ভারতে কি এটাই প্রথম ড্রোন হামলা? তাহলে কি পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হাতে পৌঁছে গিয়েছে ড্রোন ? একাধিক আশঙ্কা উসকে দিচ্ছে জম্মু বিমানবন্দরের রবিবারের বিস্ফোরণ। এর আগে একাধিকবার বার সীমান্ত দিয়ে ড্রোন উড়তে দেখা গিয়েছে, এমনও ঘটনা ঘটেছে বিএসএফ গুলি করে নামিয়েছে ড্রোনকে। এমনকী কাশ্মীর উপত্যকায় ড্রোন দিয়ে অস্ত্র পাচারের ঘটনাও নতুন নয়। কিন্তু ড্রোন দিয়ে নাশকতা মূলক হামলা ? তা বোধহয় ভারতের মাটিতে এই প্রথম ঘটল।
যে ধাঁচে জম্মু বিমানবন্দরে হামলা চলল, তা চিন্তায় ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানাচ্ছেন এর আগে কখনও ড্রোন দিয়ে হামলা হয়নি ভারতে। তাহলে কী এবার আরও বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ আকাশপথে হামলা চালানোর জন্য ড্রোন ব্যবহৃত হলে, তা বেশ আশঙ্কার। এতে কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সন্ধান মিলবে না, যতক্ষণ না কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ভবিষ্যতের যুদ্ধের নকশা বদলে দেবে এই ড্রোন হামলা। বিশেষত আনম্যানড ড্রোন দিয়ে হামলা সমস্যা আরও বাড়াতে পারে।
বিশ্বের প্রথম ড্রোন হামলা
২০১৮ সালে পশ্চিম সিরিয়ায় তৈরি রাশিয়ার খেমেইমিম এয়ারবেসে হামলা চালানোর পরিকল্পনা হয়েছিল ড্রোনের মাধ্যমে। প্রায় ১৩ টি ড্রোন ঝাঁক বেঁধে এয়ারবেসের খুব কাছ দিয়ে উড়ছিল, আচমকাই নজরে পড়ে জওয়ানদের। সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালায় এয়ার ডিফেন্স অপারেটররা। সাতটি ড্রোনকে গুলি চালিয়ে নামানো হয়। ৬টি ড্রোনকে জ্যাম করে দেওয়া হয় তখনই।
তাই এই ঘটনাকেই বিশ্বের প্রথম ড্রোন হামলা বলা যেতে পারে। এরপর ২০১৯ সালে ও ২০২০ সালে প্রায় ১৫০টি ড্রোন রাশিয়া নিষ্ক্রিয় করেছে। ২০১৯ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর সৌদি আরামকো তেল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে ২৫টি ড্রোন হামলা চালিয়েছিল। তবে সৌদি এয়ার ডিফেন্স তা কোনওক্রমে আটকে দেয়।
তালিবানদের হাতে ড্রোন
ইসলামিক স্টেট বা তালিবানরা প্রায়ই ড্রোন ব্যবহার করে। অস্ত্র পাচার বা অর্থের লেনদেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করে এই জঙ্গি সংগঠনগুলি। এক্ষেত্রে ধরা পড়লেও দলের লোকবলের ক্ষতি হয় না। ড্রোন দিয়ে হামলা চালানোও তাদের জন্য নিরাপদ বলে গণ্য করে জঙ্গি সংগঠনগুলি।
উল্লেখ্য, মাত্র ৫ মিনিটের ব্যবধানে পরপর দুটি বিস্ফোরণ হয় জম্মু বিমানবন্দরে। রবিবার ভোররাতে কেঁপে উঠল জম্মু বিমানবন্দরের টেকনিক্যাল এরিয়া। ড্রোনের সাহায্যে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়। এই ঘটনায় দু'জন জওয়ান জখম হয়েছেন। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বম্ব স্কোয়াডের আধিকারিকরা। পৌঁছে গিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে তারা।
জম্মু বিমানবন্দরের রানওয়ে ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ভারতীয় বায়ুসেনার অধীনস্থ। সেখান থেকে যাত্রীবাহী উড়ানও চলাচল করে। সেখানেই টেকনিক্যাল এরিয়া কাছে রবিবার ভোররাতে ৫ মিনিটের ব্যবধানে ২টি বিস্ফোরণ হয়। প্রথম বিস্ফোরণটি হয় রাত ১টা ৩৭ মিনিটে। আর দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে খোলা জায়গায়, রাত ১টা ৪২ মিনিটে।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণ তীব্রতা খুব বেশি না হলেও দু’কিলোমিটার দূর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। আর বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য ৪ কেজি ৭০০ গ্রাম আইইডি ব্যবহার করা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।