
এয়ার ইন্ডিয়া তাদের বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচে কোনও ত্রুটি খুঁজে পায়নি বলে । সম্প্রতি এই সুইচগুলি নিয়ে কিছু উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, যার প্রেক্ষিতে এয়ার ইন্ডিয়া একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে। সেখানেই রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
বিমান সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার পর নিশ্চিত করা হয়েছে যে ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচগুলি সম্পূর্ণ কার্যক্ষম এবং বিমানের সুরক্ষায় কোনও প্রকার আপস করা হয়নি। এই বিবৃতি এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। এই নির্দেশিকায় বোয়িং ৭৮৭ এবং ৭৩৭ বিমান পরিচালনা করে এমন সমস্ত বিমান সংস্থাকে তাদের ফুয়েল সুইচ লকিং সিস্টেম (fuel switch locking systems) পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের পরেই এয়ার ইন্ডিয়া তাদের বিমানগুলিতে পরিদর্শন শুরু করেছে।
এই নির্দেশের কারণ হলো, গত জুন মাসে ঘটে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা। ওই দুর্ঘটনায় ২৪১ জন নিহত হন। এয়ারক্রাফ্ট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) এই দুর্ঘটনার একটি প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতেই ডিজিসিএ এই জরুরি নির্দেশ জারি করেছে। বিমান সংস্থাগুলিকে তাদের ফুয়েল সুইচ লকিং সিস্টেমগুলি ভালোভাবে পরীক্ষা করে সেগুলোর সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
ওই বিমান সংস্থার পদস্থ এক কর্তা জানিয়েছেন যে, তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং দল সপ্তাহান্তে বোয়িং ৭৮৭-৮ (Boeing 787-8) বিমানগুলির প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং পাইলটদেরকে একটি অভ্যন্তরীণ বার্তার মাধ্যমে ফলাফল জানিয়েছে। তিনি বলেন, "পরিদর্শনগুলি সম্পন্ন হয়েছে এবং কোনও সমস্যা পাওয়া যায়নি।" বোয়িংয়ের রক্ষণাবেক্ষণ সময়সূচী অনুযায়ী সমস্ত বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানে ইতিমধ্যেই থ্রটল কন্ট্রোল মডিউল (Throttle Control Module - TCM) প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যার ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম (Flight Control System - FCS) একটি অংশ। এর ফলে বিমানগুলির নিরাপত্তা ও কর্মক্ষমতা নিয়ে যে কোনও উদ্বেগ দূর হয়েছে।
জানা গিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ (Boeing 787-8) বিমান দুর্ঘটনার ১৫ পৃষ্ঠার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে যে, বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ (Fuel Control Switches) যা ইঞ্জিনে জ্বালানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, দুর্ঘটনার সময় সে দু'টিই "রান" (Run) অবস্থান থেকে "কাটঅফ" (Cutoff) অবস্থানে চলে গিয়েছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল একে অপরের থেকে মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে। এর ফলস্বরূপ, বিমানটি উড্ডয়নের অল্প সময়ের মধ্যেই দুটি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যায়, যা দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচের এই আকস্মিক পরিবর্তন কেন ঘটল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এছাডা়ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং (CVR) থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। দুর্ঘটনার মুহূর্তে একজন পাইলটকে অন্যজনকে প্রশ্ন করতে শোনা গেছে, "কেন আপনি বন্ধ করে দিলেন?" জবাবে অন্য পাইলট বলেছেন যে তিনি এমনটা করেননি। এই কথোপকথন ইঙ্গিত দেয় যে, ইঞ্জিনের ফুয়েল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি পাইলটদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল অথবা এর কারণ সম্পর্কে তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল।
মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) দ্বারা জারি করা একটি সংশ্লিষ্ট বিশেষ এয়ারওয়ার্থিনেস ইনফরমেশন বুলেটিন (SAIB) এর উল্লেখ থাকলেও, এটি সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপের সুপারিশ করা থেকে বিরত রয়েছে। এর অর্থ হলো, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য আরও বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন এবং কী কারণে ফুয়েল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই নতুন তথ্য বিমান দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।