Roundup 2021: অক্সিজেন সংকট থেকে কালোবাজারি, কোভিড-১৯-র দ্বিতীয় তরঙ্গে সাক্ষী থেকেছে ভারত

একটি পরিসংখ্যনে দেখা যাচ্ছে এপ্রিল সামে দেশে হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা। ১২ এপ্রিল দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা ছিল ৩৮৪২ মেট্রিকটন। ২৫ এপ্রিল তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪০০ মেট্রিকটনে।

Web Desk - ANB | Published : Dec 27, 2021 11:06 AM IST / Updated: Dec 28 2021, 05:23 PM IST

প্রায় ২ বছর ধরে ভারতসহ গোটা বিশ্ব করোনাভাইরাসের (Coronavirus) মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। এই লড়াইয়ে বিশ্ব যেমন লকডাউনের ভয়ঙ্কর দিনগুলির সাক্ষী থেকেছে, তেমনই ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকল দেশই দেখা দিয়েছিল অক্সিজেন (Oxygen), ওষুধ, হাসপাতাল শয্যার সংকট। কোভিড-১৯(Covid-19) এর প্রথম তরঙ্গে তেমন ভয়াবহ আকার নেয়নি ভারতে। কিন্তু দ্বিতীয় তরঙ্গের ভয়ঙ্কর স্মৃতির ২০২১ সালকে অনেক দিনে মনে রাখতে এই দেশের বাসিন্দারা। এপ্রিল-মে মাসে যেমন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছিল, পাল্টা দিয়ে বেড়েছিল মৃত্যুর  সংখ্যাও। এই অবস্থায় হাসপাতাল শয্যা আর অক্সিজেনের জন্য মানুষকে হন্য হতে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল। তবে সবথেকে মারাত্মক প্রভাব পড়েছিল দেশের জাতীয় রাজধানী দিল্লিতে। 

দেশের বেশ কিছু ট্র্যাকারে দাবি করা হয়েছে দ্বিতীয় তরঙ্গ অর্থাৎ ২০২১ সালে মাঝামাঝি এই দেশে শুধুমাত্র অক্সিজেনের অবাবে মৃত্যু হয়েছে ৫১২ জনের। তবে কেন্দ্রীয় সরকার অবস্য এই দাবি মানতে নারাজ। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছিল দেশে পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুত রয়েছে। অক্সিজেন ট্র্যাঙ্কার বিতরণ নেটোযার্কে সমস্যা থাকায় অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। 

একটি পরিসংখ্যনে দেখা যাচ্ছে এপ্রিল সামে দেশে হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা। ১২ এপ্রিল দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা ছিল ৩৮৪২ মেট্রিকটন। ২৫ এপ্রিল তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪০০ মেট্রিকটনে। চলতি বছর মে মাসের শুরুতে এই দেশে মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা পৌঁছে গিয়েছিল ১১ হাজার মেট্রিকটনে। সেই সময় দেশে ক্রায়োজেনিক ট্যাঙ্কারের সংখ্যা ছিল ১,২০০টি। যা দেশের চাহিদা মত মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারেনি। তবে রাজ্যের প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল অক্সিজেন আনতে উত্তর প্রদেশসহ বেশ কিছু রাজ্য তরল বা গ্যাসবাহী ট্যাঙ্কারে করে মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ করতে শুরু করেছিল। তবে সেই সময় টাটা, রিলায়েন্স, আদানি- মত দেশের প্রথম সারির শিল্প সংস্থার গুলির পাশাপাশি ছোট ছোট শিল্প সংস্থাগুলিও দেশের মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে তাদের প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু করেছিল। কেন্দ্রীয় সরকার ট্রেনে করেও মেডিক্যাল অক্সিজেন এক স্থান থেকে অন্যত্র পাঠিয়েছিল। অক্সিজেন ট্রেন চালু করেছিল রেল। 

পরিস্থিতি সামাল দিকে কেন্দ্রীয় সরকার দেশেই মেডিক্যাল অক্সিজেন প্ল্যান্টের সংখ্যা রাতারাতি বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য করা হয়েছিল। তবে ভারতের এই সংকটের সময় প্রতিবেশী দেশগুলি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিদেশ থেকে এসেছিল মেডিক্যাল অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় জিনিস। 

করোনাভাইরাসের প্রথম তরঙ্গের সময় মহারাষ্ট্র, কেরল, তামিলনাড়ুর মত কয়েকটি রাজ্যে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় এই ঘাতটি বিশাল আকার নিয়েছিল। দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় অক্সিজেনের ঘাটতে দেখা দিয়েছিল দিল্লি, উত্তর প্রদেশসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায়। 

মেডিক্যাল অক্সিজেনের কালোবাজারিও দেখা দিয়েছিল দ্বিতীয় তরঙ্গের সময়। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোজান না থাকায় মেডিক্যাল অক্সিজেনের কন্টেনারগুলির দাম দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কন্টেনার পিছু দাম উঠেছিল ৩৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা। দিল্লি, চেন্নাই, কলকাতার মত মেট্রোসিটিগুলিতে অক্সিজেন গ্যাস সিলিন্ডারের কালোবাজারি চলেছে রমরমিয়ে। সেই সময় এমনই ছবি দেখা গেছে যেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে করোনা-আক্রান্ত রোগীর পরিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা জন্য নিয়ে এসেছে। 


ভয়াবহ এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অক্সিজেন রেশনিংএর দিকে ঝুঁকেছে। আমেরিকা-ইংল্যান্ডের মত দেশগুলি হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করেছেন। সেইমত এই দেশেই সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করার হয়েছে। মেডিক্যাল অক্সিজেনের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা দেখের জন্য নজরদারি ব্যবস্থা আরও কড়া করা হয়েছিল। রাজ্যসরকারগুলিও প্রতিটি জেলার জন্য অক্সিজেন বরাদ্দ করে দিয়েছিল। অক্সিজেন অপচয় রুখতে একগুচ্ছ পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছিল। 

যাইহোক অক্সিজেন সমস্যা সমাধানে ২০২১ সালের জুন মাসে প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার অফিসের সরাসরি নির্দেশে 'প্রজেক্ট 02ফর ইন্ডিয়া' চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের মাধ্যেই দেশে তৈরি হয়েছে একাধিক অক্সিজেন প্ল্যান্ট। বর্তমানে দেশে মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদনে প্রায় সাবলম্বী। বর্তমানে বেশরকারি সংস্থাগুলিও অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি বেশ কয়েক রাজ্যও এই বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। 

Share this article
click me!