৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বাবরি মসজিদকে (Babri Mosque)। প্রায় ৩ দশক পর সেই দিনেই হুমকির মুখে মথুরা মসজিদ (Mathura Mosque)।
৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে কিছু ধর্মোন্মাদের বর্বরোচিত হামলায় ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল বাবরি মসজিদ (Babri Mosque)। তারপর প্রায় ৩ দশক কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে অন্যায় মেনেও, সেখানে রাম মন্দির (Ajodhya Ram Mandir) তৈরির অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court of India)। আবার, বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায়, বেকসুর খালাস হয়েছেন অভিযুক্তরা সকলেই। আর বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির বিতর্কের এই সরল সমাধান হয়ে যাওয়ার পর ফোকাস এখন মথুরায় (Mathura)। তার উপর, পরের বছরের গোড়াতেই উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন (Uttar Pradesh Elections 2022)। সোমবার, তাই বাবরি ধ্বংসের বার্ষিকিতে (Babri Demolition Anniversary), নজিরবিহীন নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে মথুরাকে।
রবিবারই, পুলিশের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট গৌরব গ্রোভার জানিয়েছেন, গোটা মথুরাতেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কোনওভাবেই যাতে শান্তি ভঙ্গ না হয়, তার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। ৬ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্টান বাবরি ধ্বংসের দিনে কৃষ্ণ জন্মভূমিতে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে এই সবকটি সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছে। সেই কর্মসূচিগুলি বাতিল করানো হয়েছে। মথুরার মন্দির এবং শাহি ইদগাহের চারপাশে একটি নিরাপত্তার বর্ম তৈরি করেছে উত্তর প্রদেশ পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী ও ধর্মীয় নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনওরকম আপত্তিকর পোস্ট যাতে কেউ না করে, তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতেও নজরদারি করা হচ্ছে। শনিবারই, সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর বিষয়বস্তুর পোস্ট করার দায়ে চারটি মামলা নথিবুক্ত করে এবং বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে হুমকির মুখে থাকা মথুরা
স্থানীয় পুলিশ আরও জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি ধর্মীয় গোষ্ঠীও এইদিনে মথুরায় কিছু অনুষ্ঠান করার অনুমতি চেয়েছিল প্রশাসনের কাছে। তাদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী দাবি করেছিল, মথুরা মন্দিরের কাছে অবস্থিত মসজিদ প্রাঙ্গনই ভগবান কৃষ্ণের 'প্রকৃত জন্মস্থান'। তাই, বাবরি ধ্বংসের দিনে, তারা সেখানে একটি কৃষ্ণ মূর্তি স্থাপন করতে চায়। তারা জানিয়েছিল স্থানটিকে 'শুদ্ধ' করতে তারা প্রথমে 'মহা জলাভিষেক' করবে। তারপর শাহি ইদগাহে মূর্তি স্থাপন করবে। বলাই বাহুল্য প্রশাসন তার অনুমতি দেয়নি। জেলাশাসক নবনীত সিং চাহাল বলেন, এলাকার শান্তি ব্যাহত করতে পারে, এমন কোনও অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে, তারপরও ওই ধর্মীয় গোষ্ঠী মসজিদ প্রাঙ্গনে এসে শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ প্রশাসন।
এই করল সুরক্ষাজনিত হুমকির প্রেক্ষিতে, নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিচ্ছিদ্র করতে মথুরা জেলাকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। মথুরায় ঢোকার প্রতিটি প্রবেশ পথে পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার থেকেই, যারাই জেলায় ঢুকতে চাইছেন, তাদের পুলিশের কড়া তল্লাশি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বাবরি ধ্বংসের দিনটি না পার করা অবধি ঘুম নেই মথুরা জেলা প্রশাসনের চোখে।