বাদল অধিবেশনের তৃতীয় দিনও লোকসভা ও রাজ্যসভায় দুই কক্ষই উত্তাল হল পেগাসাস, কৃষি আইন ও আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। সবথেকে বেশি নাটকীয় মুহূর্ত অবশ্য তৈরি করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডাক্তার শান্তনু সেন।
বৃহস্পতিবার, সংসদের বাদল অধিবেশনের তৃতীয় দিনও লোকসভা ও রাজ্যসভায় দুই কক্ষই উত্তাল হল পেগাসাস, কৃষি আইন ও আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধীদের বিক্ষোভে। তবে তার মধ্য়েও সবথেকে বেশি নাটকীয় মুহূর্ত তৈরি হল রাজ্যসভায়। আর সেটি তৈরি হল তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডাক্তার শান্তনু সেন-এর সৌজন্যে।
কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব পেগাসাস স্পাইওয়্য়ারের মাধ্যমে নজরদারি নিয়ে নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ার জন্য উঠতেই তৃণমূলের সাংসদ ডাক্তার শান্তনু সেন তাঁর হাত থেকে বিবৃতিপত্রটি ছিনিয়ে নিয়ে তা উপ-চেয়ারম্যানের দিকে ছুঁড়ে মারেন। তীব্র হই-হট্টোগোলের মধ্যেই অবশ্য তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী তাঁর বিবৃতি রাখেন। তবে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরির সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন শান্তনু সেন।
শান্তনু সেনের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেছে বিজেপি। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মিনাক্ষী লেখি বলেছেন, 'এই ধরণের আচরণ গণতন্ত্র আগে কখনও দেখেনি।' বিজেপি সাংসদ মহেশ পোদ্দার
বলেছেন, 'বাংলায় তারা যখন প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে এবং মহিলাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারে, তখন তারা সব কিছুই করতে পারে। আজ ওরা কাগজ ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে, আগামীকাল যদি জামাকাপড় ছিঁড়ে দেয় অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না'। আরেক বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, 'আইটি মন্ত্রী বিবৃতি দেওয়ার পরে আপনার তাঁকে প্রশ্ন করার অধিকার ছিল। কিন্তু বিতর্কে যাওয়ার পরিবর্তে, আমরা কি এই ধরণের গুন্ডামি দেখব হাউসের মধ্যে? এটি সম্পূর্ণরূপে নিয়মবিরুদ্ধে।'
এমনকী সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রাম গোপাল যাদবও, বলেছেন, কেউ যদি হাত থেকে কাগজ ছিনিয়ে নেয় তবে তা ঠিক নয়।' অন্যদিকে, তৃণমূল সাংসদ শুখেন্দুশেখর রায়, এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
শেষে শুক্রবার পর্যন্ত স্থগিত করে দেওয়া হয় রাজ্যসভা। অবশ্য আগে বিরোধী সাংসদরা ওয়েলে নেমে ঘুরে ঘুরে স্লোগান দিচ্চিলেন, প্ল্যাকার্ড দেখাচ্ছিলেন বলে, আরও দুবার মুলতুবি রাখতে হয়েছিল রাজ্য সভা - প্রথমে দুপুর ১২টা এবং পরে দুপুর ২টো অবধি। পরে অধিবেশন শুরু হতে না হতেই কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং এদিন এক হিন্দি দৈনিক সংবাদপত্রের অফিসে আয়কর বিভাগের হানার বিষয়টি তোলার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে তৃণমূল সাংসদরা-সহ বিরোধী অন্যান্য সাংসদরা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, সাংবাদিক এবং সমালোচকদের উপর নজরদারির বিষয়টি তোলেন।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম বেঙ্কাইয়া নাইডু দিগ্বিজয় সিং-কে বলেন, এটা রাজ্যসভায় কথা বলার পদ্ধতি নয়। চেয়ারম্যানেরঅনুমতি নিতে হবে। তিনি অনুমতি না দিলে কেউ এভাবে কথা বলতে পারেন না। এরপর বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, 'সাংসদরা জনগণের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নন বলে মনে হচ্ছে।' তারপরইএদিনের মতো অধিবেশন স্থগিত করে দেন।
আরও পড়ুন - আমার-আপনার মোবাইল-কম্পিউারেও কি আড়ি পাততে পারে সরকার, কী বলছে ভারতের আইন
আরও পড়ুন - 'পেগাসাস, মোদীর নাভিশ্বাস', সুপ্রিম কোর্টকে সুয়োমোটো মামলা করার আবেদন মমতার
আরও পড়ুন - পেগাসাস কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড় - আদৌ কি নজরদারির শিকার রাহুল গান্ধীরা, উঠছে প্রশ্ন
অন্যদিকে লোকসভাও এদিন দুবার মুলতবি রাখতে হয়েছে। প্রথমে স্পিকার ওম বিড়লা দুপুর ১২ টা অবধি লোকসভা স্থগিত রাখেন। তারপর প্রশ্নোত্তর পর্ব মাত্র ১২ মিনিট চলার পরই ফের সভার কাজ বন্ধ রাখতে হয়। কংগ্রেস এবং শিরোমণি অকালি দলের নেতারা বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে সরকারকে নিশানা করেন, অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদরা স্পিকারের আসনের সামনে গিয়ে পেগাসাস বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জবাব দাবি করতে থাকেন। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী বারবার সভায় জানান, সরকার যে কোনও বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। সাংসদদের নিজ নিজ আসনে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন স্পিকার। কিন্তু, বিরোধীদের বিক্ষোভ তাতে থামেনি।