পটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এর প্রথম দফার ভোটের ঠিক আগে, রাজনৈতিক কৌশলী এবং 'জন স্বরাজ'-এর প্রধান প্রশান্ত কিশোর (পিকে) বড় আইনি সমস্যায় পড়তে চলেছেন। নির্বাচন কমিশনের রেকর্ড থেকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে যে প্রশান্ত কিশোরের নাম একই সঙ্গে দুটি রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত রয়েছে, যা জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (Representation of the People Act, 1950)-এর সরাসরি লঙ্ঘন।
সামনে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রশান্ত কিশোরের দুটি জায়গায় ভোটার হিসেবে রেজিস্টার্ড থাকার তথ্য মিলেছে।
এই বিষয়টি গুরুতর কারণ জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১৭ নম্বর ধারা স্পষ্টভাবে বলছে যে কোনও ব্যক্তির নাম একাধিক নির্বাচনী এলাকায় নথিভুক্ত থাকতে পারে না। একইভাবে, ১৮ নম্বর ধারা নিশ্চিত করে যে কোনও ব্যক্তি একই এলাকায় দুবার ভোটার হিসেবে রেজিস্টার্ড হতে পারবেন না। আইন অনুযায়ী, যদি কোনও ভোটার তার বাসস্থান পরিবর্তন করেন, তবে তাকে পুরনো জায়গা থেকে নাম সরানোর জন্য ফর্ম ৮ পূরণ করে আবেদন করতে হয়।
যদি এটা প্রমাণিত হয় যে প্রশান্ত কিশোর ইচ্ছাকৃতভাবে দুটি রাজ্যেই নিজের নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন এবং পুরনো নাম সরানোর জন্য নিয়ম মেনে আবেদন করেননি, তবে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাকে অযোগ্য ঘোষণা করার প্রক্রিয়াও শুরু করতে পারে।
এই বিতর্ক নিয়ে প্রশান্ত কিশোর নিজে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে, তার দল 'জন স্বরাজ'-এর এক সিনিয়র সদস্য সাফাই দিয়ে বলেছেন যে, “পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের পর প্রশান্ত কিশোর বিহারে ভোটার কার্ড তৈরি করিয়েছিলেন এবং পশ্চিমবঙ্গের কার্ডটি বাতিল করার জন্য আবেদনও করেছেন। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।” যদিও, দলটি স্পষ্ট করতে পারেনি যে পশ্চিমবঙ্গের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে কি না।
এদিকে, সিপিআইএম দাবি করেছে যে তারা গত বছরই এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলেছিল। সিপিএম নেতা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, "আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম যে প্রশান্ত কিশোর এখানকার বাসিন্দা নন, তাই তার নাম ভোটার তালিকা থেকে সরানো হোক।"
এই বিতর্কটি এমন এক সময়ে সামনে এসেছে যখন নির্বাচন কমিশন (EC) সারা দেশে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) অভিযানের অধীনে ডুপ্লিকেট ভোটারদের শনাক্ত করার কাজ করছে। শুধুমাত্র বিহারেই এই অভিযানের সময় ৬৮.৬৬ লক্ষ নাম সরানো হয়েছে, যার মধ্যে ৭ লক্ষ ভোটার এমন ছিলেন যারা দুটি জায়গায় নথিভুক্ত ছিলেন। এখন সকলের নজর এই দিকেই যে বিহার নির্বাচনের ঠিক আগে শুরু হওয়া এই বিতর্কে প্রশান্ত কিশোরের আইনি দল কী পদক্ষেপ নেয় এবং নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়।