POK: কার ভুলে হাতছাড়া পাক অধিকৃত কাশ্মীর? জানুন অতীত ইতিহাস

Published : Apr 28, 2025, 10:09 AM IST
Asianet News

সংক্ষিপ্ত

India Pakistan Conflict: ভারত-পাকিস্তান। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া এই দুই দেশের দ্বন্ধ যেন নতুন কিছু নয়। সময় যত গড়িয়েছে ততই প্রকাশ্যে এসেছে পাকিস্তানে

India Pakistan Conflict: ভারত-পাকিস্তান। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া এই দুই দেশের দ্বন্ধ যেন নতুন কিছু নয়। সময় যত গড়িয়েছে ততই প্রকাশ্যে এসেছে পাকিস্তানের একের পর এক ভারত বিরোধী কার্যকলাপ (India Pakistan Controversy)। কিন্তু যার নাম শুনলে রাগ হয়। সেই দেশ অর্থাৎ পাকিস্তান কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল জানেন? (Pakistan Freedom History)। এর কারণ জানতে হলে আপনাকে কয়েক বছর আরও পিছিয়ে যেতে হবে।

সালটা তখন ১৯৪৭। ব্রিটিশ সরকার ভারত ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে অখণ্ড ভারত ধর্মের ভিত্তিতে দু’টুকরো হয়ে যায়। তখনই ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় দুটি দেশ তা হল- ভারত ও পাকিস্তান। একটু ইতিহাস ঘাঁটলে জানতে পারবেন সেই সময় অখণ্ড ভারতে অন্তত ৫৬৫টি ছোট ছোট প্রিন্সলি স্টেট ছিল। আর এই প্রত্যেক স্টেটের এক একজন করে রাজা বা নবাব ছিলেন। শুধু তাই নয়, ইংরেজরা যখন ভারত শাসন করত তখন এই সব রাজা বা নবাবরা ব্রিটিশ শাসনের আওতায় থেকে বার্ষিক ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিজের মতো করে রাজ্য চালাতেন।

জানা যায় যে, ব্রিটিশরা যখন ভারত ছাড়ছিল তখন স্বাধীনতার সময় এই সব প্রিন্সলি স্টেটের শাসকদের সুযোগ দেওয়া হয়, তারা কে কোন দেশের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান, তা বেছে নিতে পারেন। কেউ চাইলে আবার স্বাধীনও থাকতে পারেন। দেওয়া হয় এই প্রস্তাবও।

শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ সরকার ভারত ছাড়ার আগে এই সব প্রিন্সলি স্টেটগুলির কোন কোন স্টেট ভারতের সঙ্গেই সংযুক্ত থাকতে চেয়েছিল। আবার কোনও কোনও স্টেটের শাসক সাফ জানিয়ে দিয়েছিল যে, তারা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই। সেই সময় অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতার প্রাক্কালে বিকানেরের মহারাজা, সর্দার সিং, সবার আগে ভারতের সঙ্গে থাকতে রাজি হন। কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর রাজ্যের পড়শি পাকিস্তানের সঙ্গে থাকার চেয়ে ভারতের সঙ্গে থাকলে দীর্ঘমেয়াদী লাভ বেশি।

শুধু তাই নয়, স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ভারতের 'লৌহপুরুষ' সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল তাঁর সচিব ভিপি মেননকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রিন্সলি স্টেটগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। সে সময় তিনি পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও শেষ ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের প্রত্যক্ষ সমর্থন। মূলত সর্দার প্যাটেলের সৌজন্যেই আজকে আধুনিক ভারতের মানচিত্র তৈরি সম্ভব হয়েছে। স্বাধীন ভারতে নিশ্চিন্তে বাস করতে পারছি আমরা।

ইতিহাসের পাতা ওল্টালে জানা যাবে যে, ভি পি মেনন ও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সক্রিয়তায় অধিকাংশ প্রিন্সলি স্টেটই ভারতের সঙ্গে থাকতে রাজি হয়। ভবিষ্যতের কথা ভেবে, সর্দার প্যাটেল প্রিন্সলি স্টেটের শাসকদের দিয়ে Instrument of Accession-এ স্বাক্ষর করিয়ে নেন। যেখানে বলা হয়, প্রতিরক্ষা, বিদেশনীতির মতো বিষয় থাকবে কেন্দ্রের হাতে। আর রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থা থাকবে রাজ্যের শাসকের হাতে। আজও ভারতে এমনটাই চলে আসছে। কিন্তু যত সহজে এই ইতিহাস আজ ঘুরে দেখছি, সেদিন বাস্তবে কাজটা তত সহজ ছিল না। কারণ, হায়দরাবাদ, জুনাগড়, কাশ্মীরের মতো রাজ্য ভারতের সঙ্গে জুড়তে বেঁকে বসে। এখানেও সমস্যা মেটাতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন সেদিনের সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল।

১৯৪৮ সালে সেনাবাহিনীর সাহায্যে 'অপারেশন পোলো'-র মাধ্যমে হায়দরাবাদকে ভারতের সঙ্গে জুড়ে নেওয়া হয়। জুনাগড় যুক্ত হয় গণভোটের মাধ্যমে। ১৯৪৯ সালের মধ্যে প্রায় সব প্রিন্সলি স্টেটই ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়, কিন্তু কাঁটা হয়ে রয়ে যায় কাশ্মীর। সেই থেকেই শুরু কাশ্মীর সমস্যার। কারণ, কাশ্মীরের বাসিন্দারা বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম, কিন্তু কাশ্মীরের শাসক ছিলেন একজন হিন্দু। মহারাজা হরি সিং। তিনি অবশ্য কাশ্মীরকে স্বাধীন রাজ্য হিসাবেই রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর একার পক্ষে এই কাজ সহজ ছিল না। কারণ, মুসলিম অধ্যুষিত একটি রাজ্যের শাসক একজন হিন্দু হওয়ায় রাজ্য চালানো তাঁর পক্ষে সহজ ছিল না। কাশ্মীর প্রভিন্সের উপত্যকা ও মুজফফরবাদ জেলায় ৯০ শতাংশ বাসিন্দা ছিলেন মুসলিম। অন্যদিকে, জম্মুর পাঁচটি জেলার মধ্যে পূর্বের উধমপুর, জম্মু ও রিয়াসিতে হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যা ছিল প্রায় সমান সমান। কিন্তু পশ্চিমের মীরপুর ও পুঞ্চ ছিল মুসলিম অধ্যুষিত। লাদাখ জেলায় ছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাধান্য, বাল্টিস্তানে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল বেশি।

এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হয় ১৯৪৭-এর অক্টোবরে। যখন নতুন পড়শি পাকিস্তানের পশতুন উপজাতির হামলাকারীরা কাশ্মীর আক্রমণ করে বসে ও আধিপত্য স্থাপন করতে চায়। এই কাজে পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন সেনা অফিসাররাও যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পাক সেনাকর্তাদের আশঙ্কা ছিল, অবিলম্বে কাশ্মীরের দখল না নিলে হয়তো ভবিষ্যতে রাজ্যটি ভারতের সঙ্গে জুড়তে চাইবে। বিষয়টি বুঝতে পেরে আতঙ্কিক হয়ে পড়েন হরি সিং। তিনি অবিলম্বে Instrument of Accession-এ স্বাক্ষর করতে রাজি হন। বিনিময়ে ভারতের কাছ থেকে সেনা সাহায্য চান। ২৬ অক্টোবর মহারাজা হরি সিং ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর করেন এবং ভারতীয় সেনাও পাক সমর্থিত হানাদারদের পিছু হটাতে বাধ্য করে। সেই সময় শ্রীনগরে সেনাকে দ্রুত পৌঁছে দিতে তাঁদের এয়ারলিফট করা হয়।

এদিকে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে জুড়ে যাওয়ায় পাকিস্তান ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়ে। এরপর থেকে নানাভাবে কাশ্মীর দখল করতে চায় করাচি। স্বর তুলতে থাকে যে, কাশ্মীরের মুসলিমরা নাকি ভারতের সঙ্গে থাকতে চায় না। দ্রুত হামলা বদলে যায় পুরোদস্তুর সেনা আগ্রাসনে। আদিবাসী লস্কর জঙ্গিদের সঙ্গে পাক সেনাও কাশ্মীর সীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে চায় নানাভাবে। যারফলে প্রথম ইন্দো-পাক যুদ্ধ (১৯৪৭-৪৮), যাকে কাশ্মীর যুদ্ধও বলা হয়। ১৯৪৮ সালের মে মাসে পাক সেনা জম্মু আক্রমণ করে ও মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে রাজ্যের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চায়। রক্তক্ষয়ী সেই সংঘর্ষে ভারতের অন্তত ১১০৪ জন সেনা শহীদ হন।

আহত হন আরও ৩১৫৪ জন। কিন্তু বীর ভারতীয় জওয়ানরা সেদিন পাক সেনার জবরদখল থেকে দুই তৃতীয়াংশ জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে, পাকিস্তান দখল করে রাখে গিলগিট-বাল্টিস্তানকে। সেই সময় যুদ্ধে পাকিস্তানেরও প্রায় ৬০০০ সেনা মারা যায়। জানা যায়,

যুদ্ধ চলাকালীন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু উপত্যকায় আরও সেনা, অস্ত্রশস্ত্র না পাঠিয়ে হঠাৎ রাষ্ট্রসংঘের দ্বারস্থ হন এবং মধ্যস্থতার দাবি করে বসেন। এখানেই শুরু বিতর্ক। ঐতিহাসিকদের একটা বড় অংশই এই সিদ্ধান্তের জন্য নেহেরুর সমালোচনা করেন। তাঁদের বক্তব্য, হয়তো নেহেরু যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক মহলকে এই বার্তায় দিতে চেয়েছিলেন যে ভারত বরাবর শান্তির পক্ষে। কিন্তু রাষ্ট্রসংঘের দ্বারস্থ হয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে তিনি আন্তর্জাতিক দরবারের মাঝে নিয়ে গিয়ে ফেলেন। এবং পাকিস্তান তারপর থেকে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপকেই ঢাল করে আসছে। ১৯৪৯-এর পয়লা জানুয়ারি রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় লাইন অফ কন্ট্রোল(LoC)। এই লাইন অফ কন্ট্রোলই কাশ্মীরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। একদিকে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর (J&K), অন্যদিকে পাক অধিকৃত কাশ্মীর (PoK।

কাশ্মীর কার সঙ্গে থাকতে চায় তা জানতে রাষ্ট্রসংঘ গণভোটেরও প্রস্তাব দেয় কিন্তু তা আজ অপর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৫৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত, কাশ্মীরের স্পেশাল স্টেটাস প্রত্যাহারের আগে পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের বিশেষ ধারা ৩৭০ কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হত। কাশ্মীরের জন্য ছিল আলাদা আইন, সম্পত্তির মালিকানার সংক্রান্ত আলাদা নিয়ম। কিন্তু ভারত সরকার এই বিষয়ে বহুবার স্পষ্ট করেছে যে, কাশ্মীরের ভারতে আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তিই চূড়ান্ত। কিন্তু পাকিস্তান সে কথা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, দমনপীড়ন চালিয়ে কাশ্মীর দখল করে রেখেছে ভারত। আসলে কাশ্মীরের মুসলিমরা পাকিস্তানের সঙ্গেই থাকতে চায়।

অন্যদিকে, এই বিষয়ে ভারত একাধিকবার স্পষ্ট করেছে যে, ইসলামাবাদ বরাবর ঢাল করে এসেছে রাষ্ট্রসংঘের তোলা গণভোটের যুক্তিকে। তারপরেও পাকিস্তান ১৯৬৫, ১৯৭১, ১৯৯৯-তেও কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে দখলের চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় সেনার হাতে প্রতিবারই তাদের সেই স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সামনা সামনি ভারতের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে, পাকিস্তান এখন অনুপ্রবেশ, জঙ্গিহানাকে ঢাল করে কাশ্মীর দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই বিষয়ে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের উপর জঙ্গি হামলা। পাকিস্তানের এই নৃশংস আচরণ আরও একবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বুকে আবার দাবি তুলে দিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখলের।

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।

PREV
Read more Articles on
click me!

Recommended Stories

LIVE NEWS UPDATE: IndiGo উড়ান পরিষেবায় অচলাবস্থা অব্যাহত, সমস্যায় যাত্রীরা
পুতিনকে দেওয়া মোদীর ৬টি উপহার দেখুন ছবিতে, তালিকায় রয়েছে বাংলার বিখ্যাত এই জিনিসটি