যদিও তথ্য বলছে, আজ বিরোধিতা করলেও, ভুয়ো ভোটারের উপর রাশ টানতে এক সময় বিরোধী দলগুলির অনেকেই এই বিল চেয়েছিলেন।
সোমবারই লোকসভায় (Lok Sabha) ধ্বনিভোটে পাশ হয়েছে নির্বাচনী আইন (সংশোধনী) বিল ২০২১ (Election Laws Amendment Bill)। আজ তা রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) পেশ করা হবে। আর এই বিলকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে রয়েছে সংসদ (Parliament)। এই বিলের বিরোধিতা করছে বিরোধীরা। তৃণমূল (TMC), কংগ্রেস (Congress), এনসিপি (NCP) সহ ১২টি রাজনৈতিক দল এই বিলের বিরোধিতায় সরব হয়েছে। এই বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের (Central Government) বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকেই। যদিও তথ্য বলছে, আজ বিরোধিতা করলেও, ভুয়ো ভোটারের (Fake Voter) উপর রাশ টানতে এক সময় বিরোধী দলগুলির অনেকেই এই বিল চেয়েছিলেন। ফলে এই বিলের বিরোধিতা করে কার্যত নিজেদের কাছে নিজেরাই খোরাকের পাত্র হচ্ছে বিরোধী দলগুলি।
ফিরে যাওয়া যাক ২০১৮ সালের ২৭ অগাস্ট। নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কার নিয়ে আলোচনা করার জন্য দিল্লিতে জাতীয় ও রাজ্য স্তরের সমস্ত স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একটি বৈঠক ডেকেছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। ৭টি জাতীয় ও ৩৪টি রাজ্য স্তরের রাজনৈতিক দল এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিল। একাধিক বিষয় নিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সেখানে। আর সেই একাধিক প্রস্তাবের মধ্যে ছিল আধার নম্বরের (Aadhaar Card) সঙ্গে ভোটারদের পরিচয়কে সংযুক্ত করা। এনিয়ে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধও করা হয়েছিল ওই দলগুলির তরফে। তাদের দাবি ছিল, এর ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও ভালো হবে।
কিন্তু, এখন যখন বিজেপি এই বিষয়গুলিকে নির্বাচনী আইন সংশোধনী বিলের মধ্যে যোগ করেছে তখনই বিরোধিতায় সরব হয়েছে কংগ্রেস সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। এক্ষেত্রে কংগ্রেসের দাবি, সরকার সংসদে আলোচনা না করেই পিছনের দরজা দিয়ে বিলটি পাশ করেছে। তাঁরা বিলটি সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেছেন। তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর (Shashi Tharoor) বলেন, “এ দেশে বসবাসের প্রমাণপত্র হিসেবেই আধার আনা হয়েছিল। তা কখনওই নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। তাই ভোটারের আধার কার্ড চাওয়ার অর্থ তাঁর বসবাসের প্রমাণপত্র চাওয়া। এর মাধ্যমে দেশের নাগরিক নন এমন মানুষকেও ভোটাধিকার পাইয়ে দিতে চাইছেন আপনারা।” তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, "বিলটি চোরের মত পাশ করানো হবে বলেই সংসদের শুরুতে ১২জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।"
তবে কংগ্রেসের গলায় অন্য সুর শোনা গিয়েছিল ২০১৮ সালে। ওই বছরের এপ্রিল মাস, তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন ওপি রাওয়াত। তাঁর কাছে গিয়ে আধার কার্ডের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণের দাবি জানিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি ছিল, ভুয়ো ভোটারের উপর রাশ টানতেই এই সংযুক্তিকরণ অত্যন্ত প্রয়োজন। আর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যখন এই সংক্রান্ত সংশোধনী বিল নিয়ে আসা হল ২০২১ সালে, ঠিক সেই সময় এই বিলের বিরোধিতায় সরব হয়েছে কংগ্রেস।
যদিও বিরোধীদের কথায় খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় সরকার। সরকার পক্ষের বক্তব্য, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও বেশি দূষণমুক্ত করার জন্যে এই বিল আনা হয়েছে। বরং বিরোধীদের দাবি ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সংসদে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বলেন, “ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতেই সরকার এই পদক্ষেপ করছে। বিরোধীদের উচিত তাতে সমর্থন জানানো।”