প্রাক্তন সৈনিকরা নতুন অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে বিরক্ত, এটি কোনো বলিউডের সিনেমা নয় বললেন তারা

অবসর-পরবর্তী সুবিধা ছাড়াই চার বছর যুবকদের সেনা বাহিনীতে নিয়োগের অগ্নিপথ প্রকল্পের সরকারী ঘোষণার সাথে সহমত নন প্রাক্তন সেনা অফিসাররা।

Senjuti Dey | Published : Jun 15, 2022 10:21 AM IST

সশস্ত্র বাহিনীকে তরুণ, উদ্যমী এবং আধুনিক করার অভিপ্রায়ে, নরেন্দ্র মোদী সরকার মঙ্গলবার যুবকদের জন্য অগ্নিপথ প্রকল্প ঘোষণা করেছে যাতে অবসর-পরবর্তী সুবিধা ছাড়াই চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে।

সরকার জানিয়েছে যে পরিকল্পনাটি একটি রূপান্তরমূলক সংস্কার যা প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ সৈন্যদের সাথে তরুণ প্রোফাইলকে সংযুক্ত করবে যা দেশের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করবে।

সরকারের মতে, এই স্কিমটি দেশের তরুণ প্রতিভাদের গর্বের সাথে তাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করার সুযোগ দেবে।

কিন্তু বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ সৈনিক সরকারের এই পদক্ষেপের সাথে একমত নন। এশিয়ানেট নিউজেবল তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলেছেন।
১. মেজর জেনারেল যশ মোর (অব.): প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ

'এটি একটি অ-বাস্তবায়নযোগ্য স্কিম। প্রথম ক্যাডেট নিয়োগ করতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগবে। মানবসম্পদ নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে, এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অগ্নিবীর এবং অগ্নিপথ বলে ডাকলে চলবে না। এটি একটি বিপর্যয়।

"আপনি কীভাবে বিচার করবেন কোন ২৫ শতাংশ গ্রহণ করা হবে এবং কোন ৭৫ শতাংশ ফেরত পাঠানো হবে? এর কোন প্যারামিটার নেই এবং চার বছর খুব কম সময়। আমরা এতো কম সময়ে তাদের বিশেষীকরণ বা প্রশিক্ষণও দিতে পারবা না। তার ফলে হাজার হাজার তরুণ চার বছর পর সম্পূর্ণ অসন্তুষ্ট হয়ে রাস্তায় নেমে পরবে। চার বছর পরে, তারা কলেজেও ফিরে যেতে পারবে না এবং নতুন করে পড়াশোনাও করতে পারবে না। তারা নিজেদের জীবনে কোনো উন্নতিও করতে পারে না এবং কেউ তাদের বাহিনীতে দক্ষ করেও তুলতে পারবে না। 

'দীর্ঘমেয়াদের দিক থেকে ভাবলে এটি অনেক বড় ব্যর্থতাতে পরিণত হবে। বাহিনীর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাদের ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে। আমরা কি এদের গোপন দায়িত্বে মোতায়েন করতে পারি বা এদের কী কোনো গোপনীয় কাজ দেওয়া যেতে পারে?'

'চার বছর পর আমরা  তাদের বাহিনী থেকে বের করে দিলে, প্রতিরক্ষা সংস্থার প্রতি তাদের কী আদেও কোনো আনুগত্য তৈরী হবে যখন তাদের ফিরিয়ে নেওয়াই যাবে না । তাই আমি বলব নিরাপত্তা, মনোবল, প্রশিক্ষণ এবং এইচআর দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি অ-বাস্তবায়নযোগ্য কাজ। সাঁজোয়া, যান্ত্রিক, ইএমই, সিগন্যাল, পদাতিক, প্রকৌশলী এবং বিমান প্রতিরক্ষার মতো বিশেষায়িত ইউনিটগুলির জন্য, তাদের কোনো ধরণের বিশেষীকরণ পেতে সাত-আট বছরের প্রয়োজন।

' ইতিমধ্যেই যে যুবক-যুবতীরা কল লেটারের জন্য অপেক্ষা করছে, তাদের জন্য কোন পরিকল্পনাই  নেই সরকারের। প্রথমে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল যেখানে তারা ইতিমধ্যেই গত আড়াই বছর ধরে এই প্রক্রিয়ার অংশ। আজ, আপনি আমার কথা শুনে রাখুন। বলা হচ্ছে ৯০ দিনের মধ্যে প্রথম নিয়োগ হবে, কিন্তু আমি বলছি প্রথম ক্যাডেট নিয়োগ ১৮০ দিনের আগে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

'এটা বলিউডের কোনো সিনেমা তৈরি হচ্ছে না... একটি AK-47 বহন করে স্ক্রিন থেকে বোমা মেরে ফেলা হচ্ছে... ছিনতাই করা হচ্ছে। এটা ভালো নয়। খুব দুঃখের বিষয় আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে এটি তাদের (বাহিনী) উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। '

২. মেজর জেনারেল বিএস ধানোয়া (অব.): প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ

' অর্থনৈতিক খাতে ব্যবহৃত অর্থ কমানোর কথা মাথায় রেখে প্রকল্পটি কল্পনা করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। অগ্নিপথ ২১ শতকের সামরিক বাহিনীতে প্রয়োজনীয় বৃহত্তর সংস্কারের জন্য একটি পরিবর্তন আনয়নকারী অনুঘটক হতে পারে। যদি আমাদের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক নেতারা স্বল্পমেয়াদী লাভের বাইরে দেখতে সক্ষম হন , আমরা এখনও অনেক অর্জন করতে পারি।'

'গঠনমূলক সমালোচনা রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়। প্রত্যেক সংগঠন উত্থান-পতনেই বেঁচে থাকে। যারা ইউনিফর্মে কাজ করছেন তারা একটি ব্যতিক্রমী পরিবেশে তাদের যে সময় ব্যয় করছেন তাতে অনেকটা ভালোবাসা মিশে থাকে। যাদের জীবনের সঙ্গে দেশের স্বার্থ মিশে থাকে তাদের অবজ্ঞা করবেন না।

'২৩-২৪ বছর বয়সী বলেই একজন মানুষ কি ২৮-৩০বছর বয়সী একজনের চেয়ে সুস্থ এবং ফিট হবেন? একজন মানুষের জীবনে সবথেকে বেশি সুস্থ এবং ফিট থাকেন ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত, এমনকি অনেকসময় ৪০ এর কোঠার শুরুর দিক পর্যন্ত। সুতরাং বেশি সুস্থ তারুণ্যের যুক্তি ধোপে টেকে না। '

'একটি পাইপলাইন চার বছর বয়সের হোক বা ১৫ বছর, বার্ষিক ঢোকার এবং বের হওয়া কোয়ান্টাম, অবশেষে, একই। যে কোনও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ সুপারিশ করবেন যে পাইপলাইনটিকে সবথেকে বেশিদিন ব্যবহার করতে হলে,পাইপলাইনটিকে ধীরে চালান। প্রতি ৪ বছর অন্তর ব্যাহত হবে কেন ৭, ১০ বা ১২ এ নয় কেন ?

'আমি জানি না বর্তমান নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ নীতিতে ঠিক কী ভুল ছিল যে নতুনটি আনতে হলো? আমরা এখনও অবধি যারা চাকরি ছেড়েছেন তাদের দৃঢ়ভাবে দ্বিতীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে পারিনি।

'আসন্ন সশস্ত্র বাহিনীর এইচআর ইনটেক পরিবর্তনে যুবকদের দক্ষতা প্রদানের উপর খুব বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। যারা ইউনিফর্ম পরে একটু বেশি সময় ধরে থাকবে তারাই প্রকৃত দক্ষতা অর্জন করবে। একদিকে, প্রশিক্ষণটি শুধুমাত্র ছয় মাসের জন্য। একজন দেশপ্রেমিকের জায়গায় একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান দিন।

'পেশাদার সামরিক বাহিনী সাধারণত কর্মসংস্থান প্রকল্প চালায় না।'

৩. লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিনোদ ভাটিয়া (অব.):সাবেক ডিজিএমও মো

' এই প্রকল্পটি সশস্ত্র বাহিনীর জন্য মৃত্যুর সমান। অপরীক্ষিত, কোনো পাইলট প্রকল্প ছাড়াই -- সরাসরি বাস্তবায়ন। এটি সমাজের সামরিকীকরণের দিকে নিয়ে যাবে। এই প্রকল্পে প্রায় ৪০০০০(৭৫%) যুবক বছরে চাকরিক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যাত এবং হতাশ হবে, আধা-প্রশিক্ষিত প্রাক্তন অগ্নিবীর হয়ে বেঁচে থাকবে । একটি ভাল প্রকল্প নয় । এই প্রকল্পে কারও লাভ হবে না।

'ভারতীয় সৈনিকের জন্য সর্বনিম্ন খরচ হয় কিন্তু তারা সর্বাধিক প্রদান করে। আমরা যখন অর্থের দিকে তাকাই, তখন আমরা অর্থের মূল্যও দেখি। আমরা যেন এরম একটি অপরিবর্তনীয় এবং এড়ানো যায় না এমন অশান্তি না তৈরী করি, যাতে দুটি প্রতিপক্ষ আমাদের সমস্যায় যুক্ত থাকে। প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করুন , তারপর প্রকল্পের বাস্তবায়ন করুন। '

Read more Articles on
Share this article
click me!