
PM Modi 6 Hints Before Pakistan Airstrike: ৬-৭ মে রাতে, যখন সারা দেশ ঘুমিয়ে ছিল, তখন ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের ভেতরে ৯ টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করছিল। এই হামলা ছিল পহলগাম জঙ্গি হামলার জবাব। লক্ষণীয় বিষয় হল, এই বড় পদক্ষেপের প্রায় ৪ ঘন্টা আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মঞ্চে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। দেশের সামনে তিনি বক্তব্য রাখছিলেন, কিন্তু আসলে বার্তাটি ছিল পাকিস্তানের জন্য। তাঁর একটি ইঙ্গিতের ৪ ঘন্টার মধ্যেই ভারত পাকিস্তানে ৯ টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করে। এটি শুধু একটি বক্তৃতা ছিল না। এটি ছিল সংকেত ব্যবস্থা। একে একে ৬ টি বড় ইঙ্গিত দেশকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল যে ভারত চুপ করে বসে থাকবে না। আসুন জেনে নিই অপারেশন সিঁদুরের আগে দেওয়া সেই ৬ টি সংকেত…
সংকেত ১: প্রধানমন্ত্রী মোদীর বলে থেমে যাওয়া
৬ মে, রাত প্রায় ৮:৫৪ মিনিট... একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী মঞ্চে ছিলেন। তিনি বললেন, 'এই অনুষ্ঠানের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আর আমাকেও...' ঠিক এখানেই তিনি থেমে গেলেন। পুরো ৬ সেকেন্ড চুপ করে রইলেন, তারপর কথা বদলে ফেললেন। 'কারণ, অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে, তবুও আপনারা এত বড় সংখ্যায় এখানে উপস্থিত। এটাও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষণ।' এই থেমে যাওয়া অনেকের কাছে অদ্ভুত লাগল। যেন কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু থেমে গেলেন এবং এর চার ঘণ্টা পর ভারত বিমান হামলা চালাল।
সংকেত ২: ২৪৪ টি মক ড্রিল
৫ মে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নির্দেশ জারি করে যে ৭ মে দেশের ২৪৪ টি স্থানে মক ড্রিল করা হবে। পরের দিনই পাঞ্জাব সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় এটি শুরু হয়ে যায়। এত বড় পরিসরে মক ড্রিল ১৯৭১ সালের পর প্রথমবার হয়েছিল, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে বিভ্রান্ত করা যে ভারত এখনও প্রস্তুতিতে আছে এবং জনগণকে মানসিকভাবে যে কোনও পাল্টা হামলার জন্য প্রস্তুত করা। এর সাথে সাথে রাজস্থান সীমান্তের কাছে বিমানবাহিনীর যুদ্ধ অনুশীলনের খবরও আসে।
সংকেত ৩: অমিত শাহের বক্তব্য- বেছে বেছে প্রতিশোধ নেব
১ মে, দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কঠোর ভাষায় বলেন- 'প্রতিটি প্রাণের জবাব দেওয়া হবে। বেছে বেছে প্রতিশোধ নেব।' এটি কোনও সাধারণ রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল না। এটি ছিল একটি কড়া বার্তা যে ভারত শুধু এক জায়গায় নয়, বরং একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা পদক্ষেপ নেবে এবং তাই-ই হল। একই রাতে ৯ টি স্থানে হামলা চালানো হল।
সংকেত ৪: রাজনাথ সিং বললেন- আপনারা যা চান, তাই হবে
৪ মে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন- 'প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বকে মানুষ জানে। আপনারা যা চান, তা অবশ্যই হবে।' এই কথাটি সরাসরি সেই আস্থার দিকেই ইঙ্গিত করে যা আগেও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (২০১৬) এবং বালাকোট বিমান হামলার (২০১৯) সময় দেখা গিয়েছিল। তাঁর কথার অর্থ স্পষ্ট ছিল যে এবারও জবাব দেওয়া হবে এবং হতে পারে বালাকোটের চেয়েও বড়।
সংকেত ৫: ১০ দিনে ৩ বার বিমানবাহিনী প্রধানের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
১০ দিনে তিনবার বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে দেখা করেন। তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ ২৬ এপ্রিল। এরপর ৩ মে দ্বিতীয় এবং ৫ মে তৃতীয়বার দেখা করেন। এর আগে ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধান এবং এনএসএ-র সাথে বৈঠকে সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ ছাড় দিয়েছিলেন যে কখন, কোথায়, কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা তারা নিজেরাই ঠিক করবেন। এতবার শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক এবং বিশেষ করে বিমানবাহিনী প্রধানের সাথে लगातার বৈঠক স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল যে বিমান হামলার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়ে গেছে।
সংকেত ৬: দৃষ্টি বিভ্রান্ত করার কৌশল- জল এবং সমুদ্রের চাল
ভারত ২৩ এপ্রিল সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে এবং ৪ মে পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত জল বন্ধ করার জন্য চেনাব নদীতে নির্মিত দুটি বাঁধ বন্ধ করে দেয়। এতে মনে হল ভারতের জবাব জল হামলা হবে। অন্যদিকে নৌবাহিনী ২ মে সমুদ্র অনুশীলন শুরু করে এবং ৩ মে 'ট্রাইডেন্ট অফ নেভাল পাওয়ার' নামে পোস্ট শেয়ার করে যাতে সারফেস জাহাজ, সাবমেরিন এবং হেলিকপ্টার দেখা যায়। তারপর তুরস্কও ৪ মে তাদের যুদ্ধজাহাজ করাচীতে পাঠায়। ভারত সেদিনই বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য নেভিগেশন সতর্কতা জারি করে এবং ৬ মে নৌ মাইনের পরীক্ষাও করে। এসব এত ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছিল যাতে শত্রুর মনে হয় ভারত সমুদ্র থেকে আক্রমণ করবে, কিন্তু আসল জবাব এল আকাশ থেকে বিমান হামলার মাধ্যমে।