জঙ্গলের মধ্যে একটি তেঁতুলগাছ। আপাত দৃষ্টিতে আর পাঁচটা তেঁতুল গাছের সঙ্গে তার কোনও পার্থক্য নেই, কিন্তু এই গাছটির ছোঁয়াতেই নাকি সেড়ে যাচ্ছে দুরারোগ্য রোগও। মধ্যপ্রদেশের হোশাঙ্গাবাদ জেলার নয়াগাঁওয়ে এই রহস্যময় 'নিরাময় গাছ' এর কথা ছড়িয়ে পড়তেই দলে দলে লোক ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন ওই তেঁতুল গাছের জাদু-স্পর্শ পেতে। বুধবার ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিল। পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন তাঁরা। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হল স্থানীয় থানার ইনচার্জ-কে।
নয়াগাঁওয়ে সাতপুরা টাইগার রেঞ্জের মধ্যে রাস্তার ধারে রয়েছে ওই তেঁতুল গাছ। মাসদুয়েক আগে এক ভাইপাল ভিডিওর মাধ্যমে গাছটির কথা ছড়াতে শুরু করে। এরপরই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেখানে আসা শুরু করেন। হুইল চেয়ারে, অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গে করে, আইভি ব্যাগ নিয়ে, এমনকী স্ট্রেচারে শোয়া রোগীকে নিয়েও ওই তেঁতুল গাছের ছোঁয়া পেতে আসতে দেখা গিয়েছে মানুষকে। এইভাবে গত দু'মাসে আড়াই লাখেরও বেশি লোক এসেছেন ওই স্থানে বলে দাবি স্থানীয়দের। একে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় স্থানীয়রা দোকানপাটও বসিয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু ছন্দটা কাটে বুধবার। বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়েও স্থানীয় প্রশাসন ওই গাছটির কোনও রোগ নিরাময় গুণ খুঁজে পায়নি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান কুসংস্কারকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় যেভাবে লোক সমাগম বাড়ছিল তাতে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। এরমধ্যে দু-একবার পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়। এছাড়া এলাকাটি বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ হওয়ায় সেখানকার বন্য প্রাণীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল বনবিভাগের কর্মকর্তাদের।
এই কারণেই বুধবার ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে অস্থায়ী দোকানগুলিকে ওখান থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর গাছটিকে কেন্দ্র করে এলাকাটি ঘিরে ফেলে। কাউকেই সেই বেষ্টনি পেরিয়ে গাছের জাদু ছোঁয়া নিতে দেওয়া হচ্ছিল না। তাতেই ক্রমে আগত স্পর্শ-প্রার্থীদের ক্ষোভ বাড়ছিল। একসময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে। এতে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পুলিশের অস্থায়ী তাঁবুতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাথরের আঘাতে ভানখেড়ি থানার ইনচার্জ শঙ্কর লাল ঝড়িয়া-সহ বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। ওসির মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। এরপর আশেপাশের এলাকা থেকে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী ডাকা হয়। তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পুলিশের বড়কর্তারাও বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে, পুলিশ রূপ সিংহ ঠাকুর নামে একজনের সন্ধান করছে। তাদের দাবি ‘জাদু গাছ’-এর গুজবটি শুরু করেছিল সেইই। মাস দুয়েক আগে এই বছর তিরিশের যুবক এক ভিডিওয় দাবি করেছিলেন, তাঁর মাথায় একটি আব ছিল। ওই তেঁতুল গাছটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি টান অনুভব করেছিলেন তিনি। দশ মিনিট পর মুক্তি পান। তখন দেখেছিলেন তাঁর আব-টিও আর নেই। এই ভিডিও ভাইরাল হয়েই জন বিস্ফোরণ ঘটেছে।
রূপ সিংহ ঠাকুর আরও দাবি করেছিলেন, ওই ঘটনার পর থেকে তিনি প্রতি রবিবার ও বুধবার গাছটির ওখানে আসা শুরু করেন। তাই স্থানীয়রা জানিয়েছেন সপ্তাহের এই দুটো দিন একটু বেশিই ভিড় হয়। পুলিশ বুধবারের বদলে অন্য কোনও কুসংস্কার বিরোধী অভিযান শুরু করেল পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না।