উপলক্ষ ছিল কার্গিল যুদ্ধ জয়ের কুড়ি বছর পূর্তির উদযাপন অনুষ্ঠান। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর গলায় শোনা গেল সব ধর্ম, সব জাতির মানুষের কথা। মোদী সরকারের আমলে সংখ্যালঘু, দলিতদের উপরে অত্যাচার যখন বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ, তখন প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এ দিন শহিদদের সম্মান জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেমন কার্গিল যুদ্ধে শহিদ হিমাচল প্রদেশের বিক্রম বাতরার কথা বলেছেন, একই সঙ্গে স্মরণ করেছেন দিল্লির হানিফুদ্দিনকে। শহিদ জওয়ানদের বলিদানের কথা স্বীকার করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, গোটা দেশের জন্যই আত্মত্যাগ করেছিলেন জওয়ানরা। যা কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। দেশপ্রেমের জিগিড় তুলে যখন গণপিটুনির ধর্মীয় হিংসার ঘটনা বাড়ছে, তখন প্রধানমন্ত্রী এ হেন বার্তা সরকারের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে প্রতিষ্ঠা করার মরিয়া চেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।
এ দিন নরেন্দ্র মোদী বলেন, 'দেশ সুরক্ষিত হলেই উন্নয়নের শীর্ষ স্তরকে ছোঁয়া সম্ভব হবে। কিন্তু দেশ নির্মাণ করতে গেলে অনেকগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ১৯৪৭- এ কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম, বর্ণের মানুষ স্বাধীন হননি। সারা দেশ হয়েছিল। সংবিধান রচিত হয়েছিল গোটা দেশের জন্য। কুড়ি বছর আগে কার্গিলে যে পাঁচশো সেনা শহিদ হয়েছিলেন, তাঁরা কাদের জন্য বলিদান দিয়েছিলেন? দিল্লির হানিফুদ্দিন বা হিমাচলপ্রদেশের বিক্রম বাতরারা নিজেদের জন্য নয়, গোটা ভারতের জন্য বলিদান দিয়েছিলেন। এই বলিদান, আত্মত্যাগ আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। শহিদদের স্বপ্নের ভারত গড়তে আমাদেরও জীবন নিয়োজিত করতে হবে।'
গত ২৩ জুলাই দেশে সংখ্যালঘু এবং দলিতদের উপরে বাড়তে থাকা হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন ৪৯জন বিশিষ্ট মানুষ। তারই পাল্টা হিসেবে শুক্রবার আরও ৬২ জন বিশিষ্ট প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে প্রথম চিঠির বিরোধিতা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিতেই প্রধানমন্ত্রী কার্গিল বিজেয় দিবসের মঞ্চকে বেছে নিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরা মোদী সরকারের অন্যতম স্লোগান ছিল সবার বিশ্বাস অর্জন করা। দেশে বাড়তে থাকা সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা যে মোদী সরকারের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নয়, তা সম্ভবত নরেন্দ্র মোদীও বুঝতে পেরেছেন।