শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল স্নাতক স্তর পর্যন্ত
আরবি ভাষাকে কাজে লাগিয়েই প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছিল
বড় চাকরির মাধ্যমেই ছক কষা শুরু
সমাজের উঁচু তলায় সহজেই আনাগোনা ছিল স্বপ্না সুরেশের
যখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশে লকডাউন চলছে বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহিনী বিমান পরিষেবা তখন কার্গো বিমানেকেই বেছে নিয়েছিলেন সোনা পাচারের জন্য। আবর আমীরশাহীর কড়া নিরাপত্তা উপেক্ষা করে একলপ্তে ৩০ কিলোগ্রাম সোনা নিয়ে আসতে পেরেছিলেন ভারতে। কেলর সোনা পাচারকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত স্বপ্না সুরেশ কোনও সাধারণ নাম নয়। কেরলের সরকারি দফতরগুলিতে তার ছিল অবাধ বিচরণ। ঘনঘন আসা যাওয়া ছিল মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কার্যালয়তেও।
খাতায় কলমে স্বপ্ন সুরেশের জন্ম ১৯৮৪ সালের চৌঠা জুন। আবুধাবিতেই তাঁর জন্ম। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত আরব আমীরসাহীর বাসিন্দা। শুধুমাত্র গ্রাজুয়েট ডিগ্রিটিকে সম্বল করেই পথে নেমেছিলেন। সূত্রের খবর বেশ কয়েকটি বিশ্ব বিদ্যালয়ের জাল ডিগ্রি রয়েছে তার হাতে। যা দেখিয়ে স্বপ্ন অনায়াসেই জোগাড় করেছে বড় বড় চাকরি। সরকারি বেসরকারি মহলে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে স্বপ্না ওঠাবসা ছিল। বেশ কয়েকজন আমলার সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে অভিযোগ।
২০১৩ সাল থেকেই ভারতকেই কর্মক্ষেত্র হিসেবে নির্বাচন করে স্বপ্ন। দুবাই থেকে চলে আসে তিবুবন্তপুরমে। সেখানে এয়ার ইন্ডিয়ান স্যাটস-এর এইচআর এক্সিকিউটিভ হিবেসে যোগ দেয়। সেখানেও সংস্থার একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ও মহিলাকর্মীদের স্বাক্ষর জাল করে বিমান বন্দর কর্মীদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার পরিকল্পনা রূপায়ন করত স্বপ্ন। কিন্তু এক বিমানবন্দর কর্মীর বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগও দায়ের করেছিল। কিন্তু ওই কর্মী পুলিশের দ্বারস্থ হয়। তৈরি হয় তদন্তকমিটি। কিন্তু স্বপ্না নিজের প্রভাব খাটিয়ে সেইসময় জেলযাত্রা থেকে রেহাই পায়।
২০১৯ সালে আরব আমিরশাহীর কনস্যুলেট জেনারেলের অফিসে কাজ করতে শুরু করে স্বপ্না। আরবি ভাষায় সাবলীল হওয়ার জন্য খুব তাড়াতাড়ি প্রমোশন পেতে শুরু করে। এছাড়াও ইংরেজি, মালায়ালম ও কয়েকটি ভারতী ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে সুরেশ। কেরল সরকারের উদ্দেশ্য ছিল আরবে বসবাসকারী কেরলিয়ানদের সুবিধে করে দেওয়া । আর সেই কাজ রীতিমত দক্ষতার সঙ্গে পালন করছিল স্বপ্না। আর এই সময় থেকেই স্বপ্না সুরেশ নিজেকে কূটনৈতিক হিসেবেও পরিচয় দিয়ে কাজ হাসিল করত। রাজনৈতিক , আমালা ও সমাজের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠাবসা বাড়তে থাকে। দুইএকটি অনুষ্ঠানে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়েনের সঙ্গেও দেখা গিয়েছিলে স্বপ্না সুরেশকে। এরপরই নিজের প্রভাব খাটিয়ে স্বপ্না সুরেশ কাজ জোগাড় করে কেরলের তথ্য প্রযুক্তি ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের দফতরে। রীতিমত ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় আইএএল অফিসার ও আইটি সেক্রেটারি এম শিবশঙ্করের সঙ্গে। শিবশঙ্কর বিজয়নের ব্যক্তিগত সচিবও। কেরল মুখ্যমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছেন তিনি। তবে চোরাচালানের ঘটনা সামনে আসার পরই রাতারাতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় শিবশঙ্করকে।
দুবার বিয়ে করেছে স্বপ্না। কিন্তু খাতায় কলমে নিজেকে অবিবাহিত বলেই পরিচয় দিয়ে থাকে। তবে তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বাবা মা ও পরিবারের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সোনা পাচারে তার দোসর সারিথ কুমারের যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে তা নিয়ে কোনও রাখঢাঁক করেনি স্বপ্না। আরব আমিরশাহীর দূতাবাসেই বেশ কিছুদিন কাজ করেছিল স্বপ্না। সেখান থেকেই আলাপ সরিথের সাঙ্গে।
আবর আমিরশাহী থেকে কেরলে আসা ব্যবসায়ীদের স্বাগত জানাত স্বপ্না সুরেশ। যার ফলে সমারে উঁচু তলায় তার কদর ক্রমশই বাড়ছিল। স্বপ্না বেশ কয়েকটি ভ্রমণ সংস্থায়ও কাজ করেছিল। সবমিলিয়ে নিজের প্রভাব খাটিয়েও এই সময় প্রায় ৩০ কিলো সোনা আমদানি করেছিল। আর সেই রকমই প্রভাব খাটিয়ে লকডাউনের কেরল থেকে বেঙ্গালুরুতে চম্পট দিতে পেরেছিল। কারণ বর্তমানে কেরলে করোনাভাইরাসের সংক্রণ মোকাবিলায় যথেষ্ট কড়াভাবে লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ একটি দুধের প্যাকেট বা ওষুধ কিনতে গেলেও পুলিশের ছাড়পত্র প্রোয়োজন হয়। সাধারণ মানুষ রীতিমত ঘরবন্দি। সেখানে স্বপ্না সুরেশের মত কুখ্যাত অপরাধী কী করে পুলিশের চোখু ধুলো দিয়ে কেরল সীমান্ত অতিক্রম করল। বিরোধী কংগ্রেস আর বিজেপির অভিযোগ, পুলিশের ওপর মহলের সাহায্যেই কেরল ছেড়েছিল স্বপ্না। তবে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেনি কেরল সরকার। রবিবার বেঙ্গালুরু থেকে স্বপ্না ও তার সাথী সন্দীপ নাইয়ারকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ।