'মিসাইল-ম্যান'-এর দূরদৃষ্টি কে পাথেয় করে রবিবাসরে পাড়ি জমাবে চন্দ্রযান ২

  • চন্দ্রযান ২ প্রকল্পের পিছনেও রয়েছে আব্দুল কালামের দূরদৃষ্টি
  • কালাম দাবি করেছিলেন চাঁদের মাটিতে পা রাখা হবে এক বৈপ্লবিক ঘটনা
  • বলেন, মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এটা নতুন দিগন্তের উন্মচোন করবে 
  • কালাম বিশ্বাস করতেন চাঁদের ভূগর্ভের হিলিয়াম দিয়ে জ্বালানী সঙ্কটের মোকাবিলা সম্ভব

debojyoti AN | Published : Jul 13, 2019 10:01 AM IST / Updated: Jul 14 2019, 09:05 AM IST

এ পি জে আব্দুল কালাম- ভারতের 'মিসাইল ম্যান'। শুধুই কি তাই? তিনি ছিলেন আর একটু বেশি কিছু। তিনিই প্রথম স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যে আমরাও পারি, পারি উড়ান জমাতে মহাশূন্যে। তার একের পর এক সফল মিসাইল গবেষণা প্রমাণ করে দিয়েছিল রকেট সায়েন্সে কোন ভাবেই কারওর থেকে পিছিয়ে নেই ভারত। সেই শুরু, তাঁর সাফল্যকে পাথেয় করেই একের পর এক সফল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে ইসরো- ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। শুধুমাত্রই কারিগরি ক্ষেত্রে দিশা দেখানোই নয়, রবিবার উৎক্ষেপিত হতে চলা চন্দ্রযান ২ প্রকল্পের পিছনেও রয়েছে আব্দুল কালামের দূরদৃষ্টি। 
প্রায় ষোল বছর আগে,  যখন চন্দ্র অভিযান শুধুই ভাবনা চিন্তার স্তরে ছিল বিজ্ঞানীদের, তখন 'অগ্নিপুরুষ' নামে খ্যাতি পাওয়া কালাম দাবি করেছিলেন ভারতের চাঁদের মাটিতে পা রাখা হবে এক বৈপ্লবিক ঘটনা। যা সারা দেশে তরঙ্গের সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে যুব-বিজ্ঞানী এবং শিশুদের মধ্যে পড়বে তার ব্যাপক প্রভাব। সেই তরঙ্গ আগামিদিনে মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের উন্মচোন করবে ভারতের সামনে।
পি এস এল ভি- সি ৫ প্রযুক্তির  উন্নতমানের রিসোর্সস্যাট-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ পরিদর্শনে ২০০৩ সালে ইসরোয়  এসে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞানী দের মধ্যে যেই উচ্চাকাঙ্খার জন্ম দিয়েছিলেন, তা আগামিদিনে রূপ নেয় চন্দ্র অভিযানের। 
বিশিষ্ট মহাকাশ বিজ্ঞানী এম আন্নাদুরাই একটি সেমিনারে জানিয়েছিলেন, ২০০৪ সালে যখন কালামের কাছে যাওয়া হয় একটি চন্দ্র অভিযানের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য, তখন তিনি বলেন যে তাদের উচিত চাঁদের মাটিতে কিভাবে পদার্পণ করা যায়, সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা। 
সেই সাক্ষাতের পরে আন্নাদুরাই এবং তার টিম যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, তারই বাস্তব ফলশ্রুতি আজকের চন্দ্রযান ১ এবং চন্দ্রযান ২। ২০১৫ সালের সেই সেমিনারে আন্নাদুরাই আরও জানান যে তারা যখন প্রথম কালাম কে জানান যে সব কিছু ঠিক থাকলে ভারত অতি দ্রুত চাঁদের মাটিতে পা রাখতে চলেছে, তা শুনে শিশুসুলভ সারল্যে উত্তেজিত হয়ে পরেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি! 
আব্দুল কালাম বিশ্বাস করতেন যে চাঁদের ভূগর্ভে যে বিপুল পরিমাণ জমা হিলিয়াম রয়েছে, তা দিয়ে আগামী দিনে জ্বালানী সঙ্কট মোকাবিলা করা সম্ভব। পরমাণবিক চুল্লি তে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপকরণ জমাট হিলিয়াম। পরমাণবিক শক্তিকেই আগামিদিনের  জ্বালানী বা ক্লিন ফুয়েল বলা হচ্ছে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ভবিষ্যতে চাঁদের মাটিতে গড়ে উঠবে উন্নতমানের শিল্পকেন্দ্র, যা  মঙ্গল গ্রহে বাসা বানানো মানুষকেও জোগাবে অফুরন্ত পরমাণবিক শক্তি।  
আর মাত্র কয়েকটি ঘণ্টা পরে মহাশূন্যের পথে পাড়ি জমাবে চন্দ্রযান ২। এই চন্দ্রযান ২-এর ভেতরে রয়েছে প্রজ্ঞান বলে ৬ চাকা বিশিষ্ট একটি গবেষণা যান। ১৪ দিন ধরে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকার মাটি পরীক্ষা করবে সেটি। ইসরো স্বপ্ন দেখছে চন্দ্রযান ২ এর সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে ২০২১-২২ সালের মধ্যে গগণায়ন প্রকল্পে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর। 
চারিদিকে এত বিপুল কর্মকাণ্ড। সেই মানুষটি যদি আজ বেঁচে থাকতেন, সবার অলক্ষে হয়ত ভিজে উঠত চোখের একটি কোণা। বা শিশু সুলভ সারল্যে লাফিয়ে উঠতেন তিনি- ঠিক সেই মুহূর্তে যখন চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে চন্দ্রযান ২!

Share this article
click me!