও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত।
নদীর গতিপথ পরিবর্তনের পাশাপাশি, ৬০৯ মিটার দীর্ঘ প্রধান টানেল খননের কাজও শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানে বাঁধের মূল নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এই সাফল্যের ফলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।
সরকারি সূত্রে খবর, এই প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে ৩১১৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে ভারত সরকার। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় ঘুম ছুটেছে পাকিস্তান সরকারের।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোয়ার ড্যাম প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সরকারের লক্ষ্য, ২০২৭ সালের মধ্যে এই প্রকল্পটি সম্পন্ন করা। যাতে জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে বিদ্যুতের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলস্বরূপ শিল্প উন্নয়নে গতি আসে।
প্রায় ১০৯ মিটার উঁচু এই কংক্রিট গ্র্যাভিটি ড্যামটি ৫৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে, যা এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে একদিকে যেমন স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, তেমনি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি জম্মু ও কাশ্মীরের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখনও অব্যাহত উত্তেজনা। ঠিক সেই সময়েই চেনাব নদীর উপর কোয়ার ড্যাম প্রকল্পটি নির্মিত হচ্ছে। চেনাব নদী সিন্ধু নদের একটি প্রধান উপনদী এবং পাকিস্তানের জলপ্রবাহের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এই নদীর উপর নির্ভরশীল। ভারতের এই নির্মাণ কাজের ফলে জলপ্রবাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কায় পাকিস্তান উদ্বিগ্ন।
ভারত এখনও পর্যন্ত চুক্তি লঙ্ঘন করেনি। তবুও চুক্তি পর্যালোচনার দাবি এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ক্রমাগত আপত্তি এই ইস্যুটিকে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। কোয়ার ড্যাম প্রকল্পটি এমন এক সময়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যখন দুই দেশের মধ্যে জলবন্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের সঙ্ঘাত অব্যাহত। এই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগ এবং ভারতের বিদ্যুৎ ও উন্নয়ন চাহিদা – এই দুইয়ের টানাপোড়েন সিন্ধু জল চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।